ফযীলতপূর্ণ আমলসমূহ (৫ম কিস্তি)
মুহাম্মাদ আবুল কালাম
ভূমিকা :
বিশ্বমুসলিমের বিজয়ের প্রতীক এবং কালজয়ী ইসলামের তাওহীদের জয়ধ্বনি হল আযান। যখন তেজদীপ্ত মুমিন হৃদয়ের কর্ণকুহরে আযানের ধ্বনি আছড়ে পড়ে, তখন সকল অলসতা, বিলাসিতা ও শয়তানী অপশক্তির বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে। সকল প্রকার বাতিল শক্তি আল্লাহর বলে বলীয়ান মুওয়াযিযনের আযানের ভয়ে ভীত-কম্পিত হয়ে যায়। কাফের, মুশরিকের হৃদয়তন্ত্রীতে আযান যেন শেল বিদ্ধ করে। ইসলামের এ অনন্য সৌন্দর্য আযানের বাণীতে মুগ্ধ হয়ে কবি কায়কোবাদের অমর কাব্য, ‘কে ওই শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর, আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী, কি মধুর আজানের ধ্বনি!...’
আযানের পরিচয় :
আরবি আযান শব্দের অর্থ হলো ‘আল-ই‘লাম’ বা জানিয়ে দেয়া, শুনিয়ে দেয়া, ঘোষণা, জারী করা ইত্যাদি। আযান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বা প্রতীক।
শরী‘আত নির্ধারিত কতকগুলো বাক্যের মাধ্যমে ছালাতের জন্য মানুষকে আহবান করাকে আযান বলে। আযান উচ্চারণের মাধ্যমে ছালাতে উপস্থিত হওয়ার ঘোষণাই নিকট ও দূরের মুমিন-মুসলমানদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়।
ইসলামী শরী‘আতে আযান ও মুওয়াযযিনের গুরুত্ব ও ফযীলত অপরিসীম। তারা যেমন দুনিয়াতে সম্মানিত হন তেমনি আখিরাত দিবসেও উক্ত মর্যাদায় সমাসীন হবেন।
আযানের প্রাথমিক ইতিহাস :
মক্কায় অবস্থানকালে মহানবী (ছাঃ) তথা মুসলিমগণ বিনা আযানে ছালাত পড়তেন। অতঃপর মদীনায় হিজরতের ১ম সনে (মতান্তরে ২য়) আযান ফরয হয়’।[1]
আবু উমায়ের ইবনু আনাস থেকে কোন একজন আনছার ছাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) এজন্য চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়েন যে, লোকদেরকে ছালাতের জন্য কিরূপে একত্রিত করা যায়। কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে, ছালাতের সময় হলে ঝান্ডা উড়িয়ে দেওয়া হোক। যখন লোকেরা তা দেখবে তখন একে অন্যকে ছালাতের জন্য ডেকে আনবে। কিন্তু তা নবী (ছাঃ)-এর মনঃপুত হয়নি। অতঃপর কেউ এরূপ প্রস্তাব করে যে, শিংগা ফুঁকা হোক। যিয়াদ বলেন, শিংগা ছিল ইহুদীদের ধর্মীয় প্রতীক। কাজেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা অপসন্দ করেন। রাবী বলেন, অতঃপর একজন ‘নাকুস’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। রাবী বলেন, উপাসনার সময় ঘণ্টাধ্বনি করা ছিল নাছারাদের রীতি। এজন্য নবী (ছাঃ) তা-ও অপসন্দ করেন। অতঃপর কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেদিনের বৈঠক শেষ হয় এবং সকলে নিজ নিজ আবাসে ফিরে যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাঃ) ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চিন্তিত থাকার কারণে ব্যথিত হৃদয়ে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তাঁকে স্বপ্নের মাধ্যমে আযানের নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন ভোরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি (ফেরেশতা) আমার নিকট এসে আমাকে আযান দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। রাবী বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ইতিপূর্বে ঠিক একই রকম স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি তা বিশ দিন পর্যন্ত প্রকাশ না করে গোপন রাখেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা নবী (ছাঃ)-এর খেদমতে প্রকাশ করেন।
তখন নবী (ছাঃ) তাকে (ওমরকে) বলেন, এ সম্পর্কে পূর্বে আমাকে জ্ঞাত করতে তোমায় কিসে বাঁধা দিয়েছিল? ওমর (রাঃ) লজ্জা বিনম্র কণ্ঠে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাঃ) এ ব্যাপারে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন, উঠ! এবং আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়েদ যেরূপে বলে তুমিও তদ্রুপ (উচ্চ কণ্ঠে) বল! এইরূপে বিলাল (রাঃ) ইসলামের সর্বপ্রথম আযানের ধ্বনি উচ্চারণ করেন। আবু বিশর বলেন, আবু উমায়ের আমাকে এরূপ বলেছেন যে, সম্ভবতঃ যদি এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাঃ) রোগগ্রস্ত না থাকতেন, তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকেই মুওয়াযযিন নিযুক্ত করতেন’।[2]
আযানের ফযীলত :
আল্লাহকে স্মরণের জন্য আযান দেওয়া হয়। এবিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ- ‘আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য (আযানের মাধ্যমে) আহবান করে থাক, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ ওরা একেবারেই নির্বোধ সম্প্রদায়’ (মায়েদাহ ৫/৫৮)।
পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমু‘আর ছালাত আদায়ের জন্য আযান দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ- ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমাদেরকে জুমু‘আর দিন ছালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ’(জুমু‘আ ৬২/৯)।
আযান দেওয়ার অপর নাম হ’ল মানুষকে আহবান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ- ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’(ফুছছিলাত ৪১/৩৩)।
মানুষ যদি আযানের ফযীলত জানত, তাহ’লে তারা আযানের জন্য লটারী করত। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا- ‘আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, লটারী মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহ’লে অবশ্যই তারা লটারী মাধ্যমে ফায়ছালা করত। যোহরের ছালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহ’লে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ‘এশা ও ফজরের ছালাত (জামা‘আতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহ’লে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপন্থিত হত’।[3]
মুওয়াযযিনের ফযীলত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مؤتمن الله أَرْشِدِ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ ‘ইমাম যিম্মাদার আর মুয়াযযিন আমানাতদার। তারপর তিনি (ছাঃ) এ দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি ইমামদেরকে হেদায়াত দান কর। আর মুয়ায্যিনদেরকে মাফ করে দাও’।[4]
ওছমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে আবেদন করলাম,يَا رَسُول الله اجْعَلنِي إِمَام قومِي فَقَالَ: أَنْتَ إِمَامُهُمْ وَاقْتَدِ بِأَضْعَفِهِمْ وَاتَّخِذْ مُؤَذِّنًا لَا يَأْخُذُ عَلَى أَذَانِهِ أَجْرًا- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে আমার জাতির ইমাম নিযুক্ত করে দিন। নবী (ছাঃ) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তাদের ইমাম। তবে ইমামতির সময় তাদের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখ। একজন মুওয়াযযিন নিযুক্ত করে নিও, যে আযান দেয়ার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে না’।[5]
মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘মুয়ায্যিনগণ ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে উঁচু গর্দানের অধিকারী হবে’।[6]
যে কোন বস্ত্ত মুয়ায্যিনের আওয়াজ শুনবে, সে তার সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান ইবন আবু শা‘ছা আনছারীকে বলেছেন, إِنِّي أَرَاكَ تُحِبُّ الغَنَمَ وَالبَادِيَةَ، فَإِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِكَ، أَوْ بَادِيَتِكَ، فَأَذَّنْتَ بِالصَّلاَةِ فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ، فَإِنَّهُ: لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ المُؤَذِّنِ، جِنٌّ وَلاَ إِنْسٌ وَلاَ شَيْءٌ، إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমি লক্ষ্য করছি, তুমি বকরী ও মরুভূমি ভালোবাসো, যখন তুমি তোমার বকরির পালে অথবা মরুভূমিতে থাক, তখন আযানের সময় উচ্চ স্বরে আযান দেবে। কারণ, মুওয়ায্যিনের শব্দ মানুষ বা যে কোনো বস্তুই শ্রবণ করুক, তারা ক্বিয়ামতের দিন মুয়ায্যিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে শুনেছি’।[7]
আযানের উত্তরদাতার ফযীলত :
আবু সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَلَا إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যতদূর পর্যন্ত মানুষ, জিন বা অন্য কিছু মুয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে’।[8]
অপর হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হ’ল জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সুফারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে’।[9]
আযানের পদ্ধতি :
আযানের পদ্ধতি বলতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে অনুসরণ করতে হবে। এজন্য আমাদেরকে আযানের বাক্যগুলো ধারাবাহিকভাবে বলতে হবে। আল্লা-হু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ....৪ বার। ২. আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ .... ২ বার (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) ৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ...২ বার (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)। ৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ (ছালাতের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ...২ বার ৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (কল্যাণের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ...২বার। ৬. আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ...২ বার। ৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ১ বার।[10] ফজরের আযানের সময় হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ -এর পরে اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’ (নিদ্রা হ’তে ছালাত উত্তম) ২ বার বলবে’।[11]
মসজিদ ছাড়া অন্য স্থানে আযান :
ভয়, শত্রুতা প্রভৃতির কারণে মসজিদে যেতে অপারগ হলে অথবা, মসজিদ বহু দূরে হলে এবং আযান শুনতে না পেলে, সফরে কোন নির্জন প্রান্তরে থাকলে, যে জায়গায় থাকবে সেই জায়গাতেই ছালাতের সময় হলে আযান-ইক্বামত দিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে। একা হলে আযান ওয়াজিব না হলেও সুন্নাত।
হাদীছে এসেছে, عَن مَالك بن الْحُوَيْرِث قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَابْنُ عَمٍّ لِي فَقَالَ: إِذَا سَافَرْتُمَا فأذنا وأقيما وليؤمكما أكبركما মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার চাচাতো ভাই নবী (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, ‘তোমরা সফরে গেলে আযান দিবে ও ইক্বামত দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে’।[12]
আযানের জওয়াব :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তদ্রুপ বল’...।[13] অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা অলা-কুবওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[14] অতএব আযান ও ইক্বামতে ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ বাদে বাকী বাক্যগুলির জওয়াবে মুওয়ায্যিন যেমন বলবে, তেমনই বলতে হবে। ইক্বামতের জবাব একইভাবে দিবে। কেননা আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’ বলা হয়েছে’।[15]
আযান শেষ হলে দরূদ পাঠের ফযীলত :
আযান শেষ রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করলে দো‘আ পড়লে ক্বিয়ামতের দিন পাঠক সুফারিশ লাভে ধন্য হবে। এবিষয়ে হাদীছে এসেছে, ‘আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে।[16] অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’।[17]
اَللَّهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ -
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’।
‘হে আল্লাহ! (তাওহীদের) এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের তুমি প্রভু। মুহাম্মাদ (ছাঃ) -কে তুমি দান কর ‘অয়াসীলা’ (নামক জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং পৌঁছে দাও তাঁকে (শাফা‘আতের) প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ’।[18] যেমন আল্লাহ বলেন, عَسَى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا ‘সত্বর তোমার প্রভু তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে’ (ইসরা ১৭/৭৯)।
মুয়াযযিনের আদব :
মুয়াযযিন পবিত্র অবস্থায় আযান দেবে, আযানের শব্দ ধীরে ধীরে বলবে, ইক্বামত দ্রুত বলবে, সব বাক্যের শেষে যযম বলবে, উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে আযান দেবে। কারণ বেলাল এভাবে আযান দিতেন। মুয়ায্যিন তার দুই কানে হাতের আঙ্গুল রাখবে, যেহেতু আবু যুহাইফার হাদীছে আছে, ‘আমি বেলালকে আযান দিতে দেখেছি...তার আঙ্গুলসমূহ ছিল কানের মধ্যে’। حيَّ على الصلاة বলার সময় ডানে এবং حيَّ على الفلاح ‘বলার সময় বামে চেহারা ঘুরাবে। কারণ আবু জুহাইফার হাদীছে আছে, তিনি বলেন, ‘আমি বেলালকে দেখেছি ‘আবতাহ’ নামক স্থানে গিয়ে আযান দেন, যখন حيَّ على الصلاة حيَّ على الفلاح তে পৌঁছেন, ডানে ও বামে গর্দান ঘুরান, কিন্তু নিজে ঘুরেন নি’।
উত্তম হচ্ছে ছালাতের প্রথম ওয়াক্তে আযান দেওয়া। কারণ, জাবের ইবন সামুরাহ (রাঃ) বলেন,كان بلال لا يؤخر الأذان عن الوقت، وربما أخَّر الإقامة شيئًا- ‘বেলাল আযান কখনো দেরিতে দিতেন না, তবে কখনো ইক্বামতে দেরি করতেন’। মুয়ায্যিনের উঁচু আওয়াজ সম্পন্ন হওয়া সুন্নাত। রাসূল (ছা.) বলেন,فقمْ مع بلالٍ فألقِ عليه ما رأيتَ فليؤذِّن به؛ فإنه أندى صوتًا منك ‘তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও, অতঃপর যা দেখেছ তা বেলালের নিকট বল, সে যেন তার মাধ্যমে আযান দেয়, কারণ সে তোমার চেয়ে উঁচু আওয়াজের অধিকারী’।[19]
আবু জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি বেলাল (রাঃ)-কে দেখেছি তিনি আযান দিচ্ছিলেন এবং (হাইয়া আলা বলার সময়) ঘুরছিলেন আর তিনি এদিকে এবং ওদিকে তাঁর মুখ ফিরাচ্ছিলেন। তাঁর দুই আঙ্গুল ছিল তাঁর কানে। তখন রাসূল (ছাঃ) একটি লাল তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। রাবী আওন বলেন, আমার মনে হয় আবু জুহায়ফা বলেছেন যে, তাঁবুটি ছিল চামড়ার। পরে বিলাল (রাঃ) একটি ছোট ছড়ি নিয়ে বের হলেন এবং এটিকে বাতাহায় গেড়ে দিলেন। এটি সামনে রেখে রাসূল (রাঃ) ছালাত আদায় করলেন। কুকুর ও গাধাগুলি তাঁর সামনে দিয়ে চলা ফেরা করছিল। তাঁর পরনে ছিল লাল রঙ্গের একটি হুল্লা। আমি যেন এখনও তাঁর পায়ের গোছায় উজ্জলতা দর্শন করছি। সুফিয়ান বলেন, এই হুল্লাটি ছিল লাল ডুরিদার।[20]
আযান মসজিদের ছাদে, মিনারে বা মসজিদের বাইরে উঁচু স্থান থেকে দেওয়াই সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ‘উম্মে ইবনু মাকতূম আযান না দেওয়া পর্যন্ত বেলাল রাতে আযান দিলে তোমরা খাবে ও পানাহার করবে’।[21]
ইবনুল মুনযির বলেন, যাদের নিকট হ’তে ইলম সংরক্ষণ করা হয় তারা এ বিষয়ে একমত যে, মুয়ায্যিনের দাঁড়িয়ে আযান দেওয়াই সুন্নত’।’[22]
অবশ্য কোন অসুবিধা হলে বসে আযান দেওয়া যায়। যেমন ছাহাবী আবু যায়েদ (রাঃ) কোন এক জিহাদে গিয়ে তাঁর পা ক্ষত হলে তিনি বসে আযান দিয়ে ছিলেন’।[23]
মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে’।[24]
সময় পার হলে আযান
ছালাতের সময় বাকী থাকলে এবং আযানের যথাসময় পার হয়ে গেলে খুব দেরীতে হলেও আযান দিয়েই ছালাত পড়তে হবে। অবশ্য গ্রামে বা শহরে অন্যান্য মসজিদে আযান হয়ে থাকলে যে মসজিদে আযান দিতে খুব দেরী হয়ে গেছে সে মসজিদে আযান না দিলেও চলবে। তবে সামান্য দেরী হলেও আযান দেওয়াই উত্তম।[25]
ফজরের পূর্বে আযান ও তার বিধান :
ফজরের পূর্বে প্রথম আযান দেওয়া বৈধ, যেন তাহাজ্জুদগুযাররা ছালাত শেষ করে, আর ঘুমন্তরা জেগে উঠে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। নবী (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন,لاَ يَمْنَعَنَّ أَحَدَكُمْ أَوْ أَحَدًا مِنْكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ مِنْ سَحُورِهِ فَإِنَّهُ يُؤَذِّنُ أَوْ يُنَادِي بِلَيْلٍ لِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ وَلِيُنَبِّهَ نَائِمَكُمْ وَلَيْسَ أَنْ يَقُولَ الْفَجْرُ أَوْ الصُّبْحُ وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ وَرَفَعَهَا إِلَى فَوْقُ وَطَأْطَأَ إِلَى أَسْفَلُ حَتَّى يَقُولَ هَكَذَا وَقَالَ زُهَيْرٌ بِسَبَّابَتَيْهِ إِحْدَاهُمَا فَوْقَ الْأُخْرَى ثُمَّ مَدَّهَا عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ- ‘বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী খাওয়া হ’তে বিরত না রাখে। কেননা সে রাত থাকতে আযান দেয়- যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের ছালাতে রত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাদেরকে জাগিয়ে দেয়। অতঃপর তিনি বললেন, ফজর বা ছুবহে ছাদিক বলা যায় না- তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, যতক্ষণ না এরূপ হয়ে যায়। বর্ণনাকারী যুহাইর (রহ.) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় একটি অপরটির উপর রাখার পর তাঁর ডানে ও বামে প্রসারিত করে দেখালেন’।[26]
আযানের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মুয়াযযিন আযান দেয়, তখন কেউ যেন ছালাত আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়’।[27] বাড়িতে থেকে মসজিদের উদ্দেশ্যে ছালাতে বের হয়ে রাসূল (ছাঃ) একটি দো‘আ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَفِىْ لِسَانِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِىْ نُوْرًا وَمِنْ أَمَامِى نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِىْ نُوْرًا وَمِنْ تَحْتِى نُوْرًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِىْ نُوْرًا- ‘হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে আলো (নূর) সৃষ্টি করে দাও, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার পিছন দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার সামনের দিকে আলো সৃৃষ্টি করে দাও, আমার উপর দিক থেকে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার নীচের দিক থেকেও আলো সৃষ্টি করে দাও। ‘হে আল্লাহ! আমাকে নূর বা আলো দান কর’।[28]
আযানে ঝড়-বৃষ্টির সময় করণীয় :
ঝড়-বৃষ্টি বা অতিরিক্ত ঠান্ডার সময় মসজিদে আসতে কষ্ট হলে মুয়ায্যিন আযানে নিম্নলিখিত শব্দ অতিরিক্ত বলবে। ‘হাইয়্যা আলাছ ছলাহ্’ ও ‘ফালাহ্’র পরিবর্তেصَلُّوْا فِيْ بُيُوْتِكُمْ (ছল্লূ ফী বুয়ূতিকুম)।[29] অন্যত্রে বলেন, অথবাالصَّلاَةُ فِي الرِّحَال (আছ ছলা-তু ফির্রিহাল)।[30]
আযান ও ইক্বামতের মাঝে দো‘আ :
আযান হওয়ার পর এবং ইক্বামত হওয়ার পূর্বে দো‘আ কবুল হয়ে থাকে। তাই এই সময় দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা উচিৎ।
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الْأَذَان وَالْإِقَامَة আযান ও ইক্বামত এর মধ্যবর্তী সময়ের দো‘আ আল্লাহ তা‘আলার দরবার হ’তে ফেরত দেয়া হয় না’।[31]
আযান ও ইক্বামতের মাঝে ছালাত :
অব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন,بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ- প্রত্যেক আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত আদায় করা যায়। প্রত্যেক আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত আদায় করা যায়। তৃতীয়বার একথা বলার পর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে’।[32]
আযানের মাধ্যমে শয়তানকে বিতাড়ন :
শয়তানকে বিতাড়নের অন্যতম একটি উপায় বা মাধ্যম হ’ল আযান দেওয়া। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। ছালাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে থাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ এমন অবচেতন হয় যে, আর বলতে পারে না কত রাক‘আত ছালাত আদায় করা হয়েছে’।[33]
উপসংহার :
আযান বিশ্ব মানবতাকে কল্যাণের পথে আহবান করে। যেখানে উভয় জগতের কামিয়াবী নিহিত রয়েছে। আযানের সুমধুর আওয়াজ মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় আল্লাহর বড়ত্ব, সম্মান ও মর্যাদার কথা। তিনিই চিরস্থায়ী, চিরঞ্জীব এবং সবার চেয়ে বড়। পৃথিবীতে যত পরাশক্তি আছে আল্লাহর সামনে একদম তুচ্ছ। আল্লাহ আমাদেরকে প্রতি কল্যাণকাজে অগ্রগামীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন!
যহুরুল ইসলাম
লেখক : ছাত্র, কুল্লিয়া ১ম বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী
[1]. ফাৎহুল বারী, ইবনু হাজার ২/৭৮ পৃ.।
[2]. আবু দাউদ হা/৪৯৮।
[3]. বুখারী হা/৬১৫; মিশকাত হা/৬২৮।
[4]. আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৩।
[5]. আবু দাউদ হা/৫৩১; নাসাঈ হা/৬৭২; মিশকাত হা/৬৬৮।
[6]. মুসলিম হা/১৪; ইবনে মাজাহ হা/৭২৫; মিশকাত হা/৬৫৪।
[7]. বুখারী হা/৬০৯; নাসাঈ হা/৬৪৪; মিশকাত হা/৬৫৬।
[8]. বুখারী হা/৩২৯৬; নাসাঈ হা/৬৪৪; মিশকাত হা/৬৫৬।
[9]. আহমাদ হা/৬৭২৫; মিশকাত হা/৬৫৭।
[10]. আবুদাঊদ হা/৪৯৯; মিশকাত হা/৬৫০।
[11]. আবু দাউদ হা/৫০০; ইবনে মাজাহ হা/৭০৭; মিশকাত হা/৬৪৫।
[12]. বুখারী, মিশকাত হা/৬৮২।
[13]. মুসলিম হা/১১; নাসাঈ হা/৬৭৪; মিশকাত হা/৬৫৭।
[14]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮।
[15]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬২।
[16]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭। দরূদ-এর জন্য ১৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
[17]. বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯।
[18]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭২।
[19]. আবু দাউদ হা/৪৯৯; মিশকাত হা/৬৪২।
[20]. তিরমিযী হা/১৯৭।
[21]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮০।
[22]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ১/২৪১ পৃ.।
[23]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ১/২২৫ পৃ.।
[24]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬১।
[25]. শায়খ বিন বায, রিসালাতুন ইলা মুওয়াযযিন ৬৭ পৃ.।
[26]. বুখারী হা/৬২১।
[27]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৭; মিশকাত হা/১০৭৪।
[28]. মুসলিম হা/৭৬৩।
[29]. বুখারী হা/৯০১; মুসলিম হা/২৬; আবুদাউদ হা/১০৬৬।
[30]. বুখারী হা/৬১৬; মিশকাত হা/৭৫১।
[31]. আবুদাউদ হা/৫২১; মিশকাত হা/৬৭১।
[32]. বুখারী হা/৬২৭; মিশকাত হা/৬৬২।
[33]. বুখারী হা/৬০৮; নাসাঈ হা/৬৭০; মিশকাত হা/৬৫৫।