শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছের রাজনৈতিক জীবনের একটি অধ্যায়
আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কুরায়শী
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী 373 বার পঠিত
[বাঙ্গালী মুসলিম পুনর্জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলেম, সুসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ১৮৭৫ সালের চট্রগ্রাম যেলার চন্দনাইশ উপযেলার বরমা-আড়ালিয়ার চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি ‘আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালার’ (১৯১৩) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে ও মুসলমানদের ঐতিহ্য সচেতন করতে এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় জাগরণে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনুভব করে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন।
তিনি হাবলুল মাতীন (১৯১২), মোহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনুর (১৯১১) ও বাসনা (১৯০৪) পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি দৈনিক সোলতান, দৈনিক আমীর ও মাসিক আল-এসলাম প্রকাশ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা। ছোট-বড় মিলিয়ে তিনি ৪২টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচনাবলীর মধ্যে অন্যতম হ’ল ভারতে ইসলাম প্রচার (১৯১৫), সমাজ সংস্কার (১৯২৩), ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমান (১৯১১-১২), কুরআনে স্বাধীনতার বাণী (১৯৩৯), কনস্টান্টিনোপল (১৯১২), ভারতের মুসলমান সভ্যতা (১৯১৪), আত্মজীবনী প্রভৃতি। তাঁর লেখনীতে ইসলামের সৌন্দর্য, মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কীর্তি ও গৌরব ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস দীপ্তিমান। ১৯৫০ সালের ২৪শে অক্টোবর ৭৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা ইসলামাবাদী লিখিত ‘সমাজ-সংস্কার’ শীর্ষক একটি মূল্যবান প্রবন্ধ ‘আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা’র মুখপত্র ‘আল-এসলাম’ পত্রিকার ৪র্থ বর্ষ, ১০ সংখ্যা, মাঘ ১৩২৫ (১৯১৮), পৃ. ৫৪৫-৫০ প্রকাশিত হয়। এ প্রবন্ধে মাওলানা ইসলামাবাদী পীরপূজা, মাযারপূজা ও কবরপূজাকে পৌত্তলিকতার সাথে তুলনা করেছেন। প্রবন্ধটির ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় ‘তাওহীদের ডাক’ পাঠকদের জন্য প্রবন্ধটি পত্রস্থ করা হল।- নির্বাহী সম্পাদক]
‘আমরা উচ্চ গলা করিয়া বলিয়া থাকি, এছলাম জগতে বোত-পোরস্তি, পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কার দূর করিবার জন্যই আসিয়াছি, কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে আমরা কি প্রত্যেক পীরের কবরকে এক একটি প্রতিমা স্বরূপ দাঁড় করিয়া পূজা করতেছি না? কবরে ছেজদা করা, কবরে সমাহিত মৃত ব্যক্তির নিকট বরপ্রার্থনা, পীরের নামে মানৎ করা, পীরের দরগাহে নজর-নেয়াজ ছড়ান ইহাপেক্ষা পৌত্তলিকতা আর অধিক কি হইতে পারে?....
......এসলাম ধর্মে পৌরহিত্য প্রথা নাই। .... প্রত্যেক মোছলমান কোরআন পাঠ করিতে, নামাজ রোজা করিতে, তছবিহ তেলাওৎ করিতে পারে, প্রত্যেক মোছলমান খোদার নিকট যে কোন বিষয় মোনাজাৎ করিতে পারে। তজ্জন্য পীর মোর্শেদের মুখাপেক্ষী হইবার কোন প্রয়োজন নাই।...
আজকাল কেবল পুরুষ নহে, বরং পীরের দরগাহে শিন্নী ও নেয়াজ ছড়াইবার জন্য, পীরের কবরে বর প্রার্থনা করিবার জন্য হাজার হাজার স্ত্রীলোক যাইয়া থাকে। কবরে যে ওরছের নামে বার্ষিক মেলা বসে তাহাতে মোছলমান স্ত্রীলোকের ঠেলাঠেলিতে পুরুষের জান প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। এরূপ মেলায় বড় বড় পীর মোর্শেদগণ স্ব স্ব দলবল সহ হাজের হইয়া তওয়াএফ ও বেশ্যার নাচ গান দর্শন ও শ্রবণে মহাপুণ্য সঞ্চয় করিয়া আসেন। ...... এখন এই বেআদতী দলের বিরুদ্ধে, এই গোরপূজক, পীরপূজক, দুর্গাপূজক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ফরজ হইয়া গিয়েছে।’
[গৃহীত : বাংলা একাডেমী প্রকাশিত (১৯৯৫) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সংকলিত গবেষণাগ্রন্থ ‘মুসলিম সম্পাদিত বাংলা সাময়িকপত্রে ধর্ম ও সমাজ-চিন্তা’, পৃ.৭৭]