বাংলার আকাশে পরাধীনতার কালো মেঘ (নাস্তিক্যবাদ ও হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গ)
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত 928 বার পঠিত
১৯২৪ সাল, ৩রা মার্চ। আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাফতে ওছমানিয়াহর পতন হয়। মুসলিম উম্মাহ হারায় তার শেষ আশ্রয়স্থল। খেলাফত হারিয়ে মুসলিম জাতি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করে। শতধা বিভক্ত অভিভাবকহীন নেতৃত্বশূন্য একটি জাতি হিসাবে খড়কুটোর ন্যায় স্রোতের তালে ভেসে চলে এদিক থেকে ওদিক। সুবিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে গড়ে ওঠে ছোট্ট ছোট্ট জাতি রাষ্ট্র। একেক ভূখন্ডের মুসলিমদের হাতে একেক রঙের পতাকা। মুসলিম পরিচয়ের বাইরে জাতীয়তাবাদী পরিচয়ে পরিচিত হবার মধ্যেই তারা শ্রেষ্ঠত্ব খুঁজতে থাকে। ওছমানী খিলাফতের উত্তরসূরী তুরস্ক পরিণত হয় উগ্র ইসলাম বিদ্বেষের উৎকৃষ্ট চারণভূমিতে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামী পোষাক-চিহ্ন ও সংস্কৃতির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেকুলারিজমের নামে মোস্তফা কামাল পাশা আতাতুর্কের হাতে তৈরী হয় ইসলাম বিদ্বেষী মতবাদ কামালিজম। অমুসলিম বিশ্ব কর্তৃক মুসলিম ভূখন্ডগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং লিবারেলিজমের মতো অস্পষ্ট ও ভিত্তিহীন কিছু বিজাতীয় মতবাদ। যাতে করে এসব মুসলিম ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের হাতে।
উম্মাহর এই বিপর্যয়ের পেছনে যেমন ছিল নিজেদের গাফলতি, তেমনি ছিল কুফফার (ইহুদি ও খৃষ্টান) বিশ্বের গভীর চক্রান্ত। প্রায় দেড় হাযার বছর ধরে বিশ্ব নেতৃত্বে থাকা মুসলিমদের তারা কোনোদিন-ই ভাল নযরে দেখেনি। যখনই সুযোগ পেয়েছে মুসলিমদের উপর চড়াও হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা নানান চক্রান্তে খেলাফতকে দুর্বল করতে থাকে এবং অবশেষে ১৯২৪ সালে খেলাফতের কফিনে তারা শেষ পেরেক ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়। বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে প্রথমে যতটুকু পারে তারা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়, এরপর হামলে পড়ে মুসলিমদের উপর। নানা অজুহাতে তারা মেতে ওঠে মুসলিমদের রক্তের হোলিখেলায়। যার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, يُوشِكُ الْأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَتُ إِلَى قَصْعَتِهَا، فَقَالَ قَائِلٌ: وَمِنْ قِلَّتٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ، وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ، وَلَيَنْزَعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَتَ مِنْكُمْ، وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهْنَ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الْوَهْنُ؟ قَالَ: حُبُّ الدُّنْيَا، وَكَرَاهِيَتُ الْمَوْت۔ ‘খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতীয়রা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে। এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহন’ ভরে দিবেন। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ওয়াহন’ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপসন্দ করা’।[1]
বিগত প্রায় এক শতাব্দী যাবত পুরো মুসলিম উম্মাহ যে সংকটকাল অতিক্রম করছে, ইতিপূর্বে ক্রুসেড ও তাতার আক্রমণ ব্যতীত এই উম্মাহ এমন নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। কি প্রাচ্য, কি পাশ্চাত্য সর্বত্রই মুসলিমের রক্তে সিক্ত হচ্ছে আল্লাহর যমীন। পশুর রক্তের চেয়েও যেন মুসলিমের রক্ত এখন সস্তা। অত্র প্রবন্ধে মুসলিমদের উপর কাফিরদের চালানো আগ্রাসনের সংক্ষিপ্ত কিছু বিবরণ তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
ফিলিস্তীনে মুসলিম গণহত্যা :
বিংশ শতাব্দীর শুরু। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, ইহুদী-খৃষ্টানদের চক্রান্ত, শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইউরোপের কার্যক্রম ও প্রশাসনিক দূর্নীতি সহ নানান কারণে এক সময়ের বিপুল ক্ষমতাধর ওছমানী খেলাফত শক্তি হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ক্ষমতার মসনদে তখন সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামীদ। ইহুদীরা সুলতানের কাছে আসে জেরুজালেমে এক খন্ড ভূমির জন্য। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রস্তাব দেয় তারা। সুলতান তাদের প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, ‘এর মালিকানা আমার নয় বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর। যদি কেউ এই ভূমি দখল করতে চায়, তবে তা করতে হবে আমাদের লাশের উপর দিয়ে’। ইহুদীরা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। তবে স্থানীয় আরবদের কাছ থেকে তারা জেরুজালেমে ব্যাপক পরিসরে জমি ক্রয় করতে থাকে এবং একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ব্রিটিশদের সাথে গোপনে সমঝোতায় আসে। এদিকে ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয়তাবাদের নেশায় বুঁদ হয়ে আরবদের এক অংশ ওছমানী সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করতে ব্রিটিশদের সাহায্য করে। প্রচেষ্টা সফল হয় এবং জেরুজালেম ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর আরবদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ‘বেলফোর ঘোষণা’র মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয় ব্রিটিশরা। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত জেরুজালেমে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে হিটলারের হাতে Holocaust শুরু হলে হাযার হাযার ইহুদী জেরুজালেমে চলে আসে। এরপর ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ব্রিটিশরা ফিলিস্তীন অঞ্চল ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে জেরুজালেম ত্যাগ করে। সেই দিনই তেলআবিব মিউজিয়ামে ‘জ্যুইশ পিপলস কাউন্সিল’ জড়ো হয় এবং ইজরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা করে। ইজরাইল রাষ্ট্র ঘোষণার পর মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ইজরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়। কিন্তু আরব রাষ্ট্রগুলো এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মোট চার বার আরব-ইজরাইল যুদ্ধ বাঁধে। আরবরা যুদ্ধে পরাজিত হয় ও কিছু আরব রাষ্ট্র ইজরাইলের সাথে সমঝোতা করে নেয় এবং বাকি রাষ্ট্রগুলোর কাছেও ফিলিস্তীন প্রশ্ন ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হতে থাকে। প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধেই আরব নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এমনকি ফিলিস্তীনীরাও বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতে থাকে, ‘আরব ভাইয়েরা কি আসলেই আমাদের উদ্ধার করতে এসেছে? [2]
১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তীনে শুরু হয় ভূমি দখল, নির্যাতন-নিপীড়ন ও উচ্ছেদের পালা। যেখানে জেরুজালেমে মোট জনসংখ্যার ৯৩ শতাংশই ছিল আরব, সেখানে তাদেরকেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং এখনো পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর সাথে গাজায় থেমে থেমে চলা বোমা হামলা এবং গ্রামে গ্রামে সামরিক অভিযানের ফলে হাযার হাযার ফিলিস্তীনী নিহত হয়েছে ও হচ্ছে। অগণিত সংখ্যক ফিলিস্তীনীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করছে ইজরাইল সরকার। লক্ষাধিক ফিলিস্তীনী উদ্বাস্তু হয়ে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোতে অবস্থান করছে।
১৯৫১ সালের ১২ জানুয়ারী জাতিসংঘ কর্তৃক Genocide এর যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে, তা হল : ‘‘In the present Convention, genocide means any of the following acts committed with intent to destroy, in whole or in part, a national, ethnical, racial or religious group, as such: (a) Killing members of the group; (b) Causing serious bodily or mental harm to members of the group; (c) Deliberately inflicting on the group conditions of life calculated to bring about its physical destruction in whole or in part; (d) Imposing measures intended to prevent births within the group; (e) Forcibly transferring children of the group to another group.’’ ‘জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ফিলিস্তীনে ইসরাইলী আগ্রাসন ও দখলদারী যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঠান্ডা মাথায় করা গণহত্যা, তা কে না জানে? তবুও মানবাধিকারের ধ্বজাধারী আমেরিকা ইজরাইলকে নিরঙ্কুশভাবে আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর ফিলিস্তীনীদের সাথে হওয়া এই অন্যায়কে বিশ্ব বিবেক নিরবে দেখে যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে মুসলিম গণহত্যা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বমঞ্চে আমেরিকা সুপার পাওয়ার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে আমেরিকা কেন্দ্রিক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার (New World Order) উত্থান হয় এবং আফগানিস্তানে আরব-আফগান মুজাহিদদের হাতে পুঁজিবাদী আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হলে (গত শতকের নববইয়ের দশকে) পশ্চিমা পন্ডিত হান্টিংটন দাঁড় করান ‘সভ্যতার সংঘাত তত্ত্ব’। তিনি তার বয়ানে পশ্চিম ও ইসলামকে পরস্পরের প্রধান শত্রু হিসাবে বিবৃত করেন।
অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে দেশকে পুনর্গঠনে ব্যস্ত ছিল আফগানরা। তালিবান সরকারের হাত ধরে তারা আফগানিস্তানকে শরী‘আহ শাসনের আদলে ঢেলে সাজায়। এরই মধ্যে ৯/১১ এর হামলা মঞ্চায়িত হয়। এই হামলা কাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, সে ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া আজও সম্ভব হয় নি। অথচ হামলার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক বিবৃতিতে আমেরিকা দাবী করে এর সাথে ওসামা বিন লাদেন জড়িত। যেন আগে থেকেই ঠিক করে রাখা বয়ান তোতাপাখির মতো মুখস্ত উগরে দেওয়া হয়।
বিন লাদেনের উপর অভিযোগ উঠলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে বিন লাদেনের জড়িত থাকার প্রমাণ চাওয়া হয় আমেরিকার কাছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ বলেন, সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো কথা বলতে তিনি রাযী নন। প্রায় এক মাসের মাথায় মিস্টার বুশ ক্রুসেডের ঘোষণা দেন। চিন্তা করুন! রেনেসাঁ ও এনলাইটেনমেন্টের সন্তানরা একুশ শতকে এসে সবচেয়ে আধুনিক রাষ্ট্রে বসে মধ্যযুগের ন্যায় ক্রুসেডের ডাক দেয় এবং আরেক ক্রুসেডার জোট NATO কে সাথে নিয়ে হামলে পড়ে আফগানিস্তানের উপর। War on Terror এর নামে আফগানিস্তানে ফেলা হয় টনের পর টন বোমা। গোটা দেশকে বিধ্বস্ত করতে সব প্রচেষ্টা চালানো হয়। বিয়ে বাড়ি, জানাযার ছালাত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, আশ্রয়স্থল, লোকালয়, বাজার, রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো কিছুই বাদ যায় না তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্ত্ত থেকে। দুই দশক ধরে বোম্বিং, ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, রাতে অতর্কিত হামলা, গুচ্ছ বোমা নিক্ষেপ, সামরিক অভিযান সহ সম্ভবপর সব দিক দিয়ে তারা আফগানে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখে এবং অবশেষে ২০২১ সালে তারা আফগানিস্তান থেকে লজ্জাজনকভাবে পলায়ন করে।
AP এর তথ্য অনুযায়ী, ‘২০০১ সাল থেকে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাযার মানুষ আফগানিস্তানের যুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২ লাখ ৭০ হাযার মানুষ বিদেশে পালিয়েছে। ৪০ লাখ মানুষ বাস্ত্তহারা হয়েছে।[3]
Costs of War Project এর মতে, আফগান যুদ্ধে গত দুই দশকে ১ লাখ ৭৬ হাযার মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য আফগান শিশু বিকলাঙ্গ হয়েছে, অসংখ্য নারী হারিয়েছে তার সম্ভ্রম। শুধু আফগানিস্তান নয়, পাশের দেশ পাকিস্তানেও আমেরিকা বহু বার ড্রোন হামলার মাধ্যমে বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছে। ইউকিপিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানে আমেরিকা কর্তৃক মোট ৪৩০টি ড্রোন হামলা করা হয়েছে এবং এসব হামলায় প্রায় ১ হাযার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর হিসাব আরও অনেক বেশী।
ইরাকে মুসলিম গণহত্যা :
War on Terror এর জের ধরে Weapons of mass destruction এর নতুন গল্প তৈরি করে আমেরিকা। পূর্বের গল্পেরই পুনরাবৃত্তি। মূলত আমেরিকা ইরাককে নিজের জন্য হুমকি হিসাবে দেখছিল। তাই ইরাকের উপর ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত করা’র অভিযোগ তুলে ইরাক আক্রমণের প্রস্তুতি নেয় আমেরিকা। আমেরিকা এই অভিযানের নাম দেয় ‘Operation Iraqi Freedom’। অথচ জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শক দল ইরাক ঘুরে এসে জানায় যে, ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অস্তিত্ব নেই। এমনকি মার্কিন ইন্টেলিজেন্স পর্যন্ত তাদের অনুসন্ধানে সর্বোচ্চ যা পায়, তা তারা প্রতিবেদনে এই বলে উল্লেখ করে যে, ‘‘Our knowledge of the Iraqi (nuclear) weapons program is based largely—perhaps 90%—on analysis of imprecise intelligence.’’[4] কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী রামসফিল্ড তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তিনি বলেন, Absence of evidence is not evidence of absence. ‘প্রমাণের অনুপস্থিতি, অনুপস্থিতির প্রমাণ নিরূপণ করে না’। অথচ ইরাক যুদ্ধের ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব Kofi Annan এর বক্তব্য ছিল, ‘‘I have indicated it was not in conformity with the UN charter. From our point of view and from the charter point of view it was illegal.[5]
কিন্তু ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ রাতে আমেরিকা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরাক আক্রমণ করে বসে। রাজধানী বাগদাদের ওপর প্রবল বোমা বর্ষনের মধ্য দিয়ে তারা তাদের কথিত 'ইরাক মুক্ত' করার অভিযানে নামে। ইরাকের উপর চালানো হয় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যাগুলোর একটা। যুদ্ধের প্রথম পাঁচ সপ্তাহে ২৯ হাজার বোমা ও মিসাইল ফেলা হয় ইরাকের মাটিতে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভারী কামানের গোলা ব্যবহার করা হয় ইরাকের মাটিতেই। শত শত টন ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে ইরাককে দূষিত করে ফেলা হয়। ইরাক আক্রমণের পর পরই ইরাকি সামরিক বাহিনী পরাজিত হয়। সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০০৬ সালে তার মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করা হয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা এমন এক নেতার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পেরে আমেরিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
ইরাক যুদ্ধে নিহতদের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। একেক সূত্রের তথ্য একেক রকম। বৈজ্ঞানিক উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতিতে জানা যায়, প্রথম তিন বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা গিয়ে ঠেকে ১০ লাখে। আইএস দমনের নামে শুধু মসুলেই ৪০ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। ইরাক যুদ্ধে ২০ লাখ ইরাকী বিকলাঙ্গ হয় এবং আরো লক্ষ লক্ষ ইরাকী হয়ে পড়ে গৃহহীন ও উদ্বাস্তু। ৫০ লক্ষ শিশু হারায় তার পিতা-মাতাকে এবং স্বামী হারিয়ে বিধবা হয় ১০ লক্ষ নারী।[6]
অথচ ২০১১ সালে কলিন পাওয়েল (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) স্বীকার করে, ইরাকে আগ্রাসন চালানো ছিল একটি ভুল। ইরাকের ব্যাপারে যে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল তা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাবেক মার্কিন উপপ্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটও স্বীকার করে ইরাক যুদ্ধ ছিল অবৈধ এবং ২০১৫ সালে টনি ব্লেয়ারও এই পাপের কথা স্বীকার করে। চিন্তা করুন! একটি মিথ্যার উপর ভর করে একটি জাতির উপর চালানো হয় নির্মমতম এক হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস করে দেওয়া হয় একটি দেশের অবকাঠামো।
ভারতে মুসলিম গণহত্যা :
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত স্বাধীন হয়। উপমহাদেশের সিংহভাগ অঞ্চল এখন ভারত রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যেই রয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে ভারত একটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত। সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস সেকুলারিজম এবং অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ালেও জন্মলগ্ন থেকে তারা প্রধানত হিন্দু স্বার্থকেই প্রাধান্য দিত এবং প্রয়োজনে মুসলিমদেরকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের বলি বানাতে বিন্দু মাত্র কসুর করত না। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ধ্বংস এবং তৎপরবর্তী ১০ হাযার মুসলিমের জীবন নাশ যার সুস্পষ্ট প্রমাণ। হাল আমলে ভারতে হিন্দুত্ববাদের যে পানি টগবগ করছে, তা মূলত উষ্ণ উষ্ণ গরম করেছিল কংগ্রেসীরাই।
তবে কংগ্রেস আমলে মুসলিম নির্যাতন রয়ে সয়ে, লুকিয়ে চুপিয়ে হলেও উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ক্ষমতাসীন হবার পর প্রকাশ্যে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বজরং, শিবসেনা, বিশ্বহিন্দু পরিষদ ও RSS এর মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় শক্তিশালী হচ্ছে। স্কুলে স্কুলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরী করে RSS উগ্র হিন্দুদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মিথ্যা লাভ জিহাদের অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যা করছে মুসলিম যুবকদের। যেখানে সেখানে মুসলিমদের জোর করে দেওয়ানো হচ্ছে ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান। তাগুত রামের নামে শ্লোগান দিতে অস্বীকৃতি জানালে করা হচ্ছে মারধর। মূলত ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতার কেন্দ্রে গেলে ভারতের হিন্দুত্ববাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ তুঙ্গে উঠে এবং এখনো পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশে গো-মাতা রক্ষার নামে চলছে উগ্র ইসলাম বিদ্বেষের প্রচার। গরুর মাংস পরিবহণের জন্য মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করছে হিন্দুত্ববাদীরা। এমনকি শুধু সন্দেহ হলেই হামলা করা হচ্ছে মুসলিমদের উপর। India Spend এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতে গরু সংক্রান্ত সহিংসতায় আক্রান্তদের ৮৪% ছিল মুসলমান এবং ২০১৪ এর পরে মোদি ক্ষমতায় আসার পর এই ধরনের হামলার শিকার হয় ৯৭% মুসলমান।[7]
এছাড়াও সময়ে সময়ে চলে প্রত্যক্ষ মুসলিম নিধন। ১৯৮৩ এর নেলি ম্যাসাকার, ১৯৬৯ এর গুজরাট দাঙ্গা, ১৯৯২ এর বাবরি মসজিদ ধ্বংস পরবর্তী দাঙ্গা, ২০০২ এর নৃশংস গুজরাট দাঙ্গা, ২০২০ এর দিল্লি দাঙ্গা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫০ সাল থেকে শুরু হওয়ার পর ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলীতে প্রায় দশ হাযার মুসলিম নিহত হয়েছে। তবে মুসলিমদের উপর হওয়া এসব পাইকারী হত্যাকে কৌশলে বা অতি চতুরতার সাথে দাঙ্গা (Riot) হিসাবে উল্লেখ করা হলেও আদতে এগুলো দাঙ্গা নয়, বরং গণহত্যা (Genocide) বা পদ্ধতিগতভাবে একটি জাতিকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা (Ethnic cleansing)। খোদ উইকিপিডিয়ার রিপোর্ট বলছে, ‘হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানদের উপর হানাদার হামলার আকারে প্রায়শই সহিংসতা সংঘটিত হয়। এই আক্রমণগুলিকে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়’। তাহলে আদতে কি এগুলো কোনো দাঙ্গা? বরং মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ সহিংসতা।
ভারতে উল্লেখযোগ্য কিছু দাঙ্গা :
নেলি ম্যাসাকার : ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী ভারতের আসাম রাজ্যের নওগাঁও যেলার ১৪টি গ্রামে মুসলিমদের উপর চালানো হয় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ৬ ঘন্টা ব্যাপী মুসলিমদের উপর চলে তান্ডব। মুসলিমদের বহিরাগত বলে অভিযোগ উঠিয়ে এই গণহত্যা চালানো হয়। সরকারী হিসাব মতে, এই নির্বিচার নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয় চৌদ্দটি গ্রামের ২,১৯১ জন মুসলিম। বেসরকারী হিসাব মতে, নিহতের সংখ্যা ১০ হাযারেরও বেশী।[8]
গুজরাট দাঙ্গা : ২০০২ সালে গুজরাটে চালানো হয় ভারতের ইতিহাসের এক ভয়াবহতম মুসলিম গণহত্যা, যা পূর্বের সব নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে যায়। ২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরায় সবরমতি এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দগ্ধ হয়ে মারা যায় ৫৮ জন করসেবক। এরই জের ধরে প্রায় তিন মাস ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলে সংঘবদ্ধ হামলা। শিশু-নারী-বৃদ্ধ কেউ সেদিন রেহাই পায় নি হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে। মুসলিম নারীদের গণধর্ষণ করে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। হত্যার পর করা হয় অঙ্গহানি। গর্ভবতী মুসলিম মায়ের পেট চিরে নয় মাসের ভ্রুণকে বের করে আগুনে পুড়িয়ে উল্লাস করেছিল তারা। গুজরাটে নৃশংসতার এমন নযীর তৈরী হয় যার আখ্যান লিখে শেষ করা যাবে না। গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার পেছনে ছিল প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। চক্রান্ত করে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয় এই হত্যাযজ্ঞ। এরপরই (গুজরাট দাঙ্গাকে পুঁজি করে) ভারতের রাজনীতিতে উত্থান হয় মোদির। সাংবাদিক রানা আইয়ুব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুজরাট ট্রাজেডির পেছনের রহস্য খুঁজে বের করেছেন। তার লিখিত ‘Gujarat Files : Anatomy of a Cover Up’ বইয়ে তিনি তার অনুসন্ধানী রিপোর্ট পেশ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে গুজরাট সরকার, প্রশাসন ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্মতিতে এ গণহত্যা চালানো হয়েছে।
দিল্লী দাঙ্গা : সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী দিল্লীতে শুরু হয় একের পর এক সহিংসতা। যার ফলে ৫৩ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনেরও বেশী হয়েছিল গুরুতর আহত। বহু মানুষ জীবনের ভয়ে নিজের ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে রাখা হয়েছিল হিন্দু বাড়িঘরগুলোতে, যাতে মুসলিমদের বাড়িঘর সহজে চিহ্নিত করা যায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট হল, এই সহিংসতায় সেখানকার পুলিশও শামিল ছিল।[9]
এছাড়াও গত বছর ভারতের হরিদ্বারে হিন্দু সাধুদের একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে প্রকাশ্যে মুসলিম নিধন ও গণহত্যার ডাক দেওয়া হয়। মুসলিমদের হত্যার জন্য হিন্দুদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আহবান করা হয় সেই সভা থেকে।এই ঘটনায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলে দেশের প্রধান বিচারপতিকে ৭৬ জন সিনিয়র আইনজীবী খোলা চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, ‘এই গণহত্যার আহবানের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ খুব যরূরী’। কিন্তু পরে এ নিয়ে প্রশাসন দায়সারা ভাবে দু’একটি মামলা ছাড়া কিছুই করেনি। অন্যদিকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্থানগুলো থেকে প্রকাশ্যে প্রচন্ড আক্রমণাত্মক ভাষায় ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সর্বদাই ভারত থেকে মুসলিমদের নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্য বক্তব্যেই বলে থাকে। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত চিন্তক ও পন্ডিত অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি বলেছেন, ‘ভারতে ইসলাম ভীতি সবচেয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। প্রায় ২৫ কোটি মুসলমানকে নির্যাতিত সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে ভারত’।[10]
ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আরেক দুঃখগাথা অঞ্চল কাশ্মীর। যার রূপের মাধুরীতে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর বিস্মিত স্বরে বলেছিলেন ‘এ যেন পৃথিবীর বেহেশত’। কিন্তু এই বেহেশতটাকে যেন এক টুকরা দোজখ বানিয়ে রেখেছে দখলদার ভারত। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ভারতে মোট ৫৬৫টি দেশীয় রাজ¨ ছিল। তাদেরকে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দেবার বা একক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে থাকবার সুযোগ দেওয়া হয়। হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্য ছাড়া প্রায় সবাই ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দেয়। ভারত কিংবা পাকিস্তানের কোনোটিতে যোগ না দিয়ে কাশ্মীর স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তৎকালীন কাশ্মীরের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে ধূর্ত কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু নিজের মিথ্যা আশ্বাসের জালে ফাঁসাতে সক্ষম হয়। মূলত স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই নেহরু শেখ আব্দুল্লাহর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে এবং নেহরুর প্রভাবে শেখ আব্দুল্লাহ সেক্যুলার নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। নেহরু তাকে আশ্বাস দেন যে, কাশ্মীর ভারতে যোগ দিলে তারা স্বায়ত্তশাসন পাবে এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকার মেনে নেবে। আশ্বস্ত হয়ে শেখ আব্দুল্লাহ জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব ও মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং নিজে কাশ্মীরের শাসক হবার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এক জনসভায় বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, I never believed in Pakistan slogan. Pandit Neheru is my best friend and I hold Gandhiji in real reverence. এরপর দেশভাগ পরবর্তী সময়ে কাশ্মীর দখলকে কেন্দ্র করে পাক-ভারত দ্বন্দ্বে কাশ্মীরের ভারতভুক্তি ঘটে। কিন্তু ১৯৫৩ সালে শেখ আব্দুল্লাহর ভ্রম কেটে যায়। ভারতের আচরণে তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি ফাঁদে পা দিয়েছেন। পুনরায় তিনি কাশ্মীরের আজাদীর জন্য ব্রিটেন ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু এ ব্যাপারে জানতে পারলে তার প্রিয় বন্ধু নেহরু তাকে দশ বছরের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করে। দখলদার ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের আপামর মুসলিম জনসাধারণের সংগ্রাম শুরু হয় তখন থেকেই।
কাশ্মীরীদের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ভারত তাদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাতে থাকে। অদ্যাবধি যা চলমান রয়েছে। জেল-জুলুম, গুলি বর্ষণ, ধর্ষণ, গুম, খুন, অপহরণ, গৃহবন্দী ও সামরিক অভিযান সহ নানান কায়দায় কাশ্মীরীদের উপর চালানো হয় নির্যাতন। সামান্য সন্দেহের কারণে সাধারণ কাশ্মীরীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ড. অঞ্জনা চ্যাটার্জীর সাক্ষ্যে আটককৃত ব্যক্তিদের উপর চালানো বর্বরতার একটি কায়দা জানা যায়, তা হল, আটক করার পর একজন ব্যক্তিকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে পা উপরে রেখে ঝোলানো হয়, তারপর মলদ্বারে সিরিঞ্জ দিয়ে পেট্রোল প্রবেশ করানো হয়। পরবর্তীতে মুখে কাপড় বেঁধে পানি ঢালা, পানিতে চোবানো, অঙ্গহানি করা সহ বিভিন্ন নির্যাতন করা হয়।[11]
ভারতীয় বাহিনী বহু মেয়েকে ধর্ষণ করেছে তার মায়ের সামনেই। যেন পশুপ্রবৃত্তিও হার মানে তাদের কাছে। ভারতীয় বাহিনীর নির্যাতনের শিকার এক যুবক বলে, ‘আমার গায়ের কাপড় খোলার পর তারা আমাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটায়, প্রায় দু’ ঘন্টা যাবৎ। যখনই অজ্ঞান হয়ে যেতাম, তারা বৈদ্যুতিক শক দিতো। আরো এক তরুণ জানায়, ‘আমার হাত পা বেঁধে উপুড় করে ঝুলায় তারা। এরপর দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে আমাকে মারতে থাকে’।[12]
বিবিসি ও রয়টার্সের মতে, ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীরে ৪৭ হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। ১০ হাজারেরও বেশী নারীকে করা হয়েছে ধর্ষণ। নিঃসন্দেহে সংখ্যাটা আরও বেশী। ভারতীয় লেখক প্রবীণ ঘোষ জানাচ্ছেন, ১৯৯০ এর ১ই মার্চ থেকে ২০১০ সালের ১৩ই আগষ্ট পর্যন্ত ভারতীয় সেনার হাতে দুই লক্ষ কাশ্মীরী মারা গেছে এবং নিখোঁজ হয়েছে।[13]
২০০৭ সালে মুম্বাইয়ে ড. জাকির নায়েক কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে মুম্বাই হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি জাস্টিস সুরেশ বলেছিলেন, কাশ্মীরে গত ১৭ বছর পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশী মানুষ মারা গেছে, হারিয়েও গেছে অনেকে।
২০০৮ সালে কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। London Institute of South Asia জার্নালে তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তাতে দেখা যায়, বারামুল্লাহ যেলায় কাদা, পাথরের স্তুপ, ঘন ঘাস ও পাহাড়ের পাদদেশে ৯৪০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঐ যেলারই উরি ও রাজামহল্লায় ১৯৯৬-৯৭ সালের ২২টি গণকবর, কাজীপুরায় ১৯৯১ সালের ৭টি গণকবর, মীরমহল্লা-কিছামা-শিরী জনপদে ১৫০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। কূপওয়ারা যেলার ট্রেহগাম গ্রামে ১০০টি গণকবরের সন্ধান মেলে। ড. অঞ্জনা চ্যাটার্জীর বর্ণনা মতে, কাশ্মীরে দুই দশকের নৃশংসতায় ৭০ হাজার কাশ্মীরকে হত্যা করা হয়েছে, ৬ হাজার জনকে গুম করা হয়েছে, ৬০ হাজার জনের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং অগণিত নারী ও বালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।[14]
চীনে মুসলিম গণহত্যা :
চীনের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা জিনজিয়াং প্রদেশ বা পূর্ব তুর্কিস্থান। খনিজ সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চলের মুসলিমরা জাতিগতভাবে 'উইঘুর' নামে পরিচিত। উইঘুর মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্র ‘পূর্ব তুর্কিস্থান’ প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ আন্দোলন ব্যর্থ হয় ১৯৪৯ সালে। আন্দোলন ব্যর্থ হলে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় চীনা নিয়ন্ত্রণ। তারপর থেকে উইঘুরদের উপর ৭০ বছরের বেশী সময় ধরে চলছে চীন সরকারের ক্রমাগত নির্যাতন। বিগত কয়েক বছরে নির্যাতনের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রবল নজরদারিতে রাখা হচ্ছে উইঘুর মুসলিদের। বহিঃর্বিশ্বের নজরের বাইরে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তাদের উপর চলছে বর্বরতার স্টিম রোলার। উইঘুর নির্যাতনের ব্যাপারে তাই বাইরের বিশ্বের জানাশোনা খুবই অল্প।
২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে জাতিসংঘের একটি কমিটি জানতে পারে যে, ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে কয়েকটি শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যেসব লোকজনের ২৬টি তথাকথিত ‘স্পর্শকাতর দেশের’ আত্মীয় স্বজন আছেন তাদেরকে এসব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। যারা মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিদেশের কারো সাথে যোগাযোগ করেছে তাদেরকে টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, এসব ক্যাম্পে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদেরকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর অনুগত থাকতে। তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।[15]
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, হিজাব পরলেই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আরব বিশ্বের সঙ্গে কারও যোগাযোগ থাকলেও তাকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। দিনের পর দিন চলে অত্যাচার।[16]
জার্মান গবেষক আদ্রিয়ান সেন্স বলেন, ‘জিনজিয়াং প্রদেশে চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুরসহ অন্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের কোটার বাইরে সন্তান জন্মদানে বাধা দেয়। যদি কেউ গর্ভপাত করতে না চান, তাহলে তাকে আলাদা করে আটকে রাখার হুমকি দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নারীদের ওপর জোরপূর্বক আইইউডি (জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ধাতব যন্ত্র) ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি জোর করে সার্জারিও করা হয়েছে’। পরিস্থিতির শিকার নারীদের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের মাসিক বন্ধের জন্য ইনজেকশনও দেয়া হয়েছে।[17]
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, চীনা সরকার উইঘুরদের ধর্মীয় ও অন্য স্বাধীনতার ক্রমে ক্রমে হরণ করেছে এবং গণ-নজরদারি, বন্দীত্ব, মগজ ধোলাই এবং জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ পর্যন্ত করানোর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।[18]
বিবিসি জানাচ্ছে, চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব ‘পুনঃশিক্ষণ’ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে তাতে নারীরা পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। চীনা বন্দি শিবির থেকে ফিরে আসা জিয়াউদুন এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, ‘নির্যাতনকারীরা শুধু ধর্ষণই করতো না, সারা শরীরে কামড়াতো। আপনি বুঝবেন না যে তারা মানুষ না পশু। শরীরের কোন অংশই তারা বাকি রাখতো না, সবখানে কামড়াতো আর তাতে বীভৎস সব দাগ হয়ে যেতো। তিনবার আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে’।[19] জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুসারে চীন সরকার স্পষ্টত মুসলিম গণহত্যায় লিপ্ত।
বার্মায় মুসলিম গণহত্যা :
একবিংশ শতাব্দীতে এসে যেসব জনগোষ্ঠী ধর্মীয় কারণে জাতিগত নিধনের শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে ‘রোহিঙ্গা’ জাতিগোষ্ঠী অন্যতম। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পূর্বে অনুমানিক এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করত। যাদের অধিকাংশের বাসস্থান ছিল বার্মার রাখাইন রাজ্যে। এদের সিংহভাগই মুসলিম। এই মুসলিম পরিচয়ই যেন তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। গত শতকের আশির দশকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন শুরু হবার আগে অবধি রোহিঙ্গারা আইন প্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসাবে মায়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। কিন্তু ১৯৮২ সাল থেকে তাদের উপর অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মার সরকার, প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। পূর্বে রোহিঙ্গা পরিচয়কে গ্রহণ করা হলেও ’৮২ সালের পর রোহিঙ্গা পরিচয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে তাদের 'বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বা বাঙালি' বলে উল্লেখ করা হয়, ঠিক যেভাবে আসামে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে NRC এবং CAA এর মাধ্যমে তাদের অসমীয়া পরিচয়কে প্রত্যাখ্যান করে 'বাঙালি' বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধনের অভিন্ন কৌশল। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদেরকে বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসাবে উল্লেখ করেছে।
অসহায় রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘের নিযুক্ত মায়ানমারের বিশেষ তদন্তকারী ইয়ংহি লি বিশ্বাস করেন, মিয়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে চায়।[20]
জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
২০১৭ সালের গণহত্যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী ভয়াবহ। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের আক্রমণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। হাতেগোনা কয়েকজন বিদ্রোহীর দায় কি তবে ১০ লক্ষাধিক একটি জনগোষ্ঠীর সবার? কয়েকজন বিদ্রোহীর দায় পুরো জাতির উপর চাপিয়ে পুরো জনগোষ্ঠীকে জাতিগত ভাবে নির্মূল করা পৃথিবীর কোন আইনে বৈধ? মূলত এটি ছিল বার্মার সেনাবাহিনীর অজুহাত। এই অজুহাত দেখিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিদগ্ধ করা শুরু করে। উদ্দেশ্য সমূলে নির্মূল করা। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নারী-শিশু-বৃদ্ধ সবার সাথে নির্দয় পাশবিক আচরণ করা হয়। The Daily Star, The Frontier Post, Ontario International Development Agency Ges Al Jazeera এর বরাতে জানা যায়, এই নৃশংসতায় ২৪ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা নিহত হয়। কমপক্ষে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নারী ধর্ষণের শিকার হয়, অগণিত রোহিঙ্গাকে ব্যাপক মারধর করা হয় এবং ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২০১৭ সালে বার্মার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ শুরু করলে তথাকথিত শান্তিবাদী বৌদ্ধরা সঙ্গী হয় সামরিক বাহিনীর, অংশ নেয় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ আর হত্যায়। নিহত রোহিঙ্গাদের মাটি চাপা দিয়ে গণকবর তৈরীতে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যায় বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে। সংঘাত পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যচিত্রতে প্রমাণ মেলে রোহিঙ্গাদের জমি দখলের। রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।
পাশ্চাত্যে মুসলিম হত্যা :
ইউরোপ জুড়ে বাড়ছে ইসলাম বিদ্বেষ। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষের হার সর্বোচ্চ। ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ‘পেগিডা আন্দোলন’, যার মূল স্লোগান হল, ‘ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়রা এক হও’।
দৈনিক প্রথম আলো বলছে, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপের নানা দেশে কট্টর জাতীয়তাবাদী, ইসলামবিদ্বেষী বা নব্য নাৎসি দলগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের পুঁজি কৌশলী সস্তা স্লোগান, অভিবাসীবিদ্বেষী আস্ফালন তথা ইসলামবিদ্বেষ। ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপীয় ঐক্যের বিরোধিতা। এই কৌশল অবলম্বন করে এরা ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, গ্রিস, ইতালি প্রভৃতি দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।[21]
ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা ও হেইট স্পিচ এর সাথে শুরু হয়েছে মুসলিমদের উপর হামলা। ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে জার্মানীতে মুসলিমদের উপর দু’টি সহিংস আক্রমণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার পরের তিন মাসে ঐ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ষোলতে।[22]
২০১৬-এ আমেরিকায় মুসলিম বিদ্বেষী আক্রমণের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। ২০১৭ পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের এক-চতুর্থাংশ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল মুসলিমরা। বিশেষ করে ২০১৫ থেকে বেড়েছে মুসলিম ও অভিবাসী বিরোধী হামলা। ডেনমার্কে ২০১৬ সালে ইসলাম বিদ্বেষী আক্রমণ হয় ৫৬ বার। ঐ বছর সুইডেনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোট ৪৩৯টি বর্ণবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ২০১৬-এ ফ্রান্সে মসজিদে আক্রমণ করা হয় ১০০ বার। ২০১৭ সালে শুধু লন্ডনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ১৬৭৮টি আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে পোল্যান্ডে ৬৬৪টি হামলার শিকার ছিল মুসলিমরা এবং ফ্রান্সে এই সংখ্যাটা ৫৪৬।[23]
২০১৭ সালের জানুয়ারীতে কানাডার এক ইসলামিক সেন্টারে এশার ছালাতের আগে ১৯ জন মুছল্লীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।[24]
২০১৯ সালে ১৫ই মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আন-নূর মসজিদে প্রবেশ করে ৫০ জন মুছল্লীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ইউরোপে যে হারে ইসলাম বিদ্বেষ বাড়ছে তাতে এটা অসম্ভব নয় যে, বসনিয়ার মত ঘটনা ইউরোপে আবারো ঘটতে পারে। বসনিয়ায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে মুসলিমদের উপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে এত বড় হত্যাযজ্ঞ আর কখনো ঘটেনি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সম্প্রতি ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য পশ্চিমা বিশ্ব থেকে রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। অথচ মুসলিমের উপর নির্বিচারে গণহত্যার জন্য মিয়ানমার, ইসরাইল কিংবা ভারতের উপর এই অবরোধ আমরা দেখিনি। আশ্চর্যের বিষয় হল, নুসাইরী আসাদকে রক্ষার নামে দিনের পর দিন সিরিয়ায় হাজার হাজার সুন্নী মুসলিম হত্যা করেছে খোদ রাশিয়াই, তখন রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করা হয়নি। অথচ ইউক্রেনে আগ্রাসনের হাতেগোনা মাত্র কয়েকদিনের মাথায় রাশিয়া পুরো পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের শিকার হয়েছে। এর কারণ কী? কারণ পশ্চিমের কাছে সাদা ইউরোপীয়রাই কেবল মানুষ, বাকি সব না-মানুষ, বাঁচবার অযোগ্য। পশ্চিমের মানবাধিকার শুধু এবং শুধুমাত্র নীল চোখ, সোনালী চুল ও সাদা চামড়া বিশিষ্ট মানুষদের জন্য। ইসলামী প্রাচ্যের বাদামী চামড়াওয়ালারা সে বৃত্তের বাইরে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার অন্তঃসারশূন্য কিছু ফাঁপা বুলি মাত্র। বর্ণের আড়ালে পশ্চিমের রূপ যে কিরূপ বিবর্ণ, তা এই বাস্তবতাগুলোই আমাদের বুঝিয়ে দেয়। অধ্যাপক ড. সলীমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘সেই যুগে (মধ্যযুগে) খ্রিষ্টধর্মকে কেন্দ্রে বসিয়ে প্রাচ্যবিরোধী সমরাভিযান চলে। সে যুদ্ধের নাম কী? ক্রুসেড মানে ক্রুশের যুদ্ধ। আমরা জানি সেই ক্রুসেডের
ইতিহাস থেকে ইউরোপ আজও ছাড় পায় নাই।[25]
এছাড়াও শুধুমাত্র ২০১৬ সালে আমেরিকা মুসলিম বিশ্বে প্রায় ২৬ হাজার বোমা ফেলেছে।[26]
১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিমা যুদ্ধে ৪০ লাখ মুসলিম প্রাণ হারিয়েছে[27] এবং একবিংশ শতকের প্রথম দুই দশকে ৮টি দেশে কমপক্ষে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বাস্ত্তহারা হয়েছে।[28] এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন ভূখন্ডে মুসলিমরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্স আলজেরিয়ায় প্রায় এক কোটি আলজেরীয় মুসলিমকে হত্যা করেছে।[29]
বাশার আল-আসাদকে রক্ষার নামে রাশিয়া আগ্রাসন চালিয়েছে সিরিয়ায়। রাশিয়া ও বাশার প্রশাসনের সম্মিলিত আগ্রাসনের শিকার হয়ে লক্ষাধিক সুন্নী মুসলিমের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। ইয়েমেন, লেবানন, লিবিয়া ও সোমালিয়ার মুসলিমদের অবস্থা এর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণ কি?
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, রুশ-ইউক্রেন সংঘাতের কারণ কি? এক্ষেত্রে দুনিয়াবী রাজনৈতিক কারণ থাকলেও এই অশান্তি ও যুদ্ধের পেছনে অন্যতম কারণ হল তাদের কৃতকর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ‘স্থলে ও সমুদ্রে সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের ফল হিসাবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কর্মের কিছু শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (পাপ ছেড়ে আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)।
আল্লাহ তাদেরকে আত্ম কোন্দলে লিপ্ত রেখেছেন মূলত তাদেরই কর্মের ফল স্বরূপ। বিগত সময়ে ও বর্তমানেও রাশিয়া মুসলিমদের হত্যায় লিপ্ত। তাদের হাতে লেগে আছে অসংখ্য মুসলিমের রক্ত। সেন্ট্রাল এশিয়া, দাগেস্তান (ককেশাস), সিরিয়ায় মুসলিমদের উপর রাশিয়া জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ও চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বর্তমান সংকটে বাহ্যত ভিকটিম ইউক্রেনও মুসলিমদের হত্যাকারী ইসরাইলের কট্টর সমর্থক। ২০২১ সালে ইজরাইল গাজায় বোমা হামলা করে হত্যা ও বিধ্বংসী কার্যকলাপ চালানোর সময় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে কট্টর ইজরাইল সমর্থক আমেরিকা যখন ইজরাইলকে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল, তখন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উল্টো এক টুইট বার্তায় ইসরাইলকে ভুক্তভোগী বলে মন্তব্য করে এবং ইজরাইলকে সমর্থন জানায়।[30]
আল্লাহ যালিমদেরকে তার প্রাপ্য যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দেন। এখান থেকে দুনিয়ার অন্যান্য যালেম গোষ্ঠী শিক্ষা গ্রহণ না করলে তাহলে তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। স্প্রতিকালে বিশ্ব রাজনীতিতে পরম ভারতের পরম বন্ধু আমেরিকারও আফগানিস্তানে পতন হতে দেখেছি। মহান আল্লাহ বলেন, وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ۔ ‘আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ইবরাহীম ১৪/২৫)।
উপসংহার : উপরে যে পরিসংখ্যানগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো নিছক কেবল কিছু সংখ্যা নয়। বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর চিত্র আরো ব্যাপক ও ভয়াবহ। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত জাতি আজ মুসলিমরা। তবে এই পরিস্থিতির পেছনের অন্যতম প্রধান একটি কারণ আমাদের নিজেদের জাহেলিয়াত মুগ্ধতা, আত্মমর্যাদাহীনতা ও আয়েশী জীবন। যেদিন কিতাব ও সুন্নাহর পরিবর্তে এই উম্মাহ বিজাতীয় সংস্কৃতি ও জাহেলী মতবাদকে গ্রহণ করে শতধাবিভক্ত হয়েছে, সংগ্রামী চেতনার বিপরীতে আপোষকামী হয়েছে, উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের বিপরীতে নিজ নিজ ব্যক্তিস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেদিন থেকে কর্তৃত্ব হারিয়ে পানিতে ভাসমান ফেনায় পরিণত হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন তাওহীদী চেতনা, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও নববী আদর্শকে প্রগাঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন ক্ষমতা প্রদান করবেন, যেমন তিনি দান করেছিলেন পূর্ববর্তীদেরকে। আর তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতির বদলে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। (শর্ত হ’ল) তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপরে যারা অবাধ্য হবে তারাই হবে পাপাচারী’ (নূর ২৪/৫৫)। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম নেতাদের হক্বের উপর ঐক্যবদ্ধ হবার তাওফীক দান করুন এবং এ যুলুমের সময় অতিক্রম করে আবার আলোকিত সময়ের পথে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন- আমীন!
আবু হুরায়রা ছিফাত
লেখক : ছাত্র (অনার্স, ১ম বর্ষ), রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী
[1]. আবু দাউদ, হা/৪২৯৭; মিশকাত হা/৫৩৬৯।
[2]. সোহেল রানা, দ্যা কিংডম অব আউটসাইডারস (গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, তৃতীয় সংস্করণ : জুন ২০২১), পৃষ্ঠা : ২৪ ।
[3]. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৩ অক্টোবর ২০২১ ।
[4].https://www.politico.com/magazine/story/2016/01/iraq-war-wmds-donald-rumsfeld-new-report-213530/|
[5].The Guardian, 15 Sep 2004|
[6]. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
[7].https://web.archive.org/web/20170928175631/http://www.indiaspend.com/cover-story/86-dead-in-cow-related-violence-since-2010-are-muslim-97-attacks-after-2014-2014|
[8].দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
[9]. বিবিসি বাংলা, ২৮ অগাস্ট ২০২০।
[10]. বিবিসি বাংলা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১।
[11]. এস. এম. নজরুল ইসলাম, সম্রাজ্যবাদী রাজনীতির সদরে অন্দরে (প্রকাশকাল : আগষ্ট ২০১৪), পৃষ্ঠা : ১৭৪।
[12]. বাংলাদেশ জার্নাল, ৩০ আগস্ট ২০১৯ (অনলাইন) ।
[13]. প্রবীর ঘোষ, কাশ্মীরে আজাদির লড়াই (প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১০), পৃষ্ঠা: ৮০ ।
[14]. সম্রাজ্যবাদী রাজনীতির সদরে অন্দরে, পৃষ্ঠা : ১৭১-১৭২ ।
[15]. বিবিসি বাংলা, ১ অক্টোবর ২০১৮।
[16]. ডয়চে ভেলে, ১০ জুলাই ২০২০।
[17]. ডয়চে ভেলে, ১ জুলাই ২০২০।
[18]. বিবিসি বাংলা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
[19]. বিবিসি বাংলা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
[20].The Independent, 14 March 2017 ।
[21]. দৈনিক প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারী ২০১৫ (অনলাইন)।
[22]. ডয়চে ভেলে, ১৮ আগষ্ট ২০১৭।
[23]. আসিফ আদনান, চিন্তাপরাধ (ইলমহাউস পাবলিকেশন, প্রথম সংস্করণ : মে ২০১৯), পৃষ্ঠা : ১৭৫-১৭৬।
[24]. চিন্তাপরাধ, পৃষ্ঠা : ১৭২।
[25]. সলিমুল্লাহ খান, আদমবোমা (আগামী প্রকাশনী, দ্বিতীয় মুদ্রণ : ডিসেম্বর ২০১৩), পৃষ্ঠা : ১৬৮।
[26]."America dropped 26,171 bombs in 2016. What a bloody end to Obama's reign", The Guardian, 9 January 2017
[27]."Unworthy victims: Western wars have killed four million Muslims since 1990", MIDDLE EAST EYE, 18 April 2016
[28]. মাসিক আত-তাহরীক, অক্টোবর ২০২০, পৃষ্ঠা : ৪০।
[29]. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩ মার্চ ২০২২।
[30]. বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২।