আটজন হাফেয সন্তানের মা শরীফাহ মাসতুরা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 521 বার পঠিত
তাওহীদের ডাক : কর্মীরা প্রায়শই দাওয়াতী ময়দানে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়। এই বাধাগুলো থেকে উত্তরণের উপায় যদি বলতেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : ধন্যবাদ, সংগঠন করতে গেলে প্রথম যে বাধা তা হ’ল পারিবারিক বাধা। পরিবারের অনেক অভিভাবকই সংগঠন সম্পর্কে না জানার কারণে বাধা দেয়। তাদের অনেকে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’কে গতানুগতিক মারামারি, দলাদলি, হরতাল, মিছিল, ধর্মঘটসহ জিঘাংসাপূর্ণ রাজনৈতিক কোন সংগঠন মনে করে। কিন্তুএই সংগঠন যে ভিন্নধর্মী এবং এ সমস্ত দলাদলি, কোন্দল, গোলমাল, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকার সংগঠন। এ সংগঠন যে নিরিবিলি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সংগঠন। এটা না বুঝার কারণেই পারিবারিক বাধাটা সর্বপ্রথম আসে।
তাই আমাদের পরিবারকে বুঝাতে হবে ‘আন্দোলন’ কী? ‘যুবসংঘ’ কী? এই জিনিসটা পরিবারের সদস্যগণ বা দায়িত্বশীলরা যখন বুঝবেন তখন তারা অবশ্যই সহযোগিতা করবেন। আমরা এধরনের বাধার সম্মুখীন হওয়ার পরে তাদেরকে যখন বোঝাতে সক্ষম হয়েছি তখন আমাদের বাপ-চাচারা আস্তে আস্তে নিজেরাও সানুগ্রহে সংগঠনের ছায়াতলে এসেছেন এবং আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন।
আরেক ধরনের বাধা এই যে, কিছু ব্যক্তি আহলেহাদীছ সেজে তাদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খায়। তাদের কেউ জোরে আমীন বলে, কেউ রাফঊল ইয়াদাইন করে, কিন্তু পারিবারিক, সামাজিক জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে আহলেহাদীছদের প্রকৃত মানহাজগত বৈশিষ্ট্য গ্রহণে তারা একমত নয়। তারা বামপন্থী, রামপন্থী, আবার বিশেষ করে অনেকে উগ্রপন্থী সংগঠনের সাথে জড়িত। এরাই বেশী বাধা সৃষ্টি করে। কারণ তাদের সম্মুখে প্রতিবন্ধকতা একটাই। সেটা হ’ল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’। ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র বিশুদ্ধ দাওয়াতের ফলশ্রুতিতে তাদের সংগঠন থেকে অসংখ্য মানুষ বের হয়ে এসে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সঠিক ইসলাম জানার সুযোগ পায়। এতে তাদের জনপ্রিয়তায় ধবস নামে। ফলে তারা ব্যাপকভাবে এই বিশুদ্ধ দাওয়াতী কাফেলাকে বাঁধা দান করে।
এসব বাধাগুলি এড়িয়ে চলার জন্য আমাদেরকে সতর্কভাবে পথ চলতে হবে। বাইন মাছ যেমন কাঁদার মধ্যে বাস করে কিন্তু কাঁদা গায়ে লাগতে দেয় না, তেমনি এই জাহেলী সমাজের মধ্যেও আমাদেরকে দাওয়াতী কাজ এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এই জাহেলিয়াত যেন আমাদের গায়ে না লাগে সে ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক-সজাগ থাকতে হবে।
সংগঠনের জন্য অপর এক বাধা হ’ল জন্মসূত্রে ‘আহলেহাদীছ’ হওয়া সত্বেও অনেকে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের মধ্যে ঢুকে গেছে। তাদেরকে যখন বুঝানো যাবে যে, আহলেহাদীছ আন্দোলন কী ও কেন? এবং এটি একটি সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন- তখন তারাও ফিরে আসবে। কারণ মানুষ নাজাত পেতে চায়। যে যা করছে তা নাজাতের আশায়। পীরের মাযারে যে টাকা দিচ্ছে তা নাজাতের আশায়। যখন সে দেখবে যে সে পথে নাজাত নেই, তখন সে সঠিক পথে ফিরে আসবে। বিশুদ্ধ দাওয়াতের ফলশ্রুতিতে এভাবে অনেক মানুষ ফিরে আসছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
একবার এক উপযেলা চেয়ারম্যানের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। উনার বাড়ীতে কোন ছবি নেই। আমি বললাম, আপনি সরকারী দলের চেয়ারম্যান আর আপনার বাড়ীতে কোন নেতার ছবি নেই? তখন তিনি বললেন, আমি পরকাল হারাতে রাযী নই। তাতে আমার চেয়ারম্যানগিরী থাক বা যাক। কিন্তু আমি ছবি লটকাতে পারবো না। পরকাল হারাতে পারব না।
আরেকটি ঘটনা হ’ল- কোন এক সময় আমরা ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী ছিলাম। সেখানে সরকারী দলের একজন বড় মাপের এমপির বাসায় আমীরে জামা‘আত বললেন, আপনার বাসায় ছবি থাকলে ইফতার করব না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজ হাতে ছবিগুলো খুলে খাটের নিচে রেখে দিলেন। সুতরাং তাদেরকে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত দিলে ইনশাআল্লাহ তারা বুঝবেন।
তাওহীদের ডাক : এই ফিৎনার যুগে ব্যক্তি ও পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : ফিৎনার এই যুগে ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ফেৎনা অর্থ বিপদ। যখন বিপদ হয় তখন দেখা যায় সমস্ত পিঁপড়া দলবদ্ধ হয়ে যায়। পানির ভিতরে পিঁপড়া দলবদ্ধ হয়ে ভাসে। কারণ পিঁপড়াও জানে একা একা যদি আমি পানিতে থাকি তাহ’লে পানির ঢেউয়ে আমি তলিয়ে যাব। এমনকি বন্যার সময় সাপ এবং বেজীকে একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিতেও দেখা যায়। বিপদের সময় পশু-পাখিরাও বুঝে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকলে এ বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব। দলবদ্ধ থাকার এই প্রাকৃতিক নিয়মকে উপেক্ষা করে যদি কেউ বলে যে, আল্লাহই আমাকে রক্ষা করবেন, আমি কারো সাথে যাব না, আমি একাই থাকব- তবে নিশ্চয়ই ভুল সিদ্ধান্ত হবে। কেননা এটা আল্লাহসৃষ্ট নিয়মের বিপরীত কথা।
তাছাড়া এই ফিৎনার যুগে সবচেয়ে বড় ফিৎনা হ’ল কুরআন ও হাদীছ নিজের মত বুঝতে চাওয়া এবং আলেমদের থেকে দূরে থাকা। যখন সে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ থাকবে তখন তার জবাবদিহিতা থাকবে, সংগঠনের দায়িত্বশীল ভাইদের সাথে মতবিনিময় হবে। ফলে সে কখনো বিভ্রান্ত হ’তে থাকলে বাকীরা তাকে টেনে ধরবে।
সংগঠনকে আমরা তুলনা করতে পারি এক পাল গরুর সাথে, যখন তাদেরকে এক সাথে গলায় দড়ি লাগিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। একটা গরু সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেও বের হতে পারে না। কারণ ঐ সে চেষ্টা করলেও বাকীগুলো তাকে টেনে ধরে। সংগঠনের এটা একটা সুবিধা। বিপদগামী হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, শয়তান একজনের সাথে থাকে। একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে শয়তান পালিয়ে যায় (তিরমিযী হা/২১৬৫; ইবনু মাজাহ হা/২৩৬৩)। অপর হাদীছে এসেছে যে, দলছুট ছাগলের উপর নেকড়ে সহজেই আক্রমণ করতে পারে (আবূদাউদ হা/৫৪৭)। তেমনিভাবে দলছুট কোন ব্যক্তির উপর শয়তান সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
এ ব্যাপারে আরেকটা কথা বলতে পারি, ঝাড়ুর ভিতরে অনেকগুলো খিল থাকে। এই অনেকগুলো খিল ঝাড়ু হয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে থাকে। কিন্তু যখন ঝাড়ুর ভিতর থেকে একটি খিল বের হয়ে যায় তখন সে নিজেই আবর্জনায় পরিণত হয়। তখন তাকেও ঝাড়ু দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলা হয়।
এভাবে দেখা যায় যে, বহু ভালো ভালো কর্মী ও দাঈ সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী হয়ে গেছে। ফলে তারা আস্তে আস্তে দাওয়াতী ময়দান থেকে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের কার্যক্রম ঠান্ডা হয়ে গেছে। আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদেরকে সাংগঠনিকভাবে সংঘবদ্ধ থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন!
তাওহীদের ডাক : সংগঠনকে গতিশীল করতে কোন বিষয়গুলো অগ্রধিকার দেয়াকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : সংগঠনকে গতিশীল করতে হলে যেসব বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, তার মধ্যে একটি হ’ল তাবলীগী সফর বেশী বেশী করা। কারণ ‘আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড’ অর্থাৎ ‘মানুষ যখন দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়, তখন মন থেকেও দূরে চলে যায়’। এজন্য দাওয়াতী জীবনে আমরা তাবলীগী সফর এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে ব্যাপক ফল পেয়েছি। কাজকর্মহীন চুপচাপ বসে থাকা একটা মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করলে তার ভিতরে আবার সাংগঠনিক চাঞ্চল্য ফিরে আসে।
শাখাগুলিতে যদি কোন দায়িত্বশীল বক্তব্য না দিয়ে শুধুমাত্র সাক্ষাৎ করে আসে, তবুও কর্মীদের ভিতর অনুপ্রেরণা জাগবে। সুতরাং তাবলীগী সফর, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার এই জিনিসগুলির পাশাপাশি দাওয়াতকে বেগবান করার জন্য সেখানকার সমস্যাটা কী তা বের করতে হবে। কোন শাখায় দাওয়াতী কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে কেন, তার পূর্ণ খোঁজ-খবর নিতে হবে। এতে পারস্পরিক কোন দ্বন্দ্ব বা কারো কোন শারীরিক বা মানসিক অসুবিধা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এক গরীব ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সংগঠনে সময় দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে তাকে কিছু সহযোগিতা করা যেতে পারে। কোন দুর্বল শাখায় কাজের লোক আছে কিন্তু পয়সা-কড়ি কম। আবার কোন শাখায় দেখা যায়, পয়সা-কড়ি আছে কিন্তু কাজের লোক কম। এই শাখাগুলিকে টার্গেট করে পারস্পরিক এক শাখা আরেক শাখাকে সহযোগিতা করা বা কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা করে তাদের সমস্যার সমাধান করলে দাওয়াতী কাজের গতি বেড়ে যাবে-ইনশাআল্লাহ!
কখনও দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এক ভাইয়ের দোকানে দেখলাম, তাবিজের মাদুলি ঝুলানো আছে। আমি বললাম, ভাই আপনি তাবিজের মাদুলি রাখছেন কেন? সে বলল, আমি কেন রেখেছি তা আপনাকে দেখাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে এক লোক এসে বলছে, আমাকে কয়েকটা মাদুলি দেন তাবিজ বানাব। তখন দোকানদার ভাইটি বললেন, তাবিজ দেওয়া, তাবিজ গ্রহণ করা, তাবিজ বিক্রি করা সবই হারাম। ক্রেতা তখন বলল, আপনি এসব ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন? দোকানদার বললেন, আপনি যে তাবিজ কিনতে আসবেন তখন আপনাকে দাওয়াত দিব এজন্য রাখছি। এটা একটা দাওয়াতের পলিসি বা কৌশল মাত্র। এভাবে বিভিন্ন ধরনের পলিসি বা কৌশল অবলম্বন করলে দাওয়াতের গতি আরো বেগবান হবে- ইনশাআল্লাহ!
তাওহীদের ডাক : আমরা প্রায়ই দেখি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের পরিবারের সদস্যরা সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে দাওয়াতী ময়দানে কমই ভূমিকা রাখেন। এর কারণ কী? দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিগত উদাসীনতাই কি এর জন্য দায়ী নাকি বর্তমান পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকার অনেক সমস্যা বা কারণ থাকতে পারে। তার ভিতরে একটা জিনিস কাজ করে, সেটা হ’ল যে, আমাদের সংগঠন দুনিয়াবী স্বার্থহীন সংগঠন। এখানে কোন দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা বা চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার মত বিষয় নেই। ছেলে যখন দেখে বাপ সারা জীবন এ সংগঠনের পিছনে জীবন দিয়ে গেল, কিন্তু সংগঠন থেকে মাল-সম্পদ কিছু পায়নি; ছেলে হয়তো তখন ভাবে এখানে থেকে কী হবে? বাপ কষ্ট করেছে, একা একা সেটা বাপই করুক। আমি এর মধ্যে গিয়ে লাভ নাই। যেমনভাবে আলেমের ছেলে আলেম হ’তে চায় না। কেন? এই যে ইলমী ময়দানটা কত কঠিন! কে যাবে খামাখা মিছামিছি? কুরআন-হাদীছের পথে থেকে এত বাধা, এত কষ্ট। তার চেয়ে আমি লেখাপড়া করব, চাকরী করব, আরাম-বিরামে থাকব। এই একটা কারণ হ’তে পারে।
আর অভিভাবক হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা দেখেছি সেটা হ’ল আমি আমার বাচ্চাদের বা ভাইদেরকে সংগঠনের দিকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কিন্তু সংগঠনের দায়িত্বশীলরা অনেক সময় আমার ছেলেদের টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীন। হয়ত তারা ভাবে সে তো আমানুল্লাহ মাদানীর ছেলে। তার তো নিজেরই সংগঠনের কাজে সময় দেয়া উচিৎ। আমরা কি তাকে সংগঠনে টানব? কিন্তু আমার ছেলে তো আর মাদানী না! সে তো ছেলেই। আমি আন্দোলন করি। আমার ছেলেকে যুবসংঘে যুক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারি। কিন্তু তাকে বাধ্য করা তো আমার জন্য কঠিন। বরঞ্চ তাদের উচিত আমানুল্লাহ মাদানীর ছেলেকে টার্গেট করা। অন্য সংগঠনের একটা যুবককে টানতে গেলে তার পরিবার থেকে যে বাধা আসে আমার পরিবার থেকে কিন্তু সে বাধা আসবে না। আমি ছেলেকে বলেছি, ‘যাও যুবসংঘে যুক্ত হও’! ছেলে বলছে, ‘আমি কার কাছে যাব? আমাকে তো কেউ ডাকে না’।
এই বিষয়টাকে আমি মনে করি মাস্টার আর মাস্টারের ছেলের ন্যায়। মাস্টারের ছেলে যেমন মাস্টারের কাছে পড়া হয় না, অন্য টিউটর রাখতে হয়। অনুরূপ যে দায়িত্বশীল তার মাধ্যম দিয়ে অনেক সময় তার ছেলের সংগঠনে আসা কঠিন হয়। এজন্য পার্শ্ববর্তী যারা আছে তাদের সাহায্য করা উচিৎ।
আমার জীবনের এটা একটা বিরাট বিষয় যে, আমি ছোটবেলায় কখনো লেখাপড়া করতে যাইনি। আমি কৃষি কাজ করতাম। হঠাৎ করে মাদ্রাসার মিটিংয়ে আমার আববাকে অনেক লোক জিজ্ঞেস করল, আপনি কমিটির সদস্য, আপনার পরিবার থেকে একটা ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে না তাহ’লে আপনি কেমন সদস্য? আপনার ছেলে যদি এ মাদ্রাসায় না আসে তাহ’লে মাদ্রাসা চালাব কাদের নিয়ে? তখন আববা বললেন, আমার এক ছেলেকে আমি পাঠিয়ে দিব। মাদ্রাসা কমিটির চাপের মুখে বাবা আমাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিলেন। যদিও লেখাপড়ার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল, কিন্তু এতটা ছিলনা।
আমার মনে হয়, যারা দায়িত্বশীল আছেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা দরকার আপনার ছেলেকে কিভাবে সাংগঠনিক বানানো যায়। এভাবে কথা বললে অনেকটা সহজ হয়। তবে আমার নিজস্ব ব্যাপার আমি বলে গেছি। আমি বেঁচে থাকি বা মারা যাই আমার তিন ছেলেকে আল্লাহর ওয়াস্তে এই ‘আন্দোলনের’ জন্য রেখে যেতে চাই। তারা যদি আপনাদের কাছে না আসে তবে তাদেরকে আপনারা ধরে নিয়ে আসবেন। বলবেন, তোমার বাবা এ কথাগুলো বলে গেছে। তোমাদের বাবা তোমাদেরকে এ রাস্তায় ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। কাজেই তোমাদেরকে এ পথেই থাকতে হবে।
তাওহীদের ডাক : বর্তমানে দাওয়াতের ময়দানে দাঈরা অনেকটাই পেশাদার হয়ে পড়েছেন। একজন আর্দশ দাঈকে কোন কোন গুণাবলী অর্জনের ব্যাপারে আপনি নছীহত করবেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : বর্তমানে দাওয়াতী ময়দানে পেশাদার লোক বেশী। এই ময়দানে ছোট-বড়, লালু-ভুলু গাড়ী-ঘোড়া কিনে, ভিজিটিং কার্ডে নানান ধরনের উপাধি দিয়ে, প্রটোকল বাহিনীর বেষ্টনী নিয়ে স্টেজ গরম করছে। আমরা যারা এসবের বাইরে ছিলাম আমাদেরকেও কোণঠাসা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলি, আমাদের এক ভাই দাওয়াতী প্রোগ্রামে ঢাকা হ’তে দিনাজপুর গেছেন। উনাকে সাত হাযার টাকা দিয়েছে। আর তার গাড়ীর খরচ বারো হাযার। এই পাঁচ হাযার টাকা কোথায় হ’তে আসবে? আস্তে আস্তে দেখা যাচ্ছে যে, এরাও বাধ্য হচ্ছে পেশাদারী কথা বলতে।
এই ময়দান বড়ই কঠিন। বিশেষ করে, আমার জীবনে অনেকবার কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। এবছরেও কিছু কিছু জায়গায় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে যেগুলো খুব কঠিন। মন চায় না যে এভাবে দাওয়াতী ময়দানে আর থাকি। তারপরেও দ্বীনের স্বার্থে সাধ্যমত এই ময়দানে থাকতে চাই। যারা পেশাদার-অপেশাদার বলে থাকেন সেটা তাদের ব্যাপার।
তবে এ কথা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, ওয়াজ মাহফিল বা কনফারেন্স/সেমিনারে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও খরচ হয় তার তুলনায় ফায়দাটা অনেকাংশেই কম। সেক্ষেত্রে ফায়দা বাড়ানোর জন্য যদি কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাহ’লে দাওয়াত আরো ফলপ্রসূ হবে। যেমন- কোন একটা নতুন এলাকায় হঠাৎ গরম বক্তব্য দিলে সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে নতুন এলাকায় ভারসাম্য রক্ষা করে কথা বলতে পারে এরকম দাঈ দরকার। পুরাতন এলাকায় আরেক রকম। শিক্ষিত এলাকায় আরেক রকম। নিভৃত গ্রামাঞ্চলে আরেক রকম। ছোট ছোট প্রোগ্রামগুলিতে এক রকম দাঈ দরকার। বড় বড় প্রোগ্রামগুলিতে আরেক রকম দরকার। এভাবে যদি কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তাহ’লে খুব ভাল হ’ত।
মনে রাখতে হবে যে, আপামর জনসাধারণের কাছে কিন্তু বইপত্র দিয়ে বিশেষ কাজ হবে না। তাই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ওয়াজ মাহফিলে কুরআন-সুন্নাহর বিশুদ্ধ কথাগুলি যদি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা যায় তাহ’লে একসময় তারা সঠিক মানদন্ডে ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।
একবার আমি খুলনায় গেলাম। এক ভদ্রলোক বলছেন, অনেকদিন আগে একটা হ্যাংলা-পাতলা গড়নের ছেলে বক্তব্য দিয়েছিল। আমি এক হানাফী মসজিদের ইমাম হিসাবে তার ভুল ধরতে গিয়েছিলাম। সেখানে তার একটা কথা হৃদয়ে খুবই করাঘাত করল যে, কবরে জিজ্ঞেস করা হবে আপনার নবী কে? সেখানে আপনার ইমাম কে? পীর কে? জিজ্ঞেস করা হবে না। শুধুমাত্র নবীর পরিচয় সেখানে দিতে হবে। অথচ দুনিয়ায় আপনি কার পরিচয় নিয়ে চলেছেন? আপনি আপনার ইমামের পরিচয় দিচ্ছেন, মাযহাবের পরিচয় দিচ্ছেন, তরীকার পরিচয় দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার নবীর পরিচয় কোথায়? এরপর আমি চার/পাঁচ বছর এ বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করলাম। তারপর আমি আহলেহাদীছ হয়েছি সেই লোকের একটা কথার উপর ভিত্তি করে। আমি তাকে বললাম, ঐ যে আপনি খুলনায় যে হালকা-পাতলা লোকের ওয়াজ শুনেছিলেন, আমিই সেই আমানুল্লাহ। এখন আমি মোটা হয়ে গেছি। লোকটি আমাকে পেয়ে খুবই খুশি হয়ে গেলেন।
আরেকটা জায়গায় এক ব্যক্তি বললেন, অনেকদিন আগে মুন্সিগঞ্জের পঞ্চসার স্কুল মাঠে এক লোক এসেছিল, যে মদীনা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল। সেখান থেকে তার বক্তব্য শুনে আমি আহলেহাদীছ হয়েছিলাম। আজকে নিজের জায়গা দান করে মসজিদ বানিয়েছি। আমি তাকে বললাম, সে লোকটাকে আপনি চিনেন নাকি? সে বলল, না আমি আর তাকে দেখিনি। আমি বললাম, পঞ্চসার বনিক্যপাড়া হাইস্কুল মাঠে মদীনা ইউনিভার্সিটির যে ছাত্র বক্তব্য দিয়েছিল আমি সেই আমানুল্লাহ। তিনি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন। বললেন, সেই দিন আপনার অসীলায় আমার চোখটা খুলেছিল। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
একবার বরিশাল হ’তে ফেরার পথে লঞ্চে এক ব্যক্তিকে মুফতী আব্দুর রউফ ছাহেবের এক টাকার একটা বই ‘রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত’ দিয়েছিলাম। দেখা গেল বইটার মাধ্যমে বিরাট উপকার হয়ে গেছে। সেই ব্যক্তি বইটা নিয়ে চল্লিশটা মাদ্রাসায় গেছে। কোন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। ফলে সে একসাথে চল্লিশজন যুবককে নিয়ে আহলেহাদীছ হয়েছিল।
এই দাওয়াতী জালসা-মাহফিলে কিছু না হোক এতটুকু হয় যে, জাহেলিয়াত থেকে মানুষ ফিরে না আসলেও বৃদ্ধির হারটা কমতে থাকে। তাছাড়া এর মাধ্যমে মানুষের ভিতরে যথেষ্ট প্রাণচাঞ্চল্য জাগে এবং পরিবর্তনের আবহ সৃষ্টি হয়।
তাওহীদের ডাক : মাযহাবী সমাজে একজন হানাফী আলেমকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, সেভাবে কী আহলেহাদীছ সমাজে একজন আলেমকে মূল্যায়ন করা হয়? আপনি কী মনে করেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : উভয় পক্ষের মধ্যে বাড়াবাড়ি আছে। মাযহাবী ভাইদের দেখা যায় যে, তারা তাদের আলেমদেরকে মর্যাদা দিতে দিতে মাথায় তুলে নেয়। আর আহলেহাদীছ সমাজে দেখা যায়, তাদেরকে নিচে নামাতে নামাতে বিস্তর অবমূল্যায়ন করে। তাদের মধ্যে আলেমভক্তির পরিমাণ বেশী। আমাদের মধ্যে অবহেলার পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রে বেশী। তারপরেও যারা প্রকৃত ইসলাম বোঝেন তারা আমাদের অনেক ভালবাসেন। সহজেই তা অনুভব করতে পারি। কুরআন হাদীছ যারা বোঝেন তারা তো জেনে-বুঝেই ভালবাসেন। আর যারা কুরআন হাদীছ বোঝে না তাদের ভালবাসাটা সাময়িক, কৃত্রিম। যাইহোক আলেমদের মূল্যায়নে আমাদের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ।
তাওহীদের ডাক : একজন আদর্শ দাঈকে কী কী গুণে গুণান্বিত হ’তে হবে বলে আপনি মনে করেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : একজন আদর্শ দাঈর জন্য যেসব গুণ থাকার প্রয়োজন-
প্রথমতঃ ইখলাছ : এজন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) তার স্বীয় গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ই শুরু করেছেন, ‘কিভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ওহীর সূচনা হয়’। সেই প্রথম অধ্যায়ের প্রথম হাদীছ হ’ল ‘ইন্নামাল আ‘মালু বিন নিয়্যাত’ অর্থাৎ ‘যাবতীয় কাজের ফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’। অহির জ্ঞান হাছিল করতে হবে নিয়ত ঠিক রেখে। নিয়ত যদি ঠিক না হয় তাহ’লে অহির জ্ঞান প্রচার করে লাভ নেই, অহির জ্ঞান শিখেও লাভ নেই। নিয়তকে খালেছ করতে হবে। নিয়ত হ’তে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি জন্য। তাহ’লে দুনিয়ার সব বাধা-বিপত্তি সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়তঃ ইলম বা জ্ঞান : ইখলাছের পরেই যেটা প্রয়োজন সেটা হ’ল ইলম বা জ্ঞান। ইলম ছাড়া দাওয়াত হয় না। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও যদি একটি আয়াতও হয়’। রাসূল (ছাঃ)-এর কাছ থেকে শিখে পৌঁছিয়ে দাও। না জানা জিনিস বলা যাবে না। এজন্য ইমাম বুখারী (রাঃ) ‘কথা ও আমলের পূর্বে ইলম প্রয়োজন’ মর্মে অধ্যায় নিয়ে এসেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি জেনে নিন আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ১৯)। সুতরাং আগে জেনে নিতে হবে, তারপর জানাতে হবে। তাহ’লে প্রথমটা ইখলাছ, দ্বিতীয়টা হ’ল ইলম।
তৃতীয়তঃ ছবর: দাওয়াতী ময়দান এমন কঠিন যেখানে ধৈর্য ছাড়া টিকে থাকা যায় না। আল্লাহ বলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ দাও ও অসৎকাজে নিষেধ কর এবং বিপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটি শ্রেষ্ঠ কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত’ (লোক্বমান ৩১/১৭)। কাজেই দাওয়াতী কাজ করতে গেলে বিপদ আসবে। সেখানে ছবর অত্যাবশ্যকীয়।
চতুর্থতঃ ইখতিয়ারুল আউলাভিয়াত: অর্থাৎ প্রথম কোন দাওয়াত হবে, তারপর কোনটা- এই বিষয়টি বুঝা। ডাক্তারের কাছে রোগী এসেছে সর্দি ও সাপের কামড় নিয়ে। এখন সাপের কামড়ের চিকিৎসা আগে না সর্দির ঔষধ আগে দিতে হবে। সাপের বিষ নাশ করার ঔষধ আগে দিতে হবে। কারণ সাপের বিষের ঔষধ না দিলে সে মারা যাবে। আর সর্দি পরেও সারানো যাবে। সুতরাং দাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রথম তাওহীদের দাওয়াত দেওয়াটা যরূরী।
যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানবাসীদের উদ্দেশ্যে পাঠালেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, তুমি আহলে কিতাবদের একটি কওমের কাছে যাচ্ছ। অতএব তাদের প্রতি তোমার প্রথম দাওয়াত হবে তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করে নেয়। তারা তা স্বীকার করার পর তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা দিনে-রাতে তাদের প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করে দিয়েছেন’ (বুখারী হা/৭৩৭২)।
এজন্য প্রথমতঃ তাওহীদ ঠিক করতে হবে। তাওহীদ যার ঠিক নাই, তার ছালাতের মূল্য কী? ছালাতের দরকারই বা কী? তারপর যাকাতের কথা বলা হয়েছে। এভাবে দাওয়াতের ধারাবাহিকতা ঠিক করতে হবে। অনেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন বা জোরে আমীন বলা নিয়ে ওয়ায গরম করে ফেলে। এগুলো হ’ল সুন্নাত আমল। যদিও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু তাওহীদের মত তো না। শিরক বর্জন করা যতটা যরূরী, ততটা তো যরূরী না। শিরক করলে তো মানুষ চিরস্থায়ী জাহান্নামী। সুতরাং জাহান্নামী মানুষগুলোকে আগে ফিরানোর চেষ্টা করতে হবে।
পঞ্চমতঃ মাদ‘ঊ নির্বাচন করা : অর্থাৎ যাকে দাওয়াত দেয়া হবে, যদি সে মূর্খ হয় তাকে এককভাবে বুঝাতে হবে। তাকে বলতে হবে এখন দিন না রাত? যদি বলে, এখন দিন। ঠিক আছে। কেউ রাত বললে তারটা হবে ভুল। আর কেউ যদি বলে দিন-রাত দুইটাই ঠিক, তাহ’লে কী উত্তর ঠিক হবে? এভাবেই তাকে বুঝাতে হবে। কেউ যদি শিক্ষিত হয় তাকে বলতে হবে, ভাই এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে সরল রেখা কয়টি হয়? তো একটি হয়। এই যে একটি বিন্দু দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম। সে যে শিক্ষিত লোক। এভাবে যে যেভাবে বুঝে তাকে ঐভাবে বুঝাতে হবে। এটা বুঝানোর বিষয়।
ষষ্ঠতঃ সফর করা : এক জায়গায় দাওয়াত নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এক জায়গায় হচ্ছে না, আরেক জায়গায় চেষ্টা করতে হবে। এক মসজিদ থেকে বের করে দিলে আরেক মসজিদে যেতে হবে। একটা মসজিদে দাওয়াত দিতে গেলাম সেখানে আশানুরূপ ফল পেলাম না; ব্যস! আরেক জায়গা টার্গেট করলাম। একজনকে দিয়ে হ’ল না, আরেকজনকে দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে তায়েফ থেকে তাড়িয়ে দিলে তো তিনি তায়েফেই বসে থাকেননি। তায়েফে বসে দিন পার করে দিলে হয়তোবা রাসূল (ছাঃ)-এর হায়াত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু দাওয়াত বিস্তার লাভ করতো না। তিনি চলে আসলেন, চলে এসে আবার তিনি মদীনার বাসিন্দাদের টার্গেট করলেন। আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে তিনি কৃতকার্য হলেন।
তাওহীদের ডাক : নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে যুবসমাজ ও যুবসংঘের ছেলেদের প্রতি আপনার উপদেশ কী?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : বর্তমান অবক্ষয়ের যামানায় এই যুবকদেরকে ধ্বংস করার জন্য মোটামুটি চারটি বিষয়ে কাজ চলছে। যেগুলো থেকে যুবসমাজকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমতঃমাদকদ্রব্য : বর্তমানে মাদকদ্রব্য ব্যাপকহারে ছেয়ে গেছে। এখান থেকে বাঁচার সর্বপ্রথম চেষ্টা হ’ল- যে বা যারা মাদকাসক্ত তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখা। কারণ মানুষ যেকোন ভাবে যেকোন সময়ে খারাপ দ্বারা প্রভাবিত হ’তে পারে।
দ্বিতীয়তঃনারী: রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ ‘তোমরা দুনিয়া ও নারী থেকে সাবধান থাক’ (মুসলিম হা/২৭৪২)। একজন পরনারী আমার কাছে কোন বিষয়ে সহযোগিতা চাচ্ছে, এটুকুর মাধ্যমেই সে চাইলে যেকোনভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। সুতরাং তাকে সহযোগিতা করতে হলে দূর থেকে করতে হবে, কাছাকাছি হওয়া যাবে না। যাতে এর পথ ধরে অনৈতিক হৃদ্যতা তৈরী না হয়। বিশেষ করে, যুবকদের উচিৎ তাড়াতাড়ি বিবাহ করা। অভিভাবকদের উচিৎ তাড়াতাড়ি বিবাহ দেওয়া।
তৃতীয়তঃ ইন্টারনেট: যদিও যরূরী জিনিস। কিন্তু অন্ততপক্ষে আলেম পাশ করার আগ পর্যন্ত বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়া উচিৎ নয়। স্মার্ট ফোন থেকে তাদের দূরে রাখা আবশ্যক। নতুবা কমপক্ষে ইন্টারনেটের যাচ্ছেতাই ব্যবহার যাতে না করে, সেজন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করতে দিয়ে মোবাইল নিজের হেফাযতে রাখা।
চতুর্থতঃ প্রচলিত রাজনীতি : রাজনৈতিক বিভিন্ন দল তরুণদের কাছে আসবে বিভিন্ন ফায়দা হাছিলের জন্য। সবসময় তাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে। যদি কোন আত্মীয় আপনাকে বিপদের সময় সাহায্য করে, সে কিন্তু নির্বাচনে ঠিকই কাজে লাগিয়ে ছাড়বে। যদি চার আনা উপকার করে, তাহ’লে বার আনা নিয়ে ছাড়বে। ফায়দা ছাড়া কোনো রাজনীতিবিদ আপনাকে উপকার করবে না। অতএব প্রচলিত রাজনীতির বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
তাওহীদের ডাক : তরুণদের মধ্যে দ্বীনদারী বাড়ার সাথে সাথে চরমপন্থারও প্রবণতা বাড়ছে। তাদেরকে কিভাবে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : তরুণদের মধ্যে যে জঙ্গীবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটছে তার মৌলিক কারণ হ’ল পর্যাপ্ত ইসলামী জ্ঞানের অভাব। কুরআন ও হাদীছের অপব্যাখ্যা করে উদীয়মান যুবকদের জঙ্গীবাদের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। এদেরকে বুঝাতে হবে যে, চরমপন্থা ইসলামের নীতি নয়। সঠিক বিষয়টা তাদেরকে বুঝানোটাই সবচেয়ে যরূরী। তারা যখন তাদের ভুল বুঝতে পারবে তখন দ্রুত ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের লিখিত জঙ্গীদের বিশ্বাসগত ভ্রান্তির জবাব বইতে যে দশটি পয়েন্ট খন্ড করা হয়েছে, সেগুলো ব্যাপকহারে প্রচার করা যায়। প্রশাসনের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে আমরা অনুরোধ করছি। এই জাতীয় প্রচারপত্রগুলো যদি সরকারীভাবে প্রিন্ট করে বিতরণ করা যায় এবং সাথে সাথে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। যেমন ফল পাওয়া গেয়েছিল যখন আলী ও মুআবিয়ার (রাঃ)-এর মাঝে যুদ্ধ হয়েছিল। ছিফফীনের যুদ্ধের মাঝামাঝি পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ)-কে পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে বুঝাবার জন্য। এর ফলে অসংখ্য খারেজী আক্বীদায় বিশ্বাসী মানুষ ফিরে আসছিল। অবশ্যই তারা জান্নাতের আশায় ও নাজাতের আশায় এগুলো করে থাকে, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যারা। আর যারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন তাদের হয়তো বিশেষ কোন স্বার্থ থাকবে। আর সাধারণ যারা তারা দ্বীনের স্বার্থেই এগুলো করে থাকেন। সুতরাং তাদেরকে এই পথ থেকে আনতে যথাযথ কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
আর এক ধরণের মানুষ আছে, যাদের হাতে কাজ নেই। এদের অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা। যখন তারা কাজ পায় না, তখন বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়। এজন্য তাদেরকে সংগঠনের মাধ্যমে সংগঠিত করে দ্বীনের কাজে লাগিয়ে দিলে একটা ফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়তঃ একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ যে, অনেক সময় যারা জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এক সময় আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। তারপর তাদেরকে ধমক দেই, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি। এটা ঠিক নয়। বরং আমরা যেন তাদেরকে রোগী মনে করে তাদেরকে ডাক্তার যেমন সবকিছু শুনে রোগীর ঔষধ দেয়, তেমনি ধৈর্যের সাথে তাদের কাছ থেকে আমরা বিস্তারিত দলীল শুনে তারা কোন দলীলের ভিত্তিতে জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত হচ্ছে, তার খন্ডন করে তাদেরকে বোঝানো চেষ্টা। এতে সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ।
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আতের সাথে ঘটে যাওয়া কোনো বিশেষ ঘটনা বা স্মৃতি আছে কি?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের সাথে ঘটে যাওয়া আমার অনেক স্মৃতি আছে। ছাত্রজীবনে আমীরে জামা‘আতের সাথে আমার পরিচয় ও সম্পর্ক। অনেক স্মৃতিময় ঘটনা মাঝখানে ঘটে গেছে। তার মধ্যে কিছু ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
১. রাজধানীর দোলেশ্বরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। তারিখটা আমার সঠিক জানা নেই। তবে ১৯৮৮-৮৯ সালের দিকে হবে। আমি তখন আহলেহাদীছ আন্দোলন কী ও কেন সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছিলাম। আহলেহাদীছ যুবসংঘের সম্মেলন হচ্ছিল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. আব্দুল বারী (রহঃ)। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন আমাদের মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং শায়খ আব্দুল মতীন সালাফী (রহঃ)-সহ অন্যান্য। আলোচক ছিলেন মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী। আমারও আলোচনা ছিল। সভাপতি ছিলেন সেই শাখার সদস্য ইসমাঈল ভাই। ওখানে আমি আহলেহাদীছ কি ও কেন, চার দফা কর্মসূচী, ৫টি মূলনীতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের উপরে বক্তব্য দিচ্ছিলাম। তখন আমীরে জামা‘আতকে শায়খ আব্দুল মতীন সালাফী বা অন্য কেউ বলছিলেন যে, আপনার বক্তব্যের তো ক্যাসেট বাজছে। এখন আপনার বক্তব্য না দিলেও চলবে। সে এক স্মৃতিময় মুহূর্ত। এতদিন চলে গেল। তবুও মনে হয় আমার জন্য সেরকম আনন্দময় পরিবেশ বোধহয় আর ফিরে আসেনি।
২. আমীরে জামা‘আতের সাথে একটি বিশেষ স্মৃতি ছিল তাঁর বাসায়। দাওয়াতী সফর শেষে বগুড়া থেকে আমরা একসাথে ফিরে আসলাম রাজশাহীতে। সেখানে রাতের খাবার ঠিক মত হয়নি। পরে আমীরে জামা’আতের বাসার সামনে আসলাম। নামলাম, নীচে অফিসে ঢুকলাম। ওযু-ইস্তেনজা করছি। এমতাবস্থায় দেখছি আমীরে জামা‘আত ট্রেতে করে গরম রুটি নিয়ে আসলেন। ফজরের আযানের সময় আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যে, রাতে ওখানে খাওয়া হয়নি একথা আমীরে জামা‘আতের কানে কিভাবে পৌঁছালো? উনিও এসে নামলেন খানিক আগে। আমি শুধু বাথরুমে ঢুকে ওযূ করলাম। এরই মধ্যে ফজরের আযান হয়ে গেল। এসময় দেখছি আমীরে জামা‘আত গরম রুটি, দই, কয়েকটা মিষ্টি আর কিছুক্ষণ পর পানির বোতল এনে দিয়ে বললেন, খাও। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। আযান হয়ে গেছে। জামা‘আতে যেতে হবে। সেদিনকার ঘটনা আমাকে খুবই অভিভূত করে। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই।
৩. মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে সম্ভবতঃ ১৯৯৩ সালে একবার আমীরে জামা‘আতকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম আমার এক শিক্ষকের কাছে। আমীরে জামা‘আতকে দেখে দু’একটা কথা বলে চলে গেলেন। আমীরে জামা‘আত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর শিক্ষক মহোদয় আবার ফিরে আসলেন। তারপর কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। প্রশ্ন শেষে বললেন, আমি তোমার আমীরের ইন্টারভিউ নিয়ে পরিমাপ করেছি। ইন্টারভিউতে তিনি পাস করেছেন। ওনার ভিতর ধৈর্য আছে, ইনছাফ আছে। উনার ভিতর সৎসাহস আছে। তিনি যা লিখেছেন, তাতে উনি অচিরেই জেলখানায় যাবেন। উনার লেখার সংগে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িমসহ বিগত দিনগুলিতে জেল খেটেছেন এমন মনীষীদের লেখনীর মিল রয়েছে।
৪. একবার সফর ছিল যশোর থেকে রাজশাহী। ফেরার পথে মাইক্রোতে আমীরে জামা‘আত পড়াশুনা করছিলেন। হঠাৎ করে তাঁর ক্ষুধা লাগল। আমরা বললাম, নাশতা করেন। তিনি বললেন, না। তারপর ক্ষুধা পেলে বললেন, রুটি কী পাওয়া যাবে? আমি কয়েক জায়গায় চেষ্টা করে একটা রুটি নিয়ে আসলাম ছয় টাকা দিয়ে। আমীরে জামা‘আত সেই রুটি খানিকটা খেলেন, খানিকটা ছিড়ে আমাদেরকে দিলেন। তারপর খানিকটা তাঁর ছেলেকে দিলেন। তারপরে টাকা বের করলেন বিশ টাকা। রুটির দাম রাখ। আমি বললাম, না এটা তো হাদিয়া। হাদিয়া ফেরত নেওয়া হয় না। আমীরের জামা‘আত বললেন যে, ‘হাযা মিন আমীরিকুম’-আমীরের নির্দেশ, টাকা নিতে হবে। আমি বললাম, ‘আলার রা’স ওয়াল আইন’। আমীর যেহেতু নির্দেশ দিয়েছেন, এজন্য ফেরত নিলাম। আমি ৬ টাকা রেখে ১৪ টাকা ফেরত দিলাম। আমীরে জামা‘আত বললেন, ছয় টাকায় এত বড় রুটি! এত কম দাম? আমি বুঝলাম, আমার আমীর রুটির দাম কয় টাকা তা বুঝে না। এক শ্রেণীর লোক তাঁর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অভিযোগ দিয়ে এবং বাজে কথা বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। তাদের আল্লাহ তা‘আলা হেদায়াত দান করুন! আমীরে জামা‘আতকে আল্লাহ হায়াতে তাইয়েবাহ দান করুন! আমীন!
তাওহীদের ডাক : ‘অহির আলোয় উদ্ভাসিত হোক বাংলার প্রতিটি ঘর’ কিংবা ‘আগামীর বিশ^ বিশুদ্ধ ইসলামের’- আদর্শ দেশ ও জাতি গঠনে ‘যুবসংঘের’ এ প্রত্যাশার সাথে আপনি কতটুকু একমত পোষণ করেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : আলহামদুলিল্লাহ বিশুদ্ধ ইসলাম তো মানুষ এখন যথেষ্ট চর্চা করছে। যে যতটুকু পারছে। আবার ক্বিয়ামতের আগে আরও একবার ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ এ পৃথিবীতে ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ। এটা তো হাদীছের ভাষ্য। এ প্রত্যাশার সাথে আমি একমত। কিন্তু হাদীছে বলা হয়েছে ‘ওয়ালাকিন্না ফীহিদ দুখ্ন’ তথা বিশুদ্ধ ইসলামের মধ্যেও কিছু ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হবে। সেই ধ্রুম্রজাল তো আছেই, আর থাকবে। কিছু সন্দেহ-সংশয় কাজ করবে। যারা সন্দেহ-সংশয় থেকে বেঁচে চলবে তারা তাদের বিশুদ্ধ দাওয়াত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। আর যারা সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাবে তাদের অনেক সমস্যা থাকবে। মানুষ দলে দলে ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ করছে। অনুরূপভাবে আহলেহাদীছ বিদ্বেষীও প্রচুর আছে। আমরা আহলেহাদীছের মধ্যে দু’টি ধরন দেখতে পাচ্ছি। একটা বাপ-দাদা হ’তে চলে আসা আহলেহাদীছ। তারা বলে বাপ-দাদারা করে গেছে আমরা কেন করব না?
আর যারা নতুন আহলেহাদীছ হচ্ছে। এদের আরেক সমস্যা। এরা তাল সামলাতে পারছেনা। একেকজন একেক শায়খ, একেক স্কলার কিংবা একেক বক্তার অনুসারী হয়ে তাক্বলীদ করছে। কেউবা সঊদী আরব বা পাকিস্তানের মত কোন বিশেষ দেশের আলেমদের তাক্বলীদ করছে। সবচেয়ে বড় ভয়ানক যে বিষয় সেটা হ’ল, তার পছন্দের শায়খ, আলেম বা বক্তার কোন ভুলের বিপক্ষে যদি আমাদের কোন দলীল ভিত্তিক এবং যুক্তিসংগত বক্তব্য বা লেখনী যায়, তাতে তারা এত ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, যা কল্পনার বাইরে। তাদের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ও কথাবার্তা বাতিলদেরকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। স্বয়ং মাযহাবীদের মধ্যেও এতটা গোঁড়ামি ও অন্ধত্ব দেখা যায় না। এটা একটা ভয়ংকর রোগ, যা সংক্রামকের মত ছড়িয়ে পড়েছে। এবার ওমরা সফরে গিয়ে দেখলাম, অনেক দ্বীনী ভাই দেখা পর্যন্ত করল না, কথাও বলল না। অথচ তাদের সাথে আমার ইতিপূর্বে সুসম্পর্ক ছিল। কেন এই আচরণ? কারণ হ’ল ওনার পছন্দের শায়খ কোথাও উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিয়েছে আর তার বক্তব্যের উত্তর আমরা দিয়েছি। এই সংশোধনী দেওয়াটা আমাদের অপরাধ হয়ে গেছে। ফলে তারা এখন আমাদের ছেড়ে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে। এই ব্যক্তিপূজা বা অন্ধভক্তির রোগ এতটা মারাত্মক যে, অনেক ক্ষেত্রে তা প্রচলিত মাযহাব এবং তরীকা অনুসারীদেরকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। কাজেই যেমন আমরা প্রত্যাশা রাখছি, তেমনি এসব কান্ড দেখে যথেষ্ট হতাশাও কাজ করে। তারপরেও আশা রাখতে হবে। আহলেহাদীছ হওয়াটাই সবকিছু নয়। যারা ভাল কাজ করবে, নীতি-আদর্শ-আখলাকের উপর টিকে থাকবে, চূড়ান্ত বিচারে তারাই ভাল ফল পাবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এটাই জগতের চিরন্তন নীতি। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হেফাযত করুন-আমীন!
তাওহীদের ডাক : তাওহীদের ডাক পাঠকদের জন্য আপনি যদি কিছু বলতেন?
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : ‘তাওহীদের ডাক’ হ’ল ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রথম ফসল। যদিও এখন আমাদের ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকা রয়েছে। অন্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানেরও পত্রিকা রয়েছে। কিন্তু যুবকদের পত্রিকা হিসাবে ‘তাওহীদের ডাক’ আমাদের প্রাণের স্পন্দন ও প্রথম ফসল। আমরা যখন যুবসংঘ-এর এই দাওয়াতী প্লাটফর্মে একত্রিত হয়ে নেমেছি, তখন থেকে এই তাওহীদের ডাক পত্রিকার সাথে আমরা সম্পৃক্ত।
তাওহীদের ডাকের যারা পাঠক আছেন তাদেরকে আমার তরফ থেকে অনুরোধ ‘তাওহীদের ডাক’ নিয়মিত পড়বেন। আর তাওহীদের ডাকের পাঠক কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করবেন। যদি কারোর সামর্থ্য থাকে কিনে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ফ্রী বিতরণ করবেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক তৈরী করবেন। বিভিন্ন মাদ্রাসা-মসজিদে তাওহীদের ডাকের এজেন্ট করে দিবেন। তাহ’লে হাযার হাযার মানুষ সেখান থেকে উপকৃত হবেন। আল্লাহ পাক সবাইকে তাওফীক দান করুন! আল্লাহুম্মা আমীন!
তাওহীদের ডাক : জাযাকাল্লাহ খায়রান। আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী : বারাকাল্লাহ ফীকুম।