মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৬ষ্ঠ কিস্তি)
আব্দুর রহীম
শাফা‘আত অর্থ কাউকে কিছু পাইয়ে দিতে অনুরোধ করা। দুনিয়াতে কিছু লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সুফারিশ প্রয়োজন হয়। এই সুফারিশ কখনো কাজে লাগে আবার কখনো প্রত্যাখ্যাত হয়। কিন্তু পরকালীন জীবনটা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা বস্ত্ত থাকবে যাদের অনুরোধে বহু মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। আবার কারো শাস্তি লাঘব করা হবে। আবার কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। এই সুফারিশ কিন্তু সবাই করার ক্ষমতা রাখবে না। আল্লাহ যাদের অনুমতি দিবেন কেবল তারাই আল্লাহর নিকট কারো জন্য সুফারিশ করতে পারবে (বাকারাহ ২/২৫৫)। এই সুফারিশ পেতে হলে সর্বাগ্রে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে হবে। কারণ আল্লাহর রহমত ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। এজন্য যে সকল ব্যক্তি ও বস্ত্ত পরকালীন ভয়াবহ মুহূর্তে আমাদের জন্য সুফারিশ করবে তাদের সম্পর্কে জানা আবশ্যক। পাশাপাশি যে সকল কারণে শাফা‘আত পাওয়া যাবে তার উপর যথাযথ আমল করতে হবে।
শাফা‘আতের পরিচয় : শাফা‘আত প্রধানত দুই প্রকার : শাফা‘আতে কুবরা বা বড় শাফা‘আত ও শাফা‘আতে ছুগরা বা ছোট শাফা‘আত।
শাফা‘আতে কুবরা বলতে হাশরের ময়দানে সমবেত লোকদের বিচারকার্য শুরু করার জন্য শাফা‘আত। যখন লোকেরা হাশরের ময়দানে সমবেত হবে এবং আমল অনুযায়ী নিজেদের ঘামে হাবুডুবু খাবে। কোন সমাধান পাবে না। তখন লোকেরা নবী-রাসূলগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রত্যেক নবী এবং রাসূল নিজেদের আমলের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করবেন। অবশেষে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট গিয়ে সমাধান খুঁজে পাবে। রাসূল (ছাঃ) মাকামে মাহমূদে সিজদায় পড়ে যাবেন এবং লোকদের বিচারকার্য শুরু করার জন্য শাফা‘আত করবেন। এটিই শাফা‘আতে কুবরা বা উয্মা নামে খ্যাত। যেমন হাদীছে এসেছে-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট কিছু গোশত আনা হ’ল। তার নিকট রানের গোশত পেশ করা হ’ল যা তার নিকট খুবই পসন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, ক্বিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা কি জানো? ক্বিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা‘আলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের দৃষ্টি সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কষ্ট ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে কী দুর্দশায় তোমরা আছ, দেখছ না? কী অবস্থায় তোমরা পেঁŠছেছ তা উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট তোমাদের জন্য সুফারিশ করবেন? তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, তোমরা আদমের কাছে যাও। সুতরাং তারা আদমের কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন; তারা আপনাকে সিজদা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট শাফা‘আত করুন। আপনি দেখছেন না, আমরা যে কী কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আঃ) উত্তরে বলবেন, إِنَّ رَبِّي غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ نَفْسِي نَفْسِي ‘আজ আমার পরওয়ারদিগার এত বেশী রাগ করেছেন, যা পূর্বে কখনো করেননি, আর পরেও কখনো এরূপ রাগ করবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের (ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। আর আমি সে নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, নাফসী, নাফসী (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান)। তোমরা অন্য কারোর নিকট গিয়ে চেষ্টা করো, তোমরা নূহের নিকট যাও।
তখন তারা নূহ (আঃ)-এর নিকট আসবে, বলবে, হে নূহ! আপনি পৃথিবীর প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে وَسَمَّاكَ اللهُ عَبْدًا شَكُورًا ‘চির কৃতজ্ঞ বান্দা’ বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি? আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পেঁŠছেছে? নূহ (আঃ) বলবেন, আজ আমার পরওয়ারদিগার এত রাগ করেছেন যে, এমন রাগ পূর্বেও কখনো করেননি আর পরেও কখনো করবেন না। আমাকে তিনি একটি দো‘আ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি। নাফসী, নাফসী (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান)। তোমরা ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট যাও।
তখন তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নবী, পৃথিবীবাসীদের মধ্য থেকে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পেঁŠছেছে? ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে বলবেন, আল্লাহ আজ এতই রাগ করে আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো করেননি আর পরেও কখনো করবেন না। তিনি তার কিছু অসত্য (বাহ্যতঃ) কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, নাফসী, নাফসী (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান)। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মূসার নিকট যাও।
তারা মূসা (আঃ)-এর নিকট আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনাকে তিনি তার রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পেঁŠছেছে? মূসা (আঃ) তাদের বলবেন, আজ আল্লাহ এতই রাগ করে আছেন যে, পূর্বে এমন রাগ কখনো করেননি, আর এমন রাগ পরেও কখনো করবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বেই এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। নাফসী, নাফসী (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান)। তোমরা ঈসা (আঃ)-এর নিকট যাও।
তারা ঈসা (আঃ) এর নিকট আসবে এবং বলবে, হে ঈসা। আপনি আল্লাহর রাসূল, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেয়া বাণী, যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে নিক্ষেপ করে দিয়েছিলেন, আপনি তার দেয়া আত্মা! সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পেঁŠছেছে? ঈসা (আঃ) তাদের বলবেন, আজ আল্লাহ তা‘আলা এতই রাগ করে আছেন যে, এরূপ রাগ না পূর্বে কখনো করেছেন আর না পরে কখনো করবেন, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বললেন, নাফসী, নাফসী (আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান)। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট যাও।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তখন তারা আমার নিকট আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসূল, শেষ নবী, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুফারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পেঁŠছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নীচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে খুলে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের শিক্ষা গ্রহণ করবেন, যা ইতোপূর্বে আর কাউকে খুলে দেননি।
এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুফারিশ করুন, আপনার সুফারিশ গ্রহণ করা হবে। অনন্তর আমি মাথা তুলব। বলব, হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মতী (আমার উম্মত, আমার উম্মত) (এদেরকে মুক্তি দান করুন) তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই তাদেরকে জান্নাতের দরজার ডান দিক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। তারা এছাড়াও অন্য দরজায় মানুষের সঙ্গে শরীক হবে। কসম ঐ সত্ত্বার যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয় জান্নাতের দু’চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের (বাহরাইনের একটি জনপদের) দূরত্বের মতো। অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বছরার দূরত্বের ন্যায়’।[1]
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে মাকামে মাহমূদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا ‘আর তুমি রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় কর। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন (ইসরা ১৭/৭৯)।
শাফা‘আতে ছুগরা :
শাফা‘আতে ছুগরা বলতে জান্নাত প্রাপ্তির জন্য, মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য বা শাস্তি লাঘবের জন্য যে সুফারিশ করা হবে সে সুফারিশকে শাফা‘আতে ছুগরা বলা হয়। এই শাফা‘আত যেমন স্বয়ং আল্লাহ, তার নবী-রাসূল, মুমিনগণ, শহীদগণ বা শিশুকালে মৃত বাচ্চারা করবে, তেমনি সৎ আমল, কুরআন ও ছিয়ামও শাফা‘আত করবে।
১. আল্লাহর শাফা‘আত : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার বিশেষ রহমতের মাধ্যমে বহু লোককে ক্ষমা করে দিবেন। সেটিই আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফা‘আত হিসাবে গণ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি বল, সকল প্রকার সুফারিশ কেবল আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তারই জন্য নভোমন্ডল ও ভূমলন্ডলের রাজত্ব। অতঃপর তাঁর নিকটেই তোমরা ফিরে যাবে (যুমার ৩৯/৪৪)। অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ তার নিকট কোন সুফারিশ করতে পারে না (বাক্বারাহ ২/২৫৫; আয়াতুল কুরসী)। তাহ’লে আউলিয়ারা সুফারিশ করবেই। এরূপ নিশ্চয়তা মুশরিকরা পেল কোথায়? রাসূল (ছাঃ) হাদীছে কুদসীর মধ্যে বলেন, شَفَعَتِ الْمَلَائِكَةُ، وَشَفَعَ النَّبِيُّونَ، وَشَفَعَ الْمُؤْمِنُونَ، وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ، فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ، فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَطُّ قَدْ عَادُوا حُمَمًا، فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهَرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ يُقَالُ لَهُ: نَهَرُ الْحَيَاةِ، فَيَخْرُجُونَ كَمَا تَخْرُجُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ، أَلَا تَرَوْنَهَا تَكُونُ إِلَى الْحَجَرِ، أَوْ إِلَى الشَّجَرِ، مَا يَكُونُ إِلَى الشَّمْسِ أُصَيْفِرُ وَأُخَيْضِرُ، وَمَا يَكُونُ مِنْهَا إِلَى الظِّلِّ يَكُونُ أَبْيَضَ؟ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، كَأَنَّكَ كُنْتَ تَرْعَى بِالْبَادِيَةِ، قَالَ: فَيَخْرُجُونَ كَاللُّؤْلُؤِ فِي رِقَابِهِمُ الْخَوَاتِمُ، يَعْرِفُهُمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ هَؤُلَاءِ عُتَقَاءُ اللهِ الَّذِينَ أَدْخَلَهُمُ اللهُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ عَمَلٍ عَمِلُوهُ، وَلَا خَيْرٍ قَدَّمُوهُ، ثُمَّ يَقُولُ: ادْخُلُوا الْجَنَّةَ فَمَا رَأَيْتُمُوهُ فَهُوَ لَكُمْ، فَيَقُولُونَ: رَبَّنَا، أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ، ‘আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ফেরেশতারা সুফারিশ করলেন, নবীগণও সুফারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুফারিশ করেছে, কেবলমাত্র আরহামুর রাহিমীন পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে এক মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি এবং আগুনে জ্বলে লাল হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতের প্রবেশ মুখের নাহরুল হায়াতে ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর স্রোতবাহিত পানি ভেজা উর্বর জমিতে সতেজ হয়ে উঠে। তিনি বললেন, তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়াল কোন শস্যদানা অঙ্কুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থেকে সেগুলো হলদে ও সবুজ রূপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়াযুক্ত স্থানে থাকে সেগুলো সাদা হয়ে যায়। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে পশু চরিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এরপর তারা নহর থেকে মুক্তার ন্যায় ঝকঝকে অবস্থায় ওঠে আসবে এবং তাদের গ্রীবাদেশে মোহরাঙ্কিত থাকবে যা দেখে জান্নাতীগণ তাদের চিনতে পারবেন। এরা হ’ল উতাকাউল্লাহ-আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তা‘আলা সৎ আমল ব্যতীতই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এরপর আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখছ সবকিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব! আপনি আমাদেরকে এত দিয়েছেন যা সৃষ্টজগতের কাউকে দেননি। [2]
২. নবী-রাসূলগণ : ক্বিয়ামতের দিন নবী-রাসূলগণ তাদের নিজ নিজ উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট সুফারিশ করবে। বিশেষত প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) তার উম্মতের জন্য সুফারিশ করবেন। রাসূল (ছাঃ) উম্মতের বিভিন্ন আমলের প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্য সুফারিশ করবেন। কখনো জান্নাত প্রাপ্তির জন্য, কখনো জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আবার কখনো জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَخْرُجُ قَوْمٌ مِنَ النَّارِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فَيَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، يُسَمَّوْنَ الْجَهَنَّمِيِّينَ ‘একদল মানুষকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের নাম রাখা হবে জাহানণামী’।[3]
পৃথিবীতে যত পাথর রয়েছে সে পরিমাণ লোকদের জন্য তিনি সুফারিশ করবেন। যে সকল আমলের জন্য রাসূল (ছাঃ) সুফারিশ করবেন তার কতিপয় আমল নিম্নে প্রদান করা হ’ল;
ক. আযানের দো‘আ পাঠ : যে ব্যক্তি আযান শেষে দো‘আ পাঠ করবে রাসূল (ছাঃ) তার জন্য শাফা‘আত করবেন। যেমন তিনি বলেন, مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِى وَعَدْتَهُ ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও এর উত্তর দেয়া ও দরূদ পড়ার পর) এ দো‘আ পড়ে, তার জন্য সুফারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দো‘আ হ’ল- আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াছ ছালা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে দান কর ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া‘দা তুমি তাঁকে দিয়েছ), ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ، فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ ‘তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াসীলা প্রার্থনা করবে। ওয়াসীলা হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন ওয়াসীলার দু’আ করবে, ক্বিয়ামতের (ক্বিয়ামতের) দিন তার জন্য সুফারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে’।[5]
খ. বিপদে ধৈর্যশীলদের জন্য : রাসূল (ছাঃ) বিপদে-আপদে ধৈর্যশীলদের জন্য শাফা‘আত করবেন। যেমন হাদীছে এসেছে তিনি বলেন, لَا يَصْبِرُ عَلَى لَأْوَاءِ الْمَدِينَةِ وَشِدَّتِهَا أَحَدٌ مِنْ أُمَّتِي، إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَوْ شَهِيدًا ‘আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি মদীনায় অভাব-অনটন ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করবে আমি অবশ্যই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সুফারিশকারী হব’।[6] তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এখানকার (দুনিয়াবী) কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য শাফা‘আত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে’।[7]
গ. একনিষ্ঠভাবে তাওহীদে বিশ্বাসী: যারা একনিষ্ঠভাবে তাওহীদে বিশ্বাস করবে, রাসূল (ছাঃ) তাদের মুক্তির জন্য শাফা‘আত করবেন। যেমন হাদীছের মধ্যে এসেছে-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنْ لاَ يَسْأَلَنِى عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ ، لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ –
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একদা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল; হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুফারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার পূর্বে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদীছের প্রতি তোমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠচিত্তে لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) বলে’।[8]
৩. ফেরেশতা : ফেরেশতারা সৎ মানুষদের জন্য আল্লাহর নিকট সুফারিশ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের আগে-পিছে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। আর তারা কেবল তার জন্যই সুফারিশ করে। যার প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট এবং তারা সর্বদা তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত’ (২৬, ২৭ ও ২৮ আয়াতে ফেরেশতাদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণিত হয়েছে। যাতে মানুষ তাদেরকে আল্লাহর অনুগত পৃথক সৃষ্টি হিসাবে গণ্য করে এবং কখনোই আল্লাহর কন্যা বা তাঁর সত্তার অংশ কিংবা বংশজাত বলে শয়তানী ধোঁকায় না পড়ে (আম্বিয়া ২১/২৮)। হাদীছে এসেছে-
আত্বা ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এবং আবু সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তাদের একজন শাফা‘আতের হাদীছ বর্ণনা করলেন, আর অন্যজন ছিলেন নিশ্চুপ। তিনি বলেন, অতঃপর ফেরেশতা এসে সুফারিশ করবেন এবং রাসূলগণ সুফারিশ করবেন, অতঃপর তিনি পুলছিরাতের উল্লেখ করে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُ، فَإِذَا فَرَغَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الْقَضَاءِ بَيْنَ خَلْقِهِ وَأَخْرَجَ مِنَ النَّارِ مَنْ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ أَمَرَ اللَّهُ الْمَلَائِكَةَ وَالرُّسُلَ أَنْ تَشْفَعَ، فَيُعْرَفُونَ بِعَلَامَاتِهِمْ إِنَّ النَّارَ تَأْكُلُ كُلَّ شَيْءٍ مِنَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا مَوْضِعَ السُّجُودِ، فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مِنْ مَاءِ الْجَنَّةِ فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ ‘যাদেরকে সুফারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে তাদের মাঝে আমিই হব প্রথম। এরপর যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির বিচারকার্য হতে অবসর গ্রহণ করবেন এবং জাহান্নাম হতে যাকে বের করতে ইচ্ছা করবেন তাকে বের করবেন। আল্লাহ তা‘আলা মালাক ও রাসূলগণকে আদেশ করবেন সুফারিশ করার জন্যে। তখন তারা তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনে নিবেন যে, আদম সন্তানের সিজদার স্থান ব্যতীত আর সব কিছুই আগুন জ্বালিয়ে ফেলেছে। অতঃপর তাদের ওপর জান্নাতের পানি ঢেলে দেয়া হবে। তখন তারা নবজীবন লাভ করবে যেরূপ নালার ধারে বীজ গজিয়ে উঠে।[9]
৪. শহীদ : আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শাহাদাত বরণকারীরা নিজ আত্মীয়-স্বজনের জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সুফারিশ করবে। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الفَزَعِ الأَكْبَرِ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الحُورِ العِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ ‘মহান আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি দান। তার রক্তের প্রথম ফোটার সাথে তার পাপ ক্ষমা করা হবে, জান্নাতে তার বাসস্থান দেখানো হবে, কবরের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে, ক্বিয়ামতের মহা ত্রাস থেকে নিরাপত্তা পাবে, ঈমানের অলঙ্কার পরিধান করবে, সুনয়না হুরদের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিজ পরিজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য তার সুফারিশ গ্রহণযোগ্য হবে’।[10]
৫. ছিদ্দীকীন : যারা চরম সত্যবাদী তারাও সুফারিশ করার সুযোগ পাবে। তারাও অসহায় মানুষের জন্য সুফারিশ করবে। যেমন হাদীছের মধ্যে এসেছে-
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُحْمَلُ النَّاس عَلَى الصِّرَاطِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَتَتَقَادَعُ بِهِمْ جَنَبَتَا الصِّرَاطِ تَقَادُعَ الْفَرَاشِ فِي النَّارِ، فَيُنْجِي اللَّهُ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ، ثُمَّ إِنَّهُ يُؤْذَنُ فِي الشَّفَاعَةِ لِلْمَلَائِكَةِ، وَالنَّبِيِّينَ، وَالشُّهَدَاءِ، وَالصِّدِّيقِينَ، فَيَشْفَعُونَ وَيُخْرِجُونَ، فَيَشْفَعُونَ وَيُخْرِجُونَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ-
আবু বাকরা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন লোকদেরকে পুলছিরাতের উপর বহন করা হবে। তারা পতঙ্গের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ন্যায় ছিরাতের দুই পাশে ভিড় জমাবে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার রহমতের মাধ্যমে হেফাযত করবেন। এরপর ফেরেশতা, নবীগণ, শহীদগণ ও ছিদ্দীকগণকে শাফা‘আতের অনুমতি দেওয়া হবে। তারা শাফা‘আত করবে এবং জাহান্নাম থেকে বের করতে থাকবে। অতঃপর যাদের অন্তরে যার্রা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকেও শাফা‘আতের মাধ্যমে তারা বের করবে।[11]
৬. মুমিনগণের পরস্পরের জন্য শাফা‘আত: ক্বিয়ামতের দিন মুমিনগণ তার পরিচিত সৎআমলকারী মুমিনদের জন্য সুফারিশ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ঈমানদারগণ এ দৃশ্যটি দেখবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে ছালাত আদায় করত, ছওম পালন কত, নেক কাজ করত? তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আল্লাহ তাদের মুখমন্ডল জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। এদের কেউ কেউ দু‘পা ও দু‘পায়ের নলার বেশি পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে থাকবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারে, তাদেরকে বের করবে। তারপর এরা আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ আবার তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা গিয়ে তাদেরকেই বের করে নিয়ে আসবে, যাদেরকে তারা চিনতে পারবে। তারপর আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না কর, তাহ’লে আল্লাহর এ বাণীটি পড়; আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না, আর কোন পুণ্য কাজ হলে তাকে তিনি দ্বিগুণ করেন (নিসা ৪/৪০)। তারপর নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুফারিশ করবে’।[12]
৭. শিশুকালে মৃত শিশু : নাবালক অবস্থায় মৃত শিশুরা তাদের ধৈর্যশীল পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর নিকট সুফারিশ করবে। আবু হাসসান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বললাম, আমার দু’টি ছেলে সন্তান মৃত্যুবরণ করেছে। আপনি কি রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হতে একটি হাদীছ উল্লেখ করবেন, যাতে আমাদের মৃতদের ক্ষেত্রে আপনি আমাদের মনে শান্তি দিতে পারেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, صِغَارُهُمْ دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ يَتَلَقَّى أَحَدُهُمْ أَبَاهُ - أَوْ قَالَ أَبَوَيْهِ -، فَيَأْخُذُ بِثَوْبِهِ - أَوْ قَالَ بِيَدِهِ -، كَمَا آخُذُ أَنَا بِصَنِفَةِ ثَوْبِكَ هَذَا، فَلَا يَتَنَاهَى - أَوْ قَالَ فَلَا يَنْتَهِي - حَتَّى يُدْخِلَهُ اللهُ وَأَبَاهُ الْجَنَّةَ ‘ তাদের জন্যে তার ছোট শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি তুল্য। তাদের মাঝে কেউ তার পিতার সাথে মিলিত হবে, অথবা তিনি বলেছেন বাবা মা দু’জনের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তার পরিধানের কাপড় কিংবা বলেছেন, হাত ধরবে, যেমনটি আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরছি। এরপর আর তারা তাদের ছাড়বে না, কিংবা রাবী বলেছেন, ধরে থাকা শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তার বাবা-মাকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন’।[13] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَمُوتُ لَهُمَا ثَلَاثَةُ أَطْفَالٍ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلَّا جِيءَ بِهِمْ حَتَّى يُوقَفُوا عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ، فَيُقَالُ لَهُمُ: ادْخُلُوا الْجَنَّةَ فَيَقُولُونَ: أَنَدْخُلُ وَلَمْ يَدْخُلْ أَبَوَانَا، فَقَالَ لَهُمْ: فَلَا أَدْرِي فِي الثَّانِيَةِ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ وَأَبَوَاكُمْ، قَالَ: فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: {فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ} [المدثر: 48] ، قَالَ: نَفَعَتِ الْآبَاءَ شَفَاعَةُ أَوْلَادِهِمْ ‘যে মুসলমানদ্বয়ের তিনজন শিশু সন্তান মারা গেল যারা এখনো সাবালক হয়নি। ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে জান্নাতের দরজার সামনে এনে দাঁড় করানো হবে। অতঃপর বলা হবে- তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন তারা বলবে,আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব আর আমাদের পিতামাতা জান্নাতে প্রবেশ করবে না? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর এবং তোমাদের পিতা-মাতাও। আর এটাই আল্লাহ তা‘আলার বাণীর বাস্তবায়ন- ফলে সুফারিশকারীদের সুফারিশ তাদের কোনো কাজে আসবে না (আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত) (আল-মুদ্দাছছির ৪৮)। তিনি বলেন, পিতারা উপকৃত হলেন তাদের সন্তানদের সুপারিশের মাধ্যমে’।[14]
৮. জানাযার ছালাত আদায়কারী : কোন মাইয়েতের জানাযায় যদি চল্লিশ বা ততোধিক লোক অংশগ্রহণ করে এবং তারা মাইয়েতের জন্য শাফা‘আত করে তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা তাদের শাফা‘আত কবুল করেন। ইবনু আববাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইবনু আববাস-এর এক ছেলে (মক্কার নিকটবর্তী) কুদায়দ অথবা উসফান নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসাবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু আববাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে ছালাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ، فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلًا، لَا يُشْرِكُونَ بِاللهِ شَيْئًا، إِلَّا شَفَّعَهُمُ اللهُ فِيهِ ‘কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার ছালাত আদায় করে তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুফারিশ কবুল করেন’।[15] অন্যত্র তিনি বলেন, مَا مِنْ مَيِّتٍ تُصَلِّي عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِائَةً، كُلُّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ، إِلَّا شُفِّعُوا فِيهِ ‘যে ব্যক্তির ছালাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, আর তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা‘আত (মাগফিরাত কামনা) করবে। তাহ’লে তার জন্য তাদের এ শাফা‘আত (কবুল) হয়ে যাবে’।[16]
৯. আল-কুরআন : আল-কুরআন তার পাঠকদের আল্লাহর নিকট শাফা‘আত করবে। তবে কেবল পাঠ করলেই সুফারিশ পাওয়া যাবে না। বরং তদানুযায়ী আমল করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْقُرْآنُ شَافِعٌ مُشَفَّعٌ، وَمَاحِلٌ مُصَدَّقٌ، فَمَنْ جَعَلَهُ إِمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَهُ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ ‘এই কুরআন (ক্বিয়ামতে) সুফারিশকারী; তার সুফারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কুরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পিছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে’।[17] তিনি আরো বলেন,اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ، ‘তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারণ ক্বিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে শাফা‘আতকারী হিসেবে আসবে’।[18] তিনি অন্যত্র বলেন, يَجِيءُ القُرْآنُ يَوْمَ القِيَامَةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ حَلِّهِ، فَيُلْبَسُ تَاجَ الكَرَامَةِ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا رَبِّ زِدْهُ، فَيُلْبَسُ حُلَّةَ الكَرَامَةِ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ، فَيَرْضَى عَنْهُ، فَيُقَالُ لَهُ: اقْرَأْ وَارْقَ، وَيُزَادُ بِكُلِّ آيَةٍ حَسَنَةً ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন উপস্থিত হয়ে বলবে, হে প্রভু! ওকে (কুরআন পাঠকারীকে) অলংকৃত করুন। সুতরাং ওকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। পুনরায় কুরআন বলবে, হে প্রভু! ওকে আরো অলংকার প্রদান করুন। সুতরাং ওকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। অতঃপর বলবে, হে প্রভু! আপনি ওর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। সুতরাং আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি পাঠ করতে থাকো আর মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক। আর প্রত্যেকটি আয়াতের
বিনিময়ে তার একটি করে ছওয়াব বৃদ্ধি করা হবে’।[19]
১০. সূরা মুলক : কুরআনের মধ্যে সূরা মুলক একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যার শাফা‘আত কবুল করা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ سُورَةً مِنَ القُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ ‘কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুফারিশ করেছে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। সে সূরাটি হচ্ছে, ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’।[20] অন্য বর্ণনায় রয়েছে-سُورَةٌ مِنَ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً، تَشْفَعُ لِصَاحِبِهَا حَتَّى يُغْفَرَ لَهُ: تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ ‘কুরআনে তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে। সূরাটি তার পাঠকের জন্য সুফারিশ করবে, শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সূরাটি হচ্ছে ‘তাবারকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক’।[21]
১১. ছিয়াম : ক্বিয়ামতের দিন ছিয়াম ব্যক্তির পক্ষে শাফা‘আত করবে। যেমন হাদীছের মধ্যে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَىْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِى فِيهِ.وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِى فِيهِ. قَالَ فَيُشَفَّعَانِ-
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন ছিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য সুফারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুফারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুফারিশ গ্রহণ কর। নবী (ছাঃ) বলেন, অতএব তাদের উভয়ের সুফারিশ গৃহীত হবে।[22]
উপসংহার : পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহর বিধান পালনের বিকল্প নেই। রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর বিধান পালনের মধ্যে যাবতীয় কল্যাণ ও সফলতা। পরকাল যেহেতু একটি ভয়াবহ জায়গা, যেখানে নবীর সুফারিশ ছাড়া কেবল ভালো কর্ম করে রক্ষা পাওয়া যাবে না। সেখানে সুফারিশ পাওয়ার জন্য যে সকল আমল রয়েছে সেগুলো পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে নবীর শাফা‘আত প্রাপ্তির তাওফীক দান করুন-আমীন!
আব্দুর রহীম
লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
[1]. বুখারী হা/৩৩৪০; মুসলিম হা/১৯৪; মিশকাত হা/৫৫৭৩।
[2]. মুসলিম হা/১৮৩; মিশকাত হা/৫৫৭৯।
[3]. বুখারী হা/৬৫৫১; আহমাদ হা/২৩৩৭১।
[4]. বুখারী হা/৬১৪; মিশকাত হা/৬৫৯।
[5]. মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/৬৫৭।
[6]. মুসলিম হা/১৩৭৮; মিশকাত হা/২৭৩০।
[7]. মুসলিম হা/১৩৭৪।
[8]. বুখারী হা/৯৯; মিশকাত হা/৫৫৭৪।
[9]. নাসাঈ হা/১১৪০, সনদ ছহীহ।
[10]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; মিশকাত হা/৩৮৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৩৭৫।
[11]. আহমাদ হা/২০৪৭৫৭; বাযযার হা/৩৬৭১।
[12]. বুখারী হা/৭৪৩৯; নাসাঈ হা/৫০১০।
[13]. মুসলিম হা/২৬৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৯৮।
[14]. মুসনাদে ইসহাক ইবনু রাহওয়াহ হা/২০৭৪; ছহীহাহ হা/৩৪১৬।
[15]. মুসলিম হা/৯৪৮; মিশকাত হা/১৬৬০।
[16]. মুসলিম হা/৯৪৭; মিশকাত হা/১৬৬১।
[17]. তাবারানী কাবীর হা/৮৬৫৫; ছহীহাহ হা/২০১৯।
[18]. মুসলিম হা/৮০৪; মিশকাত হা/২১২০।
[19]. তিরমিযী হা/২৯১৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৪২৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৩০।
[20]. আহমদ হা/৭৯৬২; তিরমিযী হা/২৮৯১; আবু দাঊদ হা/১৪০০; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৭৪।
[21].আবুদাউদ হা/১৪০০, সনদ হাসান।
[22]. হাকেম হা/২০৩৬; ছহীহুত তারগীব হা/৯৮৪, ১৪২৯।