কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের শাখা (৬ষ্ঠ কিস্তি)
হাফেজ আব্দুল মতীন
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম 852 বার পঠিত
ভূমিকা :
জুম‘আর দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা মুসলমানদের নিকট সাপ্তাহিক ঈদ। এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এই দিন ছুটি থাকে। মানুষ মনে করে শুক্রবার মানে অবসর দিবস। আবার কেউ মনে করে জুম‘আর দিন মানে বেড়ানোর দিন। তবে একজন মুমিন ব্যক্তির কাছে জুম‘আর দিন ও রাত বিশেষ ইবাদতের দিন। সে সকালে উঠে জামা‘আতে ফজর ছালাত আদায় করে নাস্তা করে আবারো মসজিদ পানে দৌড়াবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। জুম‘আর ছালাত আদায় শেষে বাড়িতে ফিরবে এবং খাবার খেয়ে অল্প বিশ্রাম নিয়ে আবারো মসজিদ পানে ছুটে যাবে নিজের পাপ মোচনের জন্য বা আল্লাহর রহমত লাভের আশায়। মাগরিব পর্যন্ত জোর চেষ্টা চালাবে নিজেকে ক্ষমা করিয়ে নিতে বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে। অবসর দিন ভেবে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিকে সে হেলায় কাটাবে না।
জুম‘আর দিনে আললাহ তা‘আলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করেছেন। সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামত ও এ জুম‘আর দিনেই কায়েম হবে’।[1] রাসূল (ছাঃ) বলেন, সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুম‘আর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। লোকেরা বলল, হে রাসূল! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে? তিনি বললেন, আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন’।[2] সর্বোপরি জুমআ‘র দিন কেবল ছুটির দিন নয়, এটি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ একটি দিন।
জুম‘আর দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত:
জুম‘আর দিন মূলতঃ ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিন। এই দিনে ইবাদতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এই দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দুনিয়াবী কাজ গুটিয়ে নিয়ে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে মুমিনগণ! যখন জুম‘আর দিন ছালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ (জুম‘আ ৬২/০৯)।
জুম‘আর দিনের গুরুত্ব্ বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ ‘লোকেরা যেন জুম‘আ ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকে; নচেৎ আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন, তারপর তারা অবশ্যই উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে’।[3] তিনি আরো বলেন, مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا، طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ ‘যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা করে পরপর তিন জুম‘আর ছালাত ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরে মোহর বা তালা লাগিয়ে দেবেন’।[4] তিনি আরো বলেন, জুম‘আর ছালাত আদায় করতে আসে না এমন এক দল লোক সম্পর্কে নবী (ছাঃ) বললেন, لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِالنَّاسِ، ثُمَّ أُحَرِّقَ عَلَى رِجَالٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنِ الْجُمُعَةِ بُيُوتَهُمْ ‘আমার ইচ্ছা হয় যে, কোন ব্যক্তিকে ছালাতে ইমামত করার নির্দেশ দেই আর আমি গিয়ে যারা জুম‘আর ছালাত আদায় করতে আসে না, আগুন লাগিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই’।[5]
জুম‘আর দিনের ফযীলত :
জুম‘আর দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ اِلاَّ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ- ‘সূর্য উদিত হয়েছে এমন দিন সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এদিন তাকে সেখান থেকে বের করা হয়। আর ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না জুম‘আর দিন ব্যতীত’।[6] তিনি আরো বলেন, وَمَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا وَهِيَ مُصِيخَةٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، مِنْ حِينِ تُصْبِحُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ شَفَقًا مِنَ السَّاعَةِ، إِلَّا الْجِنَّ وَالْإِنْسَ، ‘মানুষ এবং জ্বিন ব্যতীত এমন কোন প্রাণী নাই, যে প্রাণী জুম‘আর দিন ভোরবেলা হ’তে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে চিৎকার করে না’।[7] জুম‘আর বিশেষ কিছু ফযীলত নিমেণ আলোকপাত করা হ’ল;
১. জুম‘আর দিনে একাধিক সৎ আমলে জান্নাতবাসীর অন্তর্ভুক্তি :
জুম‘আর দিন এত ফযীলতপূর্ণ একটি দিন যে এই দিনে পাঁচটি আমল করতে পারলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতবাসী হিসাবে গণ্য করবেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَمْسٌ مَنْ عَمِلَهُنَّ فِي يَوْمٍ كَتَبَهُ اللَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ: مَنْ عَادَ مَرِيضًا، وَشَهِدَ جَنَازَةً، وَصَامَ يَوْمًا، وَرَاحَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَأَعْتَقَ رَقَبَةً ‘পাঁচটি আমল যে একই দিনে করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার নাম জান্নাতবাসীদের মধ্যে লিখে দিবেন। ১. যে রোগীর সেবা করল, ২. যে কারো জানাযায় উপস্থিত হ’ল, ৩. যে ছিয়াম পালন করল, ৪. জুম‘আর দিনে মসজিদে গেল এবং ৫. একজন দাস মুক্ত করল’।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, خَمْسٌ مَنْ عَمِلَهُنَّ فِي يَوْمٍ كَتَبَهُ اللَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ: مَنْ صَامَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَرَاحَ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَشَهِدَ جِنَازَةً،و عَادَ مَرِيضًا، وَأَعْتَقَ رَقَبَة ‘পাঁচটি আমল যে একই দিনে করবে আল্লাহ তা‘আলা তার নাম জান্নাতবাসীদের মধ্যে লিখে দিবেন; যে জুম‘আর দিনে ছিয়াম পালন করবে, জুম‘আর জন্য মসজিদে যাবে, জানাযায় উপস্থিত হবে, রোগীর সেবা করবে ও একজন দাস মুক্ত করবে’।[9] কোন বর্ণনায় রয়েছে, যে আমলগুলো করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[10]
২. জুম‘আর দিন আল্লাহর নিকট মহান দিন :
জুম‘আর দিন দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিন ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার দিন অপেক্ষা উত্তম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الأَيَّامِ ، وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ ، وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ ، فِيهِ خَمْسُ خِلالٍ : خَلَقَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ ، وَأَهْبَطَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ إِلَى الأَرْضِ ، وَفِيهِ تَوَفَّى اللَّهُ آدَمَ ، وَفِيهِ سَاعَةٌ لا يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا الْعَبْدُ شَيْئًا إِلا أَعْطَاهُ ، مَا لَمْ يَسْأَلْ حَرَامًا ، وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ ، مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلا سَمَاءٍ وَلا أَرْضٍ وَلا رِيَاحٍ وَلا جِبَالٍ وَلا بَحْرٍ إِلا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ ‘ জুম‘আর দিন সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আললাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তাআলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, যমীন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এই জুম‘আর দিনকে ভয় করে’।[11]
৩. জুম‘আ আদায়কারীর জন্য আলোকবর্তিকা :
যারা জুম‘আর ছালাত আদায় করবে তাদের জন্য এই জুম‘আ কিয়ামতের দিন নূর বা আলো হবে। আর এই আলোতে সে পুলছিরাত পার হবে। জুম‘আর দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। জুম‘আয় উপস্থিত হওয়ার যেমন বিশেষ ফযীলত রয়েছে তেমনি এতে উপস্থিত হয়ে ছালাত আদায় করা আল্লাহর নূর অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَبْعَثُ الْأَيَّامَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى هَيْئَتِهَا، وَيَبْعَثُ الْجُمُعَةَ زَهْرَاءَ مُنِيرَةً، أَهْلُهَا يَحُفُّونَ بِهَا كالْعَرُوسِ تُهْدَى، إِلَى كَرِيمها تُضِيءُ لَهُمْ، يَمْشُونَ فِي ضَوْئِهَا، أَلْوَانُهُمْ كالثَّلْجِ بَيَاضًا، وَرِيحُهُمْ تَسْطَعُ كَالْمِسْكِ يَخُوضُونَ فِي جِبَالِ الْكَافُورِ، يَنْظُرُ إِلَيْهِمُ الثَّقَلَانِ لَا يُطْرَفُونَ تَعَجُّبًا حَتَّى يَدْخُلُوا الْجَنَّةَ، لَا يُخَالِطُهُمْ أَحَدٌ إِلَّا الْمُؤَذِّنُونَ الْمُحْتَسِبُونَ - ‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন দিনসমূহকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুম‘আর দিনকে আলোক-উজ্জ্বল ও দ্বীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুম‘আ আদায়কারীগণ আলো দ্বারা বেষ্টিত থাকবে যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে, যা তাকে প্রিয়জনের অভিমুখী করে। তারা আলোক বেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মত উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কাফূরের পর্বত থেকে সিঞ্চিত মিশকের মত। তাদের দিকে জিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফিরাতে না ফিরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সাথে একনিষ্ট ছওয়াব প্রত্যাশী মুয়ায্যিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না’।[12]
৪. জুম‘আ মুসলমানদের জন্য নে‘মত, যা থেকে ইহূদী-নাছারারা বঞ্চিত :
জুম‘আর দিন মুসলমানদের জন্য বড়ই নে‘মত। এতে যত কল্যাণের সমাবেশ ঘটেছে অন্য কোন দিনে ঘটেনি বা ঘটবেওনা। এই দিনের প্রার্থনায় বড় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া য়ায়। কল্যাণকর কিছু চাওয়া হলে তা পাওয়া যায়।
যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَتَانِي جِبْرِيلُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَفِي يَدِهِ مِرْآةٌ بَيْضَاءُ، فِيهَا نَكْتَةٌ سَوْدَاءُ، فَقُلْتُ: مَا هَذِهِ يَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَذِهِ الْجُمُعَةُ يَعْرِضُهَا عَلَيْكَ رَبُّكَ؛ لِتَكُونَ لَكَ عِيدًا وَلِقَوْمِكَ مِنْ بَعْدِكَ، تَكُونُ أَنْتَ الأَوَّلُ، وَتَكُونُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى مِنْ بَعْدِكَ، قَالَ: مَا لَنَا فِيهَا، قَالَ: لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ، لَكُمْ فِيهَا سَاعَةٌ مَنْ دَعَا رَبَّهُ فِيهَا بِخَيْرٍ، هُوَ لَهُ قَسْمٌ إِلا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ، أَوْ لَيْسَ لَهُ بِقَسْمٍ إِلا ادُّخِرَ لَهُ مَا هُوَ أَعْظَمُ مِنْهُ، أَوْ تَعَوَّذَ فِيهَا مِنْ شَرٍّ، هُوَ عَلَيْهِ مَكْتُوبٌ، إِلا أَعَاذَهُ مِنْ أَعْظَمَ مِنْهُ، قُلْتُ: مَا هَذِهِ النَّكْتَةُ السَّوْدَاءُ فِيهَا؟ قَالَ: هِيَ السَّاعَةُ تَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَهُوَ سَيِّدُ الأَيَّامِ عِنْدَنَا، وَنَحْنُ نَدْعُوهُ فِي الآخِرَةِ يَوْمَ الْمَزِيدِ، ‘একদা জিবরীল (আঃ) আমার নিকট আসলেন। তখন তার হাতে একটি স্বচ্ছ সাদা আয়না ছিল। যার মধ্যে একটি কালো দাগ ছিল। আমি বলললাম, হে জিবরীল, এটা কী? তিনি বললেন, এটা জুম‘আ, আপনার রব এটা আপনার নিকট উপস্থাপন করেছেন যাতে এই দিন আপনার ও আপনার পরবর্তী লোকদের জন্য ঈদ হয়ে যায়। পরকালে আপনিই অগ্রগামী আর ইহূদী-নাছারারা পশ্চাৎগামী। তিনি বললেন, এতে আমাদের জন্য লাভ কী? জিবরীল (আঃ) বলেন, এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে। এই দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে, এ সময়ে যে তার রবের নিকট কোন কল্যাণের জন্য দো‘আ করবে আর যদি তার ভাগ্যে তা থাকে তাহলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিবেন। আর যদি ভাগ্যে নাও থাকে তাহলে তার জন্য তার থেকে অনেক মূল্যবান কিছু জমা রাখা হবে। আর যদি সে কোন অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে আর তার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে তার থেকেও বড় বিপদ থেকে তিনি তাকে রক্ষা করবেন। তিনি বললেন, এই কালো দাগটা কীসের? তিনি বললেন, এটি হল কিয়ামত যা জুম‘আর দিনে কায়েম হবে। আমাদের নিকট এটিই শ্রেষ্ঠ দিন। আমরা পরকালে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল মাযীদ’ বলে জানব’।[13]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,أَضَلَّ اللهُ عَنِ الْجُمُعَةِ مَنْ كَانَ قَبْلَنَا فَكَانَ لِلْيَهُودِ يَوْمُ السَّبْتِ وَكَانَ لِلنَّصَارَى يَوْمُ الأَحَدِ فَجَاءَ اللهُ بِنَا فَهَدَانَا اللهُ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ فَجَعَلَ الْجُمُعَةَ وَالسَّبْتَ وَالأَحَدَ وَكَذَلِكَ هُمْ تَبَعٌ لَنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَحْنُ الآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا وَالأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمَقْضِىُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلاَئِقِ- ‘আল্লাহ আমাদের পূর্বের উম্মতগুলিকে পথভ্রষ্ট করেছেন জুম‘আর ব্যাপারে। ইহূদীদের ছিল শনিবার ও নাছারাদের ছিল রবিবার। আর আল্লাহ আমাদেরকে শুক্রবারের জন্য পথপ্রদর্শন করেন। অতএব শুক্রবারের পর শনি ও রবিবার হওয়ার কারণে তারা আমাদের পিছনে পড়ে গেছে। ফলে দুনিয়াতে আমরা পিছনের উম্মত হ’লেও ক্বিয়ামতের দিন আমরা প্রথমে থাকব। সৃষ্টিজগতের সকলের পূর্বে আমাদের হিসাব শেষ করা হবে’।[14]
আরেকটি হাদীছে আরো সুন্দরভাবে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, نَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَنَحْنُ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ، بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِنَا، وَأُوتِينَاهُ مِنْ بَعْدِهِمْ، فَاخْتَلَفُوا، فَهَدَانَا اللهُ لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ، فَهَذَا يَوْمُهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ، هَدَانَا اللهُ لَهُ قَالَ: يَوْمُ الْجُمُعَةِ فَالْيَوْمَ لَنَا، وَغَدًا لِلْيَهُودِ، وَبَعْدَ غَدٍ لِلنَّصَارَى- ‘আমরা সবশেষে আগত উম্মত, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হব সর্বাগ্রবর্তী। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। অথচ তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদেরকে তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারা বিরোধে লিপ্ত হয়ে পড়ল কিন্তু তারা যে সত্য দীনের ব্যাপারে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহ আমাদেরকে সে দিন সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের জন্য আজকে জুম‘আর দিন আর ইয়াহুদীদের জন্য পরের দিন এবং খৃষ্টানদের জন্য তারও পরের দিন’।[15]
৫. কুরবানীর ছওয়াব লাভের দিন :
জুমআ‘র দিন ছওয়াব লাভের দিন। এই দিনে ছালাতের উদ্দেশ্যে আগেভাগে মসজিদে গমনে অসংখ্য ছওয়াব রয়েছে যা সীমাহীন। যেমন রয়েছে বছরব্যাপী ছিয়াম-কিয়ামের ফযীলত তেমনি রয়েছে উট, গরু, দুম্বা কুরবানীর ছওয়াব বা মুরগী ও ডিম দানের ছওয়াব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ وَلاَ تَغْرُبُ عَلَى يَوْمٍ أَفْضَلَ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ وَمَا مِنْ دَابَّةٍ إِلاَّ تَفْزَعُ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ إِلاَّ هَذَيْنِ الثَّقَلَيْنِ مِنَ الْجِنِّ وَالإِنْسِ عَلَى كُلِّ بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ مَلَكَانِ يَكْتُبَانِ الأَوَّلَ فَالأَوَّلَ فَكَرَجُلٍ قَدَّمَ بَدَنَةً وَكَرَجُلٍ قَدَّمَ بَقَرَةً وَكَرَجُلٍ قَدَّمَ شَاةً وَكَرَجُلٍ قَدَّمَ طَائِراً وَكَرَجُلٍ قَدَّمَ بَيْضَةً فَإِذَا قَعَدَ الإِمَامُ طُوِيَتِ الصُّحُفُ- ‘যে দিনের উপর সূর্যোদয় বা অস্ত যায় সে দিনগুলোর মধ্যে জুম‘আর দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষ এবং জ্বিন ব্যতীত এমন কোন প্রাণী নাই, যে প্রাণী জুম‘আর দিন ভোরবেলা হইতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে চিৎকার করে না’।[16]
জুম‘আর দিনে মসজিদের প্রত্যেক দরজায় ফেরেশতাগণ বসে থাকেন, তাঁরা মর্যাদা অনুসারে মানুষের নাম লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। ফলে কতক মানুষ সেই তালিকায় উট কুরবানীকারীর ন্যায়, কতক মানুষ গরু কুরবানীকারীর ন্যায়, কতক মানুষ বকরী কুরবানীকারীর ন্যায়, কতক মানুষ ভেড়া ছাদাকাকারীর ন্যায়, কতক মানুষ চড়ুই/মুরগী ছাদাকাকারীর ন্যায় এবং কতক মানুষ ডিম ছাদাকাকারীর ন্যায়’।[17]
৬. মুসলমানদের তৃতীয় ঈদ :
জুম‘আর দিন মুসলমানদের তৃতীয় ঈদ। যদিও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা জুম‘আর দিন উত্তম। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে জুম‘আর আগমন থাকায় বাহ্যিক দৃষ্টিতে গুরুত্ব কম মনে হয়। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ، جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য’।[18]
৭. প্রতি কদমে এক বছরের ছিয়াম ও তাহাজ্জুদ ছালাতের ছওয়াব লাভ :
জুম‘আর ছালাতের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে আগমনে প্রতি কদমের জন্য এক বছরের ছিয়াম ও এক বছরের তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ غَسَّلَ وَاغْتَسَلَ، وَابْتَكَرَ وَغَدَا، وَدَنَا مِنَ الْإِمَامِ وَأَنْصَتَ، ثُمَّ لَمْ يَلْغُ، كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ كَأَجْرِ سَنَةٍ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا- ‘যে ব্যক্তি গোসল করল এবং গোসল করালো, সকাল সকাল মসজিদে আসল, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনল এবং নিশ্চুপ থাকল তার জন্য প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের (নফল) ছিয়াম ও ছালাতের ছওয়াব রয়েছে’।[19] ওয়াকী বলেন, গোসল করল এবং করালো- শব্দের অর্থ নিজে গোসল করল এবং স্ত্রীকে গোসল করালো।
৮. কবরের আযাব বা ফিৎনা থেকে মুক্তি :
জুম‘আর দিনের বিশেষ ফযীলতের কারণে কেউ এর দিনে বা রাতে মারা গেলে সে কবরের ফিৎনা থেকে রক্ষা পাবে। যেখানে নবী-রাসূল ও শহীদগণ ব্যতীত প্রত্যেক মানুষই কবরের ফিৎনায় নিপতিত হবে। কিন্তু জুম‘আর দিনের বিশেষ ফযীলতের কারণে এই দিনে মারা গেলে সে কবরের ফিৎনা থেকে রক্ষা পেতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلا وَقَاهُ اللَّهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ ‘যদি কোন মুসলিম জুম‘আর দিন অথবা জুম‘আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিৎনা থেকে রক্ষা করবেন’।[20]
৯. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ছালাত :
জামা‘আতে ছালাত আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষতঃ ফজর ও এশার ছালাত জামা‘আতে আদায়ের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এই জামা‘আত যদি জুম‘আর দিনের ফজরের ছালাতে হয় তাহলে সেই ছালাত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ছালাত। যেমন ইবনু ওমর (রাঃ) হিমরান ইবনু আবানকে বললেন,مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ فِي جَمَاعَةٍ؟ قَالَ: قَدْ صَلَّيْتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِي جَمَاعَةِ الصُّبْحِ، قَالَ: أَوَمَا بَلَغَكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَفْضَلُ الصَّلَوَاتِ عِنْدَ اللهِ صَلَاةُ الصُّبْحِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِي جَمَاعَةٍ- ‘তোমাকে জামা‘আতে ছালাত আদায়ে কীসে বাধা দিল? সে বলল, আমি জুম‘আর দিনে ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করেছি। তখন তিনি বললেন, তোমার নিকট কি একথা পৌঁছেনি যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ছালাত জুম‘আর দিনে জামা‘আতে আদায়কৃত ফজরের ছালাত’।[21]
১০. গুনাহ মাফের দিন :
জুম‘আর দিন হ’ল গুনাহ মাফের দিন। মানুষ নিজের অজান্তে অনেক ছোট ছোট গুনাহ করে ফেলে। জুম‘আর দিনে বিশেষ ফযীলতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা এই গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ এবং এক রামাযান থেকে আরেক রামাযান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফফারা হয়ে যাবে যদি কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকে।[22]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا- ‘যে ব্যক্তি ওযূ করবে এবং উত্তমভাবে ওযূ করবে, তারপর জুম‘আর ছালাতে যাবে, চুপচাপ খুৎবা শুনবে, তাহলে তার এই জুম‘আ হতে অপর জুম‘আ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলাবালি নাড়ল, সে অর্থহীন কাজ করল’। [23]
১১. দো‘আ কবূলের দিন :
জুম‘আর দিন দো‘আ কবূলের দিন। এই দিনে একটি মুহূর্ত আছে যখন দো‘আ করলে আল্লাহ সে দো‘আ কবূল করেন। এই সময়ের ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকলেও বিশুদ্ধ মতে সময়টি আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ فِي الْجُمُعَةِ لَسَاعَةً، لَا يُوَافِقُهَا مُسْلِمٌ، قَائِمٌ يُصَلِّي، يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا، إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَقَالَ بِيَدِهِ: يُقَلِّلُهَا يُزَهِّدُهَا- ‘জুম‘আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন কোন মুসলিম বান্দা ছালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই তিনি তাকে তা দান করেন। কুতায়বা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আরো আছে, তিনি তার হাত দ্বারা মুহূর্তটির স্বল্পতার প্রতি ইঙ্গিত করেন’।[24]
১২. দো‘আ কবুলের সময় :
দো‘আ কবুলের সময় নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে ছাহাবায়ে কেরামের অধিকাংশই আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তবে যেহেতু ইখতিলাফ আছে সেজন্য এই দিনের সময়গুলোতে দো‘আ করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে থাকবে। যেমন হাদীছে এসেছে, আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,قَالَ لِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ: أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ؟ قَالَ: قُلْتُ: نَعَمْ، سَمِعْتُهُ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الْإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلَاةُ- আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তোমার পিতাকে রাসূল (ছাঃ) থেকে জুম‘আর দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে হাদীছ বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ইমামের বসা থেকে ছালাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহূর্তটি নিহিত’।[25]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَوْمُ الْجُمُعَةِ ثِنْتَا عَشْرَةَ سَاعَةً، لَا يُوجَدُ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ شَيْئًا، إِلَّا أَتَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ ‘জুম‘আর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোন মুসলিম আল্লাহর নিকট যে দো‘আ করে আল্লাহ তা-ই কবুল করেন। তোমরা এই মুহূর্তটিকে আছরের পরে অনুসন্ধান কর’।[26] অন্য আরেকটি হাদীছে দো‘আর পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন,قُلْتُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ: إِنَّا لَنَجِدُ فِي كِتَابِ اللَّهِ: فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ سَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُؤْمِنٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا شَيْئًا إِلَّا قَضَى لَهُ حَاجَتَهُ . قَالَ عَبْدُ اللهِ: فَأَشَارَ إِلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوْ بَعْضُ سَاعَةٍ ، فَقُلْتُ: صَدَقْتَ، أَوْ بَعْضُ سَاعَةٍ. قُلْتُ: أَيُّ سَاعَةٍ هِيَ؟ قَالَ: هِيَ آخِرُ سَاعَاتِ النَّهَارِ . قُلْتُ: إِنَّهَا لَيْسَتْ سَاعَةَ صَلَاةٍ، قَالَ: بَلَى. إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا صَلَّى ثُمَّ جَلَسَ، لَا يَحْبِسُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ، فَهُوَ فِي الصَّلَاةِ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহর কিতাবে জুমু‘আহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা ছালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আব্দুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার দিকে ইশারা করে বললেন, এক ঘণ্টা সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টা সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেন, সেটি হ’ল দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা ছালাতের সময় নয়? তিনি বলেন, হ্যাঁ। মুমিন বান্দা এক ছালাত শেষ করে বসে বসে অন্য ছালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে ছালাতের মধ্যেই থাকে’।[27]
জুম‘আর দিনে আমাদের করণীয়
জুম‘আর দিন ও রাত উভয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য রাতে ঘুমানোর সময় সূরা মুলক পাঠ করে ঘুমাবে। এরপরে ফজরের সময় উঠে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে। অতঃপর মসজিদেই যিকির-আযকার করে সূর্যোদয় হলে যোহা বা ইশরাকের ছালাত আদায় করবে। এরপর বাসা-বাড়িতে সকালের নাশতা করে আবার জুম‘আর মসজিদে রওয়ানা দিবে। মসজিদে বা বাড়িতে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে। অতঃপর সাধ্যানুযায়ী ইমামের খুৎবার পূর্ব পর্যন্ত নফল ছালাত, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ বা আল্লাহর যিকির-আযকার করতে থাকবে। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, وَكَانَ يرى فِي الْقرن الأول بعد طُلُوع الْفجْر الطرقات مَمْلُوءَة من النَّاس يَمْشُونَ فِي السرج ويزد حمون فِيهَا الى الْجَامِع كأيام العيد حتى اندرس ذلك فقيل أول بدعة حدثت في الإسلام ترك البكور إلى الجامع ‘ইসলামের প্রথম যুগে ফজর উদয় হওয়ার পরেই লোকদের ভিড়ে রাস্তাগুলো ভরে যেত। তারা ঈদের দিনের ন্যায় দিনের আলোতে হেঁটে জুম‘আ মসজিদে ভিড় জমাত। বর্তমানে তা উঠে গেছে। বলা হয়ে থাকে, ইসলামে প্রথম যে বিদ‘আত সংঘটিত হয়েছে তা হ’ল- জুম‘আ মসজিদে সকাল সকাল গমনাগমন ছেড়ে দেওয়া’।[28]
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, وَهَذَا هُوَ الْمَأْثُورُ عَنْ الصَّحَابَةِ كَانُوا إذَا أَتَوْا الْمَسْجِدَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يُصَلُّونَ مِنْ حِينِ يَدْخُلُونَ مَا تَيَسَّرَ فَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي عَشْرَ رَكَعَاتٍ وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَقَلَّ مِنْ ذَلِكَ. ‘ছাহাবীগণ থেকে এটাই বর্ণিত হয়েছে যে, জুম‘আর দিনে তারা যখন মসজিদে আসতেন তাতে প্রবেশ করার পর থেকে সাধ্যমত ছালাত আদায় করতে থাকতেন। তাদের কেউ দশ রাক‘আত আদায় করতেন, কেউ বারো রাক‘আত পড়তেন, কেউ আট রাক‘আত পড়তেন, কেউ আবার তার থেকেও কম পড়তেন’।[29]
আর জুম‘আর পরে দুই, চার বা ছয় রাক‘আত সুন্নাত ছালাত মসজিদে বা বাড়িতে আদায় করবে। অতঃপর দুপুরের খাবার শেষে হালকা বিশ্রাম করে আছরের ছালাতের জন্য প্রস্ত্ততি নিবে। আছরের ছালাত শেষে মসজিদে বসে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন ইবাদত ও মুনাজাতে লিপ্ত থাকবে। এছাড়াও জুম‘আর দিনে নিম্নোক্ত আমলগুলো করা মুস্ততাহাব।
১. ফজরের ছালাতে সূরা সাজদা ও দাহর পাঠ :
ইমাম জুম‘আর দিন ফজরের ছালাতে সূরা সাজদা ও দাহর পাঠ করবে। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, أَنَّ النبي صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ الم تَنْزِيلُ السجدة وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর দিন ফজরের ছালাতে আলিফ-লাম-মীম-তানযীল (সূরা হামীম আস-সাজদা) এবং হাল আতা আলাল ইনসান (সূরা দাহর) সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন’।[30]
২. রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَكْثِرُوا الصَّلاَةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، فَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا- তোমরা জুম‘আর দিন ও রাতে আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ কর। কারণ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করেন’।[31]
৩.গোসল করা :
জুম‘আর দিনে গোসল করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। অনেক বিদ্বান জুম‘আর দিনে গোসল করাকে ওয়াজিব বলেছেন। এজন্য মসজিদে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে বের হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَأَنْ يَسْتَنَّ، وَأَنْ يَمَسَّ طِيبًا إِنْ وَجَدَ ‘প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুম‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব। আর সে মেসওয়াক করবে এব সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করবে’।[32]
৪. সুগন্ধি ব্যবহার, গোসল করা ও মেসওয়াক করা :
জুমআ‘র দিনে সকাল সকাল গোসল করে সুন্দর জামা পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করবে, উত্তম পোশাক পরবে, তার কাছে থাকলে সুগন্ধি লাগাবে, তারপর মসজিদে গমন করবে। কিন্তু মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করবে না। এরপর যথাসাধ্য ছালাত আদায় করবে, ইমাম খুতবার জন্য হুজরা হতে বের হবার পর থেকে ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকবে, তাহলে এ জুমআ‘ হতে পূর্বের জুমআ‘ পর্যন্ত তার যত গুনাহ হয়েছে তা তার কাফফারা হয়ে যাবে’।[33]
৫. সূরা কাহফ তেলাওয়াত : জুম‘আর দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। কারণ এতে অন্তর আলোকিত হবে। তাছাড়া এই সূরাটি তার জন্য নূর হবে, যার আলোতে সে পুলছিরাত অতিক্রম করতে পারবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ" ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুম‘আর মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে’।[34] আরেকটি হাদীছে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ الْعَتِيقِ- ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য তার ও বাইতুল আতিক্ব (কা‘বা)-এর মধ্যবর্তী জায়গা নূরে আলোকিত হয়ে যাবে’।[35]
৬. জুম‘আর ছালাতের জন্য সকাল সকাল প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা :
জুম‘আর ছালাতের জন্য ভোর বেলায় প্রস্ত্ততি গ্রহণ করবে। গোসল করে সুগন্ধি মেখে মসজিদ পানে চলে যাবে। এর যেমন বিশেষ ফযীলত আছে তেমনি এর মাধ্যমে মসজিদে বসে বিভিন্ন ইবাদত পালনের সুযোগ হবে। জুম‘আর দিন কল্যাণ লাভের দিন। আর এই কল্যাণ লাভে বিলম্ব করা যাবে না। প্রতি জুম‘আকে গণীমত মনে করে ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য (আলে ইমরান ৩/১৩৩)।
উপসংহার : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জুম‘আ বা শুক্রবারের দিন ছুটির দিন। অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে জুম‘আর দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত অনুধাবন করে ছুটি রাখা হয়। যাতে করে মুসলমানেরা তাদের এই দিনের বিশেষ ফযীলত অর্জন করতে পারে। আর বিভিন্ন ইবাদত পালন ও দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। সাথে সাথে নিজেদের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। কিন্তু মানুষ এই দিনটিকে ইবাদতের ক্ষেত্র হিসাবে গ্রহণ না করে অবসর আনন্দের দিন হিসাবে গ্রহণ করেছে। যদিও শারঈ দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল এই দিনের সূচনা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের কর্মসূচী নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যারা আল্লাহর কর্মসূচী গ্রহণ করবে তারা সফলকাম হবে। আর যারা অলসতা ও অবহেলা করে তা বর্জন করবে, তারা ব্যর্থ হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের পথে পরিচালিত হয়ে সফলকাম হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
[1]. মুসলিম হা/৮৫৪; মিশকাত হা/১৩৫৬।
[2]. আবুদাউদ হা/১০৪৭; নাসাঈ হা/১৩৭৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৭৪।
[3]. মুসলিম হা/৮৬৫; মিশকাত হা/১৩৭০।
[4]. আবুদাউদ হা/১০৫২; মিশকাত হা/১৩৭১; ছহীহুত তারগীব হা/৭২৭।
[5]. মুসলিম হা/৬৫২; মিশকাত হা/১৩৭৮।
[6]. মুসলিম হা/৮৫৪; মিশকাত হা/১৩৫৬।
[7]. ইবনু হিববান হা/২৭৭২; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯৭।
[8]. ইবনু হিববান হা/২৭৭১; ছহীহাহ হা/১০২৩।
[9]. আবু ইয়া‘লা হা/১০৪৪; ছহীহাহ হা/১০২৩।
[10]. আবু ইয়া‘লা হা/১০৪৩; ছহীহাহ হা/১০২৩-এর আলোচনা।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮৪; মিশকাত হা/১৩৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৭৯।
[12]. হাকেম হা/১০২৭; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৩০; ছহীহাহ হা/৭০৬; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯৮।
[13]. মুসনাদুল বাযযার হা/৭৫২৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৮৭৭১; ছহীহুত তারগীব হা/৩৭৬১।
[14]. মুসলিম হা/৮৫৬; নাসাঈ হা/১৩৬৮; আবু হুরায়রা ও হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হ’তে; ইবনু কাছীর।
[15]. বুখারী হা/৮৯৬; মুসলিম হা/৮৫৫; মিশকাত হা/১৩৫৪।
[16]. ইবনু হিববান হা/২৭৭২; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯৭।
[17]. আহমাদ হা/৭৬৭৩; নাসাঈ হা/১৩৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/৭০৮।
[18]. ইবনু মাজাহ হা/১০৯৮; ছহীহুত তারগীব হা/৭০৭।
[19]. আবুদাউদ হা/৩৪৫; নাসাঈ হা/১৩৯৮; আহমাদ হা/১৬২১৭, ১৭০০২; মিশকাত হা/১৩৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯৩।
[20]. আহমাদ, তিরমিযী হা/১০৭৪; মিশকাত হা/১৩৬৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫৬২, অবশ্য এই হাদীছের সনদকে কেউ কেউ যঈফ বলেছেন।
[21]. বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩০৪৫; ছহীহাহ হা/১৫৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১১১৯।
[22]. মুসলিম হা/২৩৩; মিশকাত হা/৫৬৪।
[23]. মুসলিম হা/৮৫৭; মিশকাত হা/১৩৮৩।
[24]. মুসলিম হা/৮৫২; মিশকাত হা/১৩৫৭।
[25]. মুসলিম হা/৮৫৩; মিশকাত হা/১৩৫৮।
[26]. আবুদাউদ হা/১০৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৯০।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/১১৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/৭০২।
[28]. ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/১৮২’ আবু শামাহ, আল বায়ে‘ছ ৯৭ পৃ.।
[29]. মাজমূউল ফাতাওয়া ২৪/১৮৯ পৃ.।
[30]. বুখারী হা/৮৯১; মুসলিম হা/৮৭৯।
[31]. বায়হাকী, ছহীহাহ হা/১৪০৭।
[32]. বুখারী হা/৮৮০; মিশকাত হা/৫৩৮।
[33]. আবুদাউদ হা/৩৪৩; মিশকাত হা/১৩৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/৬৮৮।
[34]. হাকেম হা/৩৩৯২; মিশকাত হা/২১৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩৬।
[35]. দারেমী হা/৩৪০৭; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩৬।