স্ত্রীর প্রতি সুন্নাত

যহুরুল ইসলাম 1314 বার পঠিত

ভূমিকা : ইসলামী শরী‘আতে পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল হলেও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর রয়েছে ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু অধিকাংশ পরিবারে মনে হয় যেন সংসারে স্ত্রীর কোন মূল্যই নেই, স্বামীর সংসারে মুখ বুজে খেটে খাওয়ার জন্যই তার জন্ম। যখন সমাজে এই চিন্তা প্রবল হয়, তখনই কাঙ্খিত সুখের সংসার অনাকাঙ্খিত বিপর্যয়ে পতিত হয়। এই বিপর্যয় থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শ গ্রহণই একমাত্র পথ। নিম্নে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর সুন্নাত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

স্ত্রীর কাজে সহায়তা করা :

হাদীছে এসেছে, عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ مَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ قَالَتْ كَانَ يَكُونُ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ ـ تَعْنِي خِدْمَةَ أَهْلِهِ ـ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ-‏ আসওয়াদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (ছাঃ) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গকে সহায়তা করতেন। আর ছালাতের সময় হ’লে ছালাতের জন্য বের হতেন’।[1]

হিশাম ইবনে উরওয়া (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (ছাঃ) তার ঘরে অবস্থানকালে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তিনি তার জুতা মেরামত করতেন এবং লোকজন নিজ ঘরে সাধারণত যা করে থাকে, তিনিও তাই করতেন’।[2]

স্ত্রীর রান্না করা খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা :

প্রতিটি মানুষের কাজে দোষ-ত্রুটি থাকে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এ বিষয়ে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ إِنْ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَإِلَّا تَرَكَهُ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) কখনো কোন খাদ্যকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেতেন না হলে ছেড়ে দিতেন’।[3]

স্ত্রীর উপর অযথা রাগ না করে তার মন বোঝার চেষ্টা করা :

হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন,إِنِّي لأَعْلَمُ إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، وَإِذَا كُنْتِ عَلَىَّ غَضْبَى.‏ قَالَتْ فَقُلْتُ مِنْ أَيْنَ تَعْرِفُ ذَلِكَ فَقَالَ ‏ أَمَّا إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً فَإِنَّكِ تَقُولِينَ لاَ وَرَبِّ مُحَمَّدٍ، وَإِذَا كُنْتِ غَضْبَى قُلْتِ لاَ وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ ‘আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশী থাক এবং কখন রাগান্বিত হও’। আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে পারেন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারায থাকলে বল, ইব্রাহীম (আঃ)-এর রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি’।[4]

স্ত্রীর নিকট থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকা :

হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,اسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيْمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ- তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নছীহত করতে থাক’।[5]

স্ত্রীদের ভরণপোষণ করা :

হাদীছে এসেছে, عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ- হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমন্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হ’লে ঘরের মধ্যেই রাখবে’।[6]

স্ত্রীকে মারধর না করা :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لنَفسِهِ شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلَا امْرَأَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمُ مِنْ صَاحِبِهِ إِلَّا أَنْ يُنْتَهَكَ شَيْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ فينتقم لله- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থা ছাড়া কখনো কাউকেও স্বীয় হাতে প্রহার করেননি, নিজের স্ত্রীগণকেও না, সেবককে না। আর যদি তার দেহে বা অন্তরে কারো পক্ষ হ’তে কোন প্রকারের কষ্ট বা ব্যাথা লাগত, তখন নিজের ব্যাপারে সেই লোক হ’তে কোন প্রকারের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে বসত, তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে শাস্তি দিতেন’।[7]

অপর হাদীছে এসেছে, ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَادِمًا لَهُ وَلَا امْرَأَةً وَلَا ضَرَبَ بِيَدِهِ شَيْئًا ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি’।[8]

স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -এর প্রতি সর্বপ্রথম অহির সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা প্রভাতের আলোর মতোই ফলত। এরপর তাঁর কাছে নির্জনতা পসন্দনীয় হ’তে লাগল। তাই তিনি একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত নিজের পরিবার পরিজনদের কাছ হ’তে বিচ্ছিন্ন হয়ে হেরা পর্বতের গুহায় নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতে লাগলেন। আর এ উদ্দেশে তিনি কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতেন। তা শেষ হয় গেলে তিনি খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে আবার ঐ পরিমাণ কয়েক দিনের জন্য কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকাকালে তাঁর কাছে সত্য (অহি) আসলো।

জিবরীল (আঃ) সেখানে এসে তাঁকে বললেন, ’পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি তো পড়তে পারি না। তিনি বলেন, মালাক (ফেরেশতা) তখন আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যে, তাতে আমি প্রবল কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন!’ আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তখন দ্বিতীয়বার তিনি আমাকে ধরে আবারও খুব জোরে চাপলেন। এবারও ভীষণ কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’ এবারও আমি বললাম, আমি পড়তে পারি না। তিনি বলেন, মালাক (ফিরিশতা) তৃতীয়বার আমাকে ধরে দৃঢ়ভাবে চেপে ধরলেন। এবারও আমি বিশেষভাবে কষ্ট পেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, (অর্থাৎ) ‘আপনার প্রভুর নামে পড়ুন। যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত হ’তে সৃষ্টি করেছেন। (পড়ুন!) আর আপনার প্রভু সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। তিনিই কলম দ্বারা বিদ্যা শিখিয়েছেন। তিনি মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানত না’ (আলাক ৯৬/১-৫)

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত আয়াতগুলো আয়ত্ত করে ফিরে আসলেন। তখন তাঁর অন্তর কাঁপছিল। তিনি খাদীজার কাছে এসে বললেন, চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। তখন তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় কেটে গেলে তিনি খাদীজার কাছে ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কাবোধ করছি। তখন খাদীজা (সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ়তার সাথে) বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, এরূপ কখনো হ’তে পারে না। আল্লাহ তা’আলা কখনোই আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল আচরণ করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, আপনি অক্ষমদের দায়িত্ব বহন করেন। নিঃস্বদেরকে সাহায্য করেন, অতিথিদের মেহমানদারি করেন এবং প্রকৃত বিপদগ্রস্তদেরকে সাহায্য করেন।

এরপর খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সাথে নিয়ে আপন চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফাল-এর কাছে চলে গেলেন। (পরবর্তীতে ওয়ারাকাহ্ ‘ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন) খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! তোমার ভাতিজা কি বলে তা একটু শুন! তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা দেখেছিলেন তা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। ঘটনা শুনে ওয়ারাকা তাকে বললেন, এ তো সেই রহস্যময় মালাক (জিবরীল), যাকে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। হায়! আমি যদি তোমার নবুয়তকালে বলবান যুবক থাকতাম। হায়! আমি যদি সেই সময় জীবিত থাকতাম যখন তোমার সম্প্রদায় তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দেবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তারা কি সত্যই আমাকে বের করে দিবে? ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে দুনিয়াতে এসেছ, অনুরূপ কোন কিছু নিয়ে যে লোকই এসেছে, তার সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। আমি তোমার সে যুগ পেলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমাকে সাহায্য করব। এর অব্যাহতির পর ওয়ারাকা মৃত্যুবরণ করলেন। এদিকে অহির আগমনও বন্ধ হয়ে গেল’।[9]

স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়া :

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسٍ، قَالَ بَلَغَ صَفِيَّةَ أَنَّ حَفْصَةَ، قَالَتْ بِنْتُ يَهُودِيٍّ ‏‏ فَبَكَتْ فَدَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهِيَ تَبْكِي فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ ‏.‏ فَقَالَتْ قَالَتْ لِي حَفْصَةُ إِنِّي بِنْتُ يَهُودِيٍّ ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏‏ إِنَّكِ لاَبْنَةُ نَبِيٍّ وَإِنَّ عَمَّكِ لَنَبِيٌّ وَإِنَّكِ لَتَحْتَ نَبِيٍّ فَفِيمَ تَفْخَرُ عَلَيْكِ‏.‏ ثُمَّ قَالَ‏ اتَّقِي اللَّهَ يَا حَفْصَةُ- আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, ছাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর কানে পৌঁছে যে, হাফসা (রাঃ) তাকে ইয়াহুদীর মেয়ে বলে ঠাট্টা করেছেন। তাই তিনি কাঁদছিলেন। তার কাঁদা অবস্থায় নবী (ছাঃ) তার ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বললেন, তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, হাফসা আমাকে ইয়াহূদীর মেয়ে বলে তিরস্কার করেছেন। নবী (ছাঃ) বললেন, অবশ্যই তুমি একজন নবীর কন্যা তোমার চাচা অবশ্যই একজন নবী এবং তুমি একজন নবীর সহধর্মিণী। অতএব কিভাবে হাফসা তোমার উপরে অহংকার করতে পারে? তারপর তিনি বললেন, হে হাফসা! আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর’।[10]

স্ত্রীর সাথে খেলা করা, গল্প করা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বসা ছিলেন। সে সময় আমরা একটা শোরগোল ও শিশুদের হৈচৈ শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উঠে গিয়ে দেখলেন, এক হাবশী নারী নেচেকুদে খেলা দেখাচ্ছে আর শিশুরা তার চারদিকে ভীড় জমিয়েছে। তিনি বললেন, হে ‘আয়েশা! এসো এবং প্রত্যক্ষ কর। অতএব আমি গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাঁধের উপর আমার চিবুক রেখে খেলা প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। আমার চিবুক ছিল তার মাথা ও কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায়। (কিছুক্ষণ পর) আমাকে তিনি বললেন, তুমি কি তৃপ্ত হওনি, তোমার কি তৃপ্তি পূর্ণ হয়নি। তিনি বলেন, আমি না, না বলতে থাকলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কতটুকু খাতির করেন তা পর্যবেক্ষণ করা। ইত্যবসরে উমর (রাঃ) আবির্ভূত হন এবং মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত লোক তার কাছ হ’তে সটকে পড়ে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি দেখলাম জীন ও মানববেশধারী শয়তানগুলো উমারকে দেখেই সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারপর আমি ফিরে এলাম’।[11]

স্ত্রীকে উপহার দেওয়া :

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ، وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ، أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِي أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এক দীনার তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করো। এক দীনার তুমি গোলাম আযাদ করার জন্য খরচ করো। এসব দীনারের মধ্যে ছওয়াবের দিক দিয়ে সবচেয়ে মর্যাদাবান হ’ল যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করো’।[12]

স্ত্রীর কোলে আবদ্ধ হওয়া :

নবী (ছাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন একখানা হার হারিয়ে গেল। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন। আর লোকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবু বক্‌র (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, আয়েশা কী করেছেন আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূলুল্লাহ‌ (ছাঃ)-এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাঁদের সাথেও পানি নেই। আবু বক‌র (রাঃ) আমার নিকট আসলেন, তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমার উরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবু বক‌র (রাঃ) বললেন, তুমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছ! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। এবং তাঁদের সাথেও পানি নেই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উসায়দ ইব্‌নু হুযায়্‌র (রাঃ) বললেন, হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমি যে উটে ছিলাম তাকে দাঁড় করালে দেখি আমার হারখানা তার নীচে পড়ে আছে’।[13]

একই পাত্র থেকে গোসল করা :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ مِنْ قَدَحٍ يُقَالُ لَهُ الْفَرَقُ- ‘আমি ও নবী (ছাঃ) একই পাত্র (কাদাহ) হ’তে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো’।[14]

দান-ছাদাক্বাহ করতে উপদেশ দেয়া :

হাদীছে এসেছে,عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا ذَكَرَتْ عِدَّةً مِنْ مَسَاكِينَ - قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ غَيْرُهُ أَوْ عِدَّةً مِنْ صَدَقَةٍ - فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ أَعْطِي وَلاَ تُحْصِي فَيُحْصِيَ عَلَيْكِ- আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি মিস্‌কীনদের সংখ্যা গণনা করলেন। ইমাম আবু দাউদ বলেন, অন্য রাবীর বর্ণনায় আছে, তিনি ছাদাক্বার পরিমাণ গণনা করলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি দান কর এবং তা গণনা কর না। কেননা (যদি তুমি এইরূপ কর) গুনে গুনে প্রাপ্ত হবে’।[15]

স্ত্রীর সাথে গল্প করা, কথাবার্তা বলা :

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَضَى صَلَاتَهُ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ نَظَرَ فَإِنْ كُنْتُ مُسْتَيْقِظَةً حَدَّثَنِي وَإِنْ كُنْتُ نَائِمَةً أَيْقَظَنِي، وَصَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْمُؤَذِّنُ فَيُؤْذِنَهُ بِصَلَاةِ الصُّبْحِ، فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ ثُمَّ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلَاةِ- আয়েশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর শেষ রাতের ছালাত শেষ করার পর আমাকে জাগ্রত দেখলে আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন। যদি আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তাহ’লে তিনি আমাকে জাগিয়ে দিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুওয়াযযিন আসা পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। মুওয়াযযিন এসে ফজরের ছালাতের সংবাদ দিলে তিনি সংক্ষেপে দু’ রাক’আত ছালাত আদায় করে জামা‘আতের ছালাতের জন্য বের হতেন’।[16]

আয়েশা (রাঃ) থেকে এ হাদীছটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ فَإِنْ كُنْتُ مستيقظة حَدثنِي وَإِلَّا اضْطجع- নবী (ছাঃ) ফজরের সুন্নাত ছালাত (ঘরে) আদায়ের পর যদি আমি সজাগ হয়ে উঠতাম তাহ’লে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আর আমি ঘুমে থাকলে তিনি শয়ন করতেন’।[17]

স্ত্রীর প্রশংসা করা :

হাদীছে এসেছে, ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্য থেকে খাদীজা (রাঃ)-এর চেয়ে অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি অধিক হিংসা করিনি। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রায় তাঁর কথা স্মরণ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন। তাছাড়াও রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-কে অহির মাধ্যমে তাঁকে [খাদীজা (রাঃ)]-কে জান্নাতের মধ্যে একটি মতির প্রাসাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য জ্ঞাত করানো হয়েছিল’।[18]

স্ত্রীকে চুম্বন করা :

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لإِرْبِهِ- আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তার প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে অধিক সক্ষম ছিলেন’।[19]

রাতে ছালাত আদায় করার সময় স্ত্রীকে জাগিয়ে তোলা :

হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي وَأَنَا رَاقِدَةٌ مُعْتَرِضَةٌ عَلَى فِرَاشِهِ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يُوتِرَ أَيْقَظَنِي فَأَوْتَرْتُ- নবী (ছাঃ) ছালাত আদায় করতেন আর আমি তখন তাঁর বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। বিতর পড়ার সময় তিনি আমাকেও জাগাতেন, তখন আমিও বিতর পড়তাম’।[20]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে রাত জেগে ছালাত আদায় করে; অতঃপর সে স্বীয় স্ত্রীকে ঘুম হ’তে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম হ’তে উঠতে না চায় তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আল্লাহ ঐ মহিলার উপর রহম করুন যে রাতে উঠে ছালাত আদায় করে এবং স্বীয় স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম হ’তে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয়’।[21]

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় চুম্বন করা :

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَبَّلَ بَعْضَ نِسَائِهِ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ قَالَ قُلْتُ مَنْ هِيَ إِلاَّ أَنْتِ قَالَ فَضَحِكَتْ আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জনৈকা স্ত্রীকে চুম্বন করলেন এবং ছালাতের জন্য বের হয়ে গেলেন, কিন্তু ওযু করলেন না। রাবী উরওয়া বললেন, নবী (ছাঃ)-এর ঐ স্ত্রী আপনি ছাড়া আর কেউ হবেন না। এই কথা শুনে আয়েশা (রাঃ) হাসলেন’।[22]

সফরে স্ত্রীকে সাথে নেয়া :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যখনই নবী (ছাঃ) সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনই স্ত্রীদের মাঝে লটারী করতেন। এক সফরের সময় আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসাহ (রাঃ)-এর নাম লটারীতে ওঠে। নবী করীম (ছাঃ)-এর রীতি ছিল যখন রাত হ’ত তখন আয়েশা (রাঃ)-এর সঙ্গে এক সওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন। এক রাতে হাফসাহ (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখতে পাবে? ‘আয়েশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাযী আছি। সে হিসাবে ‘আয়েশা (রাঃ) হাফসাহ (রাঃ)-এর উটে এবং হাফসাহ (রাঃ) ‘আয়েশা (রাঃ)-এর উটে সওয়ার হলেন।

নবী (ছাঃ) ‘আয়েশা (রাঃ)-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসাহ (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাঁর পার্শ্বে বসে সফর করলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করলেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (ছাঃ)-এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করলেন তখন আয়েশা (রাঃ) নিজ পা দু’টি ‘ইযখির’ নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কিছু বলতে পারব না’।[23]

স্ত্রীর রেখে দেয়া খাবার খাওয়া :

হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ:كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعٍ فِيَّ فَيَشْرَبُ وَأَتَعَرَّقُ الْعَرْقَ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَيَضَع فَاه على مَوضِع فِي আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হায়েয অবস্থায় পানি পান করতাম। এরপর নবী করীম (ছাঃ)-কে তা দিতাম। তিনি আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখেই পানি পান করতেন। আমি কখনও হায়েয অবস্থায় হাড়ের গোশত খেতাম। অতঃপর আমি এ হাড় নবী (ছাঃ)-কে দিতাম। আর তিনি (ছাঃ) আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখে তা খেতেন’।[24]

স্ত্রীর কোলে শুয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা :

হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ ‘নবী করীম (ছাঃ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েয অবস্থায় ছিলাম’।[25]

বাড়িতে প্রবেশের সময় স্ত্রীকে সালাম দেওয়া :

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يَا بُنَىَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُونُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ- ‘হে বৎস! যখন পরিবার-পরিজনের নিকট প্রবেশ করবে তখন সালাম দিবে; এতে তোমার এবং তোমার গৃহবাসীর জন্য বরকত হবে।[26]

শেষ কথা : কুরআন সুন্নাহর আলোকে নিজেকে উত্তম স্বামী তৈরী করতে চাইলে উপরোক্ত বিষয়গুলো সামর্থ্য অনুযায়ী পালন করার বিকল্প কোনো পথ নেই। অতএব তাহ’লে দুনিয়াটা যেমন জান্নাত হবে তেমনি পরকালটাতেও রবের সান্নিধ্য অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ।

যহুরুল ইসলাম

লেখক : ছাত্র, কুল্লিয়া ১ম বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]

[1]. বুখারী হা/৬৭৬; মিশকাত হা/৫৮১৬।

[2]. আদাবুল মুফরাদ হা/৫৪১।

[3]. বুখারী হা/৩৫৬৩।

[4]. বুখারী হা/৫২২৮; মুসলিম হা/২৪৩৯।

[5]. বুখারী হা/৩৩৩১।

[6]. আবু দাউদ হা/২১৪২।

[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১৮।

[8]. ইবনু মাজাহ হা/১৯৮৪।

[9]. বুখারী হা/৪৯৫৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়, ‘অহি-র সূচনা’ অনুচ্ছেদ।

[10]. তিরমিযী হা/৩৮৯৪।

[11]. তিরমিযী হা/৩৬৯১।

[12]. মুসলিম হা/৩৯; মিশকাত হা/১৯৩১।

[13]. বুখারী হা/৩৩৪।

[14]. বুখারী হা/২৫০।

[15]. আবু দাউদ হা/১৭০০।

[16]. আবু দাউদ হা/১২৬২।

[17]. মুসলিম,মিশকাত হা/১১৮৯।

[18]. বুখারী হা/৫২২৯।

[19]. বুখারী হা/১৯২৭।

[20]. বুখারী হা/৫১২; মিশকাত হা/৯৯৭।

[21]. বুখারী হা/৫১২; আবু দাউদ হা/১৩০৮।

[22]. তিরমিযী হা/৮৬।

[23]. বুখারী হা/৫২১১।

[24]. মিশকাত হা/৫৪৭।

[25]. বুখারী হা/২৯৭।

[26]. তিরমিযী হা/২৬৯৮।



বিষয়সমূহ: নারী
আরও