সাংবাদিকতায় আহলেহাদীছ জামা‘আতের অবদান (৪র্থ কিস্তি)
ড. নূরুল ইসলাম
মুহাম্মাদ আবুল কালাম 972 বার পঠিত
পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩ । পর্ব ৪
দান-ছাদাক্বার ফযীলত :
আল্লাহ্কে সন্তুষ্টি করার অন্যতম একটি বড় মাধ্যম ছাদাক্বা করা। গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয়ভাবে দান-ছাদাক্বা করা যায়। তবে গোপনে দানের নেকী বেশী। দানের মাধ্যমে জাহান্নামের শাস্তি দূরীভুত হয়। গোপনে দানের মাধ্যমে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করা যায়। নিম্নে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দান ছাদাক্বার গুরুত্ব ও ফযীলত উল্লেখ করা হল।
কুরআনের আলোকে :
পবিত্র কুরআনে অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ দানের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنْفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُسْتَخْلَفِينَ فِيهِ فَالَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَأَنْفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيرٌ- ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ইমান আনো, আর তিনি তোমাদেরকে যে বস্ত্তর উত্তরাধিকারী করেছেন তাকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা ইমান আনে আর ব্যয় করে, তাদের জন্য আছে বিরাট প্রতিফল’ (হাদীদ ৫৭/৭)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوا فِيهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ ‘হে মু‘মিনগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি তা হতে উৎকৃষ্ট বস্ত্তু ব্যয় কর এবং তা হতে এরূপ নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার মনস্থ কর না ,যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহন কর না, এবং তোমরা জেনে রেখ আল্লাহ মহান সম্পদশালী, প্রশংসিত’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ‘হে মুমিনগন! অধিকাংশ (ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের) আলিম ও ধর্মযাজক মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষন করে এবং আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় কওে না, তুমি তাদের যন্ত্রনাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ দাও’ (তওবা ৯/৩৪)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى- وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى- فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى- وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى- وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى-فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى- وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى-‘অতএব যে ব্যক্তি (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) দান করে এবং (আল্লাহকে) ভয় করে। আর উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে। আমি তার জন্য চলার পথ সুগম করে দিব। আর যে ব্যক্তি কৃপনতা করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পুর্ণ মনে করে। আর উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে। আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব। আর তার সম্পদ তার কোন কাজে আসবে না যখন সে অধঃপতিত হবে’ (লাইল ৯২/৫-১১)।
দানের প্রতিদান সাতগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন,مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ-‘যারা আল্লাহর পথে তার সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করে সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আললাহ যাকে চান তার জন্য আরও বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬১)।
দানের মাধ্যমে সৎ কর্মশীল বান্দা হওয়া যায়। মানুষ মরণের সময় দান করার জন্য আল্লাহর নিকট সময় চাইবে। কিন্তু তখন আর সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ রববুল আলামীন মৃত্যু আসার পূর্বেই দান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেন,وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ- ‘আর আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূবে। কেননা সে তখন বলবে, হে আমার রব! যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান ছাদাক্বা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভূক্ত হতাম’ (মুনাফিকুন ৬৩/১০)।
দানকারী ব্যক্তি যদি দানগ্রহীতাকে খোটা দিয়ে কষ্ট না দেয় তাহলে তার দানের প্রতিদান আল্লাহর নিকট নির্ধারিত আছে। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ- قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ- ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে নিজেদের দানের কথা মনে করিয়ে দেয় না আর দানগ্রহীতাকে কষ্ট দেয় না, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট নির্ধারিত আছে। তাদের কোন ভয় নেই, মর্মপীড়াও নেই’ (বাক্বারাহ ২/২৬২)।
আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করাকে আল্লাহ রববুল আলামীন ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন যাতে কোন দিন লোকসান হবে না। অর্থাৎ দুনিয়াতে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তারই পথে খরচ করলে আখেরাতে তিনি পূর্ণ প্রতিফলন দিবেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ-
‘যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে আর আল্লাহ তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসায়ের প্রত্যাশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না’ (ফাতির ৩৫/২৯)।
দানের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় এবং পরকালে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন,إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ- ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তাও উত্তম আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং তা অভাবগ্রস্থদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। অধিকন্তু তিনি তোমাদের গুনাহসমূহের কিছু অংশ ক্ষমা করে দেবেন। বস্ত্তুতঃ যা কিছু তোমরা করছ আল্লাহ তার খবর রাখেন। তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসা তোমাদের দায়িত্ব নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন। বস্ত্তুতঃ তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তা তোমাদের জন্যই এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করে থাক এবং যা কিছু তোমার মাল হতে ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার প্রতিফল পুরোপুরি দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না’ ( বাক্বারাহ ২/২৭১-২৭২)।
দান-ছাদাক্বাকে আল্লাহ রাববুল আলামীন বাগানের সাথে তুলনা করেছেন। উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত বাগানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে যেমন দ্বিগুণ ফল ধরে তেমনি আল্লাহর সন্তুুষ্টি ও ঈমানের দৃঢ়তা সাধনের জন্য দান করলে দ্বিগুণ প্রতিফল পাওয়া যায়। যেমন-وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِنْ لَمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ- ‘যারা আল্লাহর সন্তুুষ্টি লাভ ও নিজেদের মনে (ঈমানের) দৃঢ়তা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন ব্যয় করে থাকে তাদের তুলনা সেই বাগানের ন্যায় যা উচ্চভূমিতে অবস্থিত। তাতে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে দ্বিগুণ ফল ধরে, যদি তাতে বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে শিশির বিন্দুই যথেষ্ট। তোমরা যা কিছুই কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা’ (বাক্বারাহ ২/২৬৫) ।
অপরদিকে আল্লাহ ঐ দান-ছাদাক্বাকারীর প্রতি হুঁশিয়ারী দিয়েছেন, যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান-ছাদাক্বা করে। যদি দানের কথা বলে দানগ্রহীতাকে খেঁাটা দেয়া হয় তবে সে দান ব্যর্থ। যেমন আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لَا يَقْدِرُونَ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا كَسَبُوا وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ- ‘হে ইমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা নিজেদের দান খয়রাতকে সে ব্যক্তির ন্যায় ব্যর্থ করে দিও না, যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে, অথচ সে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নয়। তার তুলনা সেই মসৃণ পাথরের মত যাতে সামান্য কিছু মাটি আছে। তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিস্কার করে ফেলে। তারা স্বীয় কৃতকার্যের ফল কিছুই পাবে না, আল্লাহ কাফিরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না’ (বাক্বারা-২/২৬৪)।
হাদীছের আলোকে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দান-ছাদাক্বা করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজের কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ জমা রাখা পছন্দ করতেন না। এমনকি যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা তার কাছে থাকত তবে নিজের প্রয়োজনীয় অংশ বাদে তা তিনদিনের মধ্যে দান ছাদাক্বা করাকে তিনি ভালো মনে করতেন।
দাতার জন্য ফেরেশতারা দো‘আ করেন কল্যাণের। আর কৃপণের জন্য ফেরেশতারা দো‘আ করে অকল্যাণের। দানের মাধ্যমে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জান্নাত লাভে সফলকাম হওয়া যায়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ نُودِىَ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَا عَبْدَ اللَّهِ، هَذَا خَيْرٌ. فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِىَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجِهَادِ دُعِىَ مِنْ بَابِ الْجِهَادِ ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِىَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِىَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رضى الله عنه بِأَبِى أَنْتَ وَأُمِّى يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا عَلَى مَنْ دُعِىَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا قَالَ نَعَمْ . وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ হতে কোন জিনিসের জোড়া (দু-গুণ) আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য তার পথে ছাদাক্বা করবে জান্নাতের সবগুলো দরজা দিয়ে তাকে
সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। আর জান্নাতের অনেক (আটটি) দরজা আছে। যে ব্যক্তি
ছালাত আদায়কারী হবে, তাকে বাবুছ ছালাত হ’তে ডাকা হবে। যে আল্লাহ্ও পথে
জিহাদ করবে তাকে ডাকা হবে বাবুল জিহাদ হতে। দান-ছাদাক্বাকারীকে ডাকা হবে
বাবুছ ছাদাক্বাহ দিয়ে। যে ব্যক্তি ছিয়ামপালনকারী হবে, তাকে বাবুর রাইয়ান
দিয়ে ডাকা হবে। একথা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) জানতে চাইলেন যে ব্যক্তিকে এসব
দরজার কোন একটি দরজা দিয়ে ডাকা হবে, তাকে অন্য কোন দরজা দিয়ে ডাকার
প্রয়োজন হবে কি? রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হ্যাঁ। আর আমি আশা করি তুমি
তাদেরই একজন হবে।[1]
সম্পদশালী ব্যক্তি
ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হবে, যদি না সে দান-ছাদাক্বা করে। চতুপার্শে যেসব
অভাবী লোক আছে তাদেরকে দান-ছাদাক্বা করার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা লাভ
করা যায়। দানের মাধ্যমে সফলকাম হওয়া যায়। হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى ذَرٍّ
قَالَ انْتَهَيْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَقُولُ فِى ظِلِّ الْكَعْبَةِ- هُمُ
الأَخْسَرُونَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ، هُمُ الأَخْسَرُونَ وَرَبِّ
الْكَعْبَةِ- قُلْتُ مَا شَأْنِى أَيُرَى فِىَّ شَىْءٌ مَا شَأْنِى
فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ وَهْوَ يَقُولُ ، فَمَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَسْكُتَ ،
وَتَغَشَّانِى مَا شَاءَ اللَّهُ ، فَقُلْتُ مَنْ هُمْ بِأَبِى أَنْتَ
وَأُمِّى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الأَكْثَرُونَ أَمْوَالاً ، إِلاَّ
مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এর নিকট গেলাম। এসময় তিনি কাবার ছায়ায়
বসে ছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, কাবার রবের কসম! এসব লোক ক্ষতিগ্রস্ত!
আমি আরয করলাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এসব লোক কারা? তিনি
বললেন, যাদের ধন-সম্পদ বেশী তারা। তবে তারা এর মধ্যে গণ্য নয়, যারা এরূপ
করে, এরূপ করে, এরূপ করে। অর্থাৎ নিজের আগে-পিছে, ডানে বামে, নিজের মাল খরচ
করে। এমন লোকের সংখ্যা কম।[2]
আল্লাহ
প্রদত্ত সম্পদ থেকে যদি আমরা আল্লাহর রাস্তায় বেশী ব্যয় করি, আল্লাহ তার
বিনিময় আমাদের দান করবেন। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ
أُنْفِقْ عَلَيْكَ ‘হে আদম সন্তান! ধন-সম্পদ দান কর, তোমাকেও দান করা হবে।[3]
আল্লাহর
রাস্তায় সম্পদ খরচ করা বরকতময় কাজ। ইখলাছের সাথে ছাদাক্বাকারীদের উপর
আল্লাহর রহমত হবে, বরকতের বারিধারায় তিনি সিক্ত হবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,قَالَ بَيْنَا رَجُلٌ بِفَلاَةٍ مِنَ الأَرْضِ فَسَمِعَ صَوْتًا فِى
سَحَابَةٍ اسْقِ حَدِيقَةَ فُلاَنٍ-َتَنَحَّى ذَلِكَ السَّحَابُ فَأَفْرَغَ
مَاءَهُ فِى حَرَّةٍ فَإِذَا شَرْجَةٌ مِنْ تِلْكَ الشِّرَاجِ قَدِ
اسْتَوْعَبَتْ ذَلِكَ الْمَاءَ كُلَّهُ فَتَتَبَّعَ الْمَاءَ فَإِذَا
رَجُلٌ قَائِمٌ فِى حَدِيقَتِهِ يُحَوِّلُ الْمَاءَ بِمِسْحَاتِهِ فَقَالَ
لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ مَا اسْمُكَ قَالَ فُلاَنٌ. لِلاِسْمِ الَّذِى
سَمِعَ فِى السَّحَابَةِ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ لِمَ تَسْأَلُنِى
عَنِ اسْمِى فَقَالَ إِنِّى سَمِعْتُ صَوْتًا فِى السَّحَابِ الَّذِى
هَذَا مَاؤُهُ يَقُولُ اسْقِ حَدِيقَةَ فُلاَنٍ لاِسْمِكَ فَمَا تَصْنَعُ
فِيهَا قَالَ أَمَّا إِذَا قُلْتَ هَذَا فَإِنِّى أَنْظُرُ إِلَى مَا
يَخْرُجُ مِنْهَا فَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثِهِ وَآكُلُ أَنَا وَعِيَالِى
ثُلُثًا وَأَرُدُّ فِيهَا ثُلُثَهُ ‘এক ব্যক্তি বিরান মাঠে দঁাড়িয়ে ছিল।
এমন সময় মেঘমালার মধ্যে সে একটি আওয়াজ শুনতে পেল। কেউ মেঘমালাকে বলছে, অমুক
ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ কর। মেঘমালাটি সেদিকে সরে গিয়ে একটি কংকরময়
ভূমিতে পানি বর্ষণ করতে লাগল। তখন দেখা গেল, ওখানকার নালাগুলোর একটি সব
পানি নিজের মধ্যে পুরে নিচ্ছে। তারপর এ ব্যক্তি ওই পানির পেছনে চলতে থাকল
যেন সে দেখতে পায় এসব পানি যার বাগানে গিয়ে পৌছে, সে ব্যক্তি কে? হঠাৎ করে
সে এক লোককে দেখতে পেল, যে নিজের ক্ষেতে দঁাড়িয়ে সেচ দিয়ে (বাগানে) পানি
দিচ্ছে। সে লোকটি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা। তোমার নাম কি? সে
ব্যক্তি বলল আমার নাম অমুক। এ ব্যক্তি ঐ নামই বলল, যে নাম মেঘমালা থেকে
শুনেছিল। তারপর বাগানের লোকটি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে
নাম জিজ্ঞেস করছ কেন? সে বলল, এজন্য জিজ্ঞেস করছি যে, এ পানি যে মেঘমালার,
সেই মেঘমালা থেকে আমি একটা আওয়াজ শুনেছি। কেউ বলছিল, অমুকের বাগানে পানি
বর্ষণ কর। আর সেটি তোমার নাম। এ বাগান দিয়ে তুমি কি করেছ (যার দরুণ তুমি এত
বড় মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছ)? বাগানওয়ালা বলল, যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ,
তাই আমি বলছি। এ বাগানে যা উৎপাদিত হয় আমি তার প্রতি লক্ষ্য রাখি। তারপর তা
হতে এক-তৃতীয়াংশ আল্লাহর পথে খরচ করি, এক-তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার খাই,
অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ এ বাগানে লাগাই।[4]
সুস্থ সবল অবস্থায় যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদের প্রতি প্রবল লোভকে সংবরণ করে, দান ছাদাক্বা কওে, সেটাই আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম দান হিসাবে গণ্য হবে। রোগাক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় দান করার চাইতে সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় দানের গুরুত্ব বেশী। এ মর্মে জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ، تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى، وَلاَ تُمْهِلُ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا، وَلِفُلاَنٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ لِفُلاَنٍ- ‘তুমি যখন সুস্থ-সবল থাক এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করে, দারিদ্রের ভয় কর, ধন-সম্পদের মালিক হতে চাও। আর প্রান ওষ্ঠাগত হওয়ার সময় দান করার অপেক্ষা করবে না। কারণ তখন তুমি বলতে থাকবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল অমুকের। ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়ে গেছে।[5] দান করলে আল্লাহ রববুল আলামীন তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বহুগুণ প্রতিদান দেন। তবে শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ - وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ - وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ - ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ- ‘যে ব্যক্তি বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ থেকে একটি খেজুর সমান ছাদাক্বাহ করবে এবং আল্লাহ তা‘আলা বৈধ ব্যতীত কোন কিছু কবুল করেন না। তাই বৈধ সম্পদ থেকে ছাদাক্বা করলে আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে কবুল করেন। অতঃপর এ ছাদাক্বা দানকারীর জন্য এভাবে লালন-পালন করেন যেভাবে তোমরা ঘোড়ার বাছুর লালন-পালন করে থাক। এমনকি এ ছাদাক্বা অথবা এর নেকি একসময় পাহাড়ের মতো হয়ে যায়।[6]
কৃপণতা করে যে ব্যক্তি ছাদাক্বা করবে না,
কৃপণতাই তাকে ধবংস করবে। ফেরেশতারাও কৃপণ ব্যক্তির ধ্বংস কামনা করেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ
كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ
وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ ‘যুলুম থেকে বেঁচে থাকবে, কারণ ক্বিয়ামতের
দিন যুলুম অন্ধকারের ন্যায় গ্রাস করবে। আর কৃপণতা হ’তে বেঁচে থাকবে, কারণ
কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধবংস করেছে। এ কৃপণতাই তাদেরকে প্ররোচিত
করেছে রক্তপাতের জন্য এবং হারাম কাজকে হালাল করার জন্য’।[7]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ‘তে বণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا. وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفً ‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধবংস করে দিন’।[8]
অতএব দান-ছাদাক্বা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। দানের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং পারস্পারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
(ক্রমশঃ)
[লেখক : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ ]
[1]. বুখারী হা/১৮৯৭; তিরমিযী/৩৬৭৪; মিশকাত হা/১৮৯৭।
[2]. বুখারী হা/৬৬৩৮; মুসলিম হা/৯৯০; তিরমিযী হা/৬১৭; মিশকাত হা/১৮৬৮।
[3]. বুখারী হা/৫৩৫২, মুসলিম হা/৯৯৩, মিশকাত হা/১৮৬২।
[4]. মুসলিম হা/২৯৮৪; মিশকাত হা/১৮৭৭।
[5].বুখারী হা/১৪১৯; মুসলিম হা/১০৩২; মিশকাত হা/১৮৬৭।
[6]. বুখারী হা/১৪১০; মুসলিম হা/১০১৪; মিশকাত হা/১৮৮৮।
[7]. মুসলিম হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫।
[8]. বুখারী হা/১৪৪২; মিশকাত হা/১৮৬০।