বারাকাহ : মুমিন জীবনে এর প্রভাব
মুখতারুল ইসলাম
আব্দুর রহীম 1023 বার পঠিত
পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪
মূল্যহীন দুনিয়ার লোভনীয় সম্পদ সবার নিকটই মূল্যবান। তবে এটি মানুষকে এক পর্যায়ে অমানুষ করে দেয়। সেজন্য এটি সঞ্চয় করে রাখতে রাসূল (ছাঃ) নিরুৎসাহিত করেছেন। এটিকে কোন কোন সময় জ্বলন্ত অঙ্গারের সাথে তুলনা করেছেন। দুনিয়ার মূল্যহীনতা বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) ধন-সম্পদের পিছনে না ছুটে বরং সৎকর্মের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
যেমন হাদীছে এসেছে, আসমা বিনতে
ইয়াযিদ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ تَرَكَ دِينَارَيْنِ فَقَدْ تَرَكَ
كَيَّتَيْنِ ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি দু’টি দীনার
রেখে মারা গেল সে অবশ্যই দু’টি সেঁকি (দাহ্য বস্ত্ত) রেখে গেল’।[1] অন্য
হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى عَلَى رَجُلٍ تَرَكَ دِينَارَيْنِ أَوْ
ثَلاَثَةً فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم كَيَّتَانِ أَوْ
ثَلاَثَةٌ- ‘রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তির ছালাতে জানাযা আদায় করলেন যে দু’টি
বা তিনটি দীনার রেখে মারা যায়। রাসূল (ছাঃ) তার ব্যাপারে বললেন, তার জন্য
দু’টি বা তিনটি সেঁকি রয়েছে’।[2]
অন্য হাদীছে
এসেছে, عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ
تُوُفِّيَ وَتَرَكَ دِينَارًا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُ: كَيَّةٌ. قَالَ: ثُمَّ تُوُفِّيَ آخَرُ فَتَرَكَ
دِينَارَيْنِ.فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
كَيَّتَانِ- আবু ওমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আহলে ছুফফার জনৈক লোক
একটি দীনার রেখে মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তার জন্য আগুনের একটি
সেঁকি। এরপর আরেকজন দু’টি দীনার রেখে মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তার
জন্য দু’টি নেকী’। [3]
আহলে ছুফফাগণ যেহেতু
অন্যের থেকে প্রাপ্ত দান-ছাদাক্বার মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতেন সেজন্য
তাদের নিকট একটি দিরহাম সঞ্চিত থাকাকে রাসূল (ছাঃ) মারাত্মক পাপ হিসাবে
গণ্য করেছেন। তবে সাধারণভাবে সম্পদশালী হওয়া অপরাধ নয়; যদি সঠিকভাবে
সম্পদের হক্ব আদায় করা হয়।[4]
আবু উমামা
(রাঃ) বলেন, تُوُفِّيَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله
عَلَيْهِ وَسَلَّمْ، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ كَفَنٌ، فَأَتَوُا النَّبِيَّ
صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمْ، فَقَالَ: انْظُرُوا إِلَى دَاخِلَةِ
إِزَارِهِ، فَأُصِيبَ دِينَارٌ أَوْ دِينَارَانِ، فَقَالَ: كَيَّتَانِ
صَلُّوا عَلَى صَاحِبَكُمْ ، فَقَالَ رَجُلٌ: إِلَيَّ قَضَاؤُهَا يَا
رَسُولَ اللهِ، فَصَلَّى عَلَيْهِ-ذ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে জনৈক ছাহাবী মারা
গেল। তার কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা গেল না। তখন ছাহাবায়ে কেরাম নবী
(ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন বললেন, তার লুঙ্গির ভিতরে দেখ কিছু পাওয়া
যায় কি না। সেখানে এক দীনার বা দুই দীনার পাওয়া গেল। রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তার জন্য দু’টি সেঁকি রয়েছে। তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযার ছালাত আদায় কর।
তখন একজন বলল, আমি তার কাফনের কাপড়ের ঋণ পরিশোধ করে দিবে। এরপর রাসূল (ছাঃ)
তার ছালাতে জানাযা আদায় করলেন’।[5]
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, تُوُفِّيَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ فَوَجَدُوا فِي شَمْلَتِهِ دِينَارَيْنِ، فَذَكَرُوا ذَاكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ:كَيَّتَانِ- ‘আহলে ছুফফার জনৈক সদস্য মারা গেলে ছাহাবীরা তার কাপড়ের মধ্যে দু’টি দিরহাম খুজে পেলেন। তারা বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট অবহিত করলে তিনি বলেন, তার জন্য দু‘টি সেঁকি রয়েছে।[6] এই হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, وإنما كان كذلك لأنه ادخر مع تلبسه بالفقر ظاهرا ومشاركته الفقراء فيما يأتيهم من الصدقة রাসূল (ছাঃ) এজন্য এটি বলেছেন যে, তারা প্রকাশ্যে দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও এবং তাদের নিকট আগত ছাদাক্বায় দরিদ্রদের সাথে তাদের ভাগ থাকার পরেও তারা এটি সঞ্চয় করেছে।[7]
অন্য হাদীছে এসেছে,عَنْ قَيْسٍ
قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى سَعْدِ بْنِ مَسْعُودٍ نَعُودُهُ، فَقَالَ: مَا
أَدْرِي مَا يَقُولُونَ، وَلَكِنْ لَيْتَ مَا فِي تَابُوتِي هَذَا جَمْرٌ،
فَلَمَّا مَاتَ، نَظَرُوا، فَإِذَا فِيهِ أَلْفٌ أَوْ أَلْفَانِ- ক্বায়েস
হ‘তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সা‘দ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর সেবা করার জন্য তার
বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি বললেন, আমি জানিনা তারা কি বলছে। তবে আমার
এই সিন্দুকে যদি এই অঙ্গার না থাকত! তিনি যখন মারা গেলেন তারা তার
সিন্দুকটি খুলে দেখলেন তাতে এক হাজার বা দু’হাজার মুদ্রা রয়েছে’।[8]
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! অর্থ সঞ্চয়ের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কী ধরনের সতর্কতা। অথচ আমরা অর্থের পিছনে পুরো জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছি।
আব্দুল্লাহ বিন ছামেত হতে বর্ণিত তিনি বলেন, أَنَّهُ كَانَ مَعَ أَبِى ذَرٍّ فَخَرَجَ عَطَاؤُهُ وَمَعَهُ جَارِيَةٌ لَهُ فَجَعَلَتْ تَقْضِى حَوَائِجَهُ قَالَ: فَفَضَلَ مَعَهَا سَبْعٌ قَالَ فَأَمَرَهَا أَنْ تَشْتَرِىَ بِهِ فُلُوساً. قَالَ قُلْتُ لَهُ لَوِ ادَّخَرْتَهُ لِلْحَاجَةِ تَنُوبُكَ أَوْ لِلضَّيْفِ يَنْزِلُ بِكَ. قَالَ إِنَّ خَلِيلِى عَهِدَ إِلَىَّ أَنْ أَيُّمَا ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ أُوكِىَ عَلَيْهِ فَهُوَ جَمْرٌ عَلَى صَاحِبِهِ حَتَّى يُفْرِغَهُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ – ‘তিনি একদিন আবু যার (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। আর তার সাথে একজন দাসীও ছিল। তখন তিনি তার সম্পদগুলো বের করলেন। আর সে তা দ্বারা তার প্রয়োজনগুলো পূরণ করছিল। এরপর সাতটি সম্পদ অবশিষ্ট ছিল। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন যাতে সে তা দ্বারা মুদ্রা ক্রয় করে। তখন আমি তাকে বললাম, যদি আপনি এগুলো ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য সঞ্চয় করতেন যা উপকারে আসত বা আগত মেহমানের জন্য খরচ করতে পারতেন। তিনি বললেন, আমার বন্ধু আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যে স্বর্ণ বা রৌপ্য সঞ্চয় করা হবে তা দ্বারা তাকে সেঁকি দেওয়া হবে। এটি তার মালিকের জন্য জলন্ত অঙ্গার হবে যতক্ষণ না সে তা আল্লাহর পথে দান করে মুক্ত হয়ে যা।[9] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ثُمَّ ابْتَاعَ بِمَا بَقِيَ فُلُوسًا، فَتَصَدَّقَ بِهَا، ثُمَّ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ أَوْكَى عَلَى ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ، لَمْ يُنْفِقْهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَ جَمْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُكْوَى بِهِ ‘তিনি বাকী স্বর্ণ দিয়ে মুদ্রা ক্রয় করলেন এবং তা ছাদাক্বা করে বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি ‘যে ব্যক্তি স্বর্ণ বা রৌপ্য সঞ্চয় করল অথচ তা আল্লাহর পথে ব্যয় করল না তা ক্বিয়ামতের দিন জলন্ত অঙ্গার হবে এবং তা দিয়ে তাকে সেঁক দেওয়া হবে।[10]
তবে এই মূল্যহীন দুনিয়ার মূল্যবান সম্পদ সঠিক পথে ব্যয় করলে দুনিয়া ও পরকাল উভয় জগতে কল্যাণ লাভ করা যায়। যারা দুনিয়ার সম্পদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন না করে বরং সম্পদকে যথাযথভাবে খরচ করবে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি এক জনশূন্য প্রান্তরে/মরুভূমিতে পথ চলছিল। হঠাৎ সে এক খন্ড মেঘে বজ্রধ্বনি শুনতে পেল। তন্মধ্যে একজনের নাম ধরে একটি কথা শুনতে পেল: অমুকের বাগানে পানি সিঞ্চন কর। অনন্তর ঐ মেঘ এক কাল পাথুরে ভূমির দিকে এল এবং তার মধ্যে যেটুকু পানি ছিল তা উজাড় করে দিল। তারপর সে কতকগুলো খালের দিকে ধাবিত হ’ল এবং একটা খালের ধারে থামল এবং নিজেকে পানিতে পূর্ণ করে নিল। লোকটাও মেঘের সাথে সাথে হঁাটছিল। শেষ পর্যন্ত সে একজন লোকের নিকট এসে পেঁŠছল যে দঁাড়িয়ে তার বাগানে পানি সেচ দিচ্ছিল। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, তোমার নাম কী? সে বলল, তুমি একথা জিজ্ঞেস করছ কেন? সে বলল, আমি এক মেঘের মধ্যে তোমার নামসহ শুনতে পেলাম, ‘এটা অমুকের পানি, তার বাগানে পানি বর্ষণ কর’। তুমি ফল কাটার পর তা দিয়ে কী কর? সে বলল, তুমি যা বলছ- আমি আসলে উহার ফল তিন ভাগ করি। একভাগ আমার ও আমার পরিবারের জন্য রাখি, এক ভাগ বাগান পরিচর্যায় ব্যয় করি এবং একভাগ মিসকীন, ভিক্ষুক ও মুসাফিরদের জন্য রাখি’।[11]
অন্য একটি হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ. قَالَ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلاَ ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلاَّ زَادَهُ اللَّهُ عِزًّا وَلاَ فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ : إِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِى فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَفْضَلِ الْمَنَازِلِ وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِى مَالاً لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلاَنٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالاً وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْمًا فَهُوَ يَخْبِطُ فِى مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ لاَ يَتَّقِى فِيهِ رَبَّهُ وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَلاَ يَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَخْبَثِ الْمَنَازِلِ وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللَّهُ مَالاً وَلاَ عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِى مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلاَنٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ -
‘আমি তিনটি বিষয়ে শপথ করছি এবং সেগুলোর
ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি। তোমরা এগুলো মনে রাখবে। তিনি বলেন, দান-খায়রাত
করলে কোন বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না। কোন বান্দার উপর যুলুম করা হলে এবং
সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। কোন
বান্দা ভিক্ষার দরজা খুললে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলাও তার অভাবের দরজা খুলে দেন
অথবা তিনি অনুরূপ কথা বলেছেন। আমি তোমাদেরকে একটি কথা বলছি, তোমরা তা
মুখস্থ রাখবে। তারপর তিনি বলেন, চার প্রকার মানুষের জন্য এই পৃথিবী।
আল্লাহ তা'আলা যে বান্দাহকে ধন-সম্পদ ও ইলম (জ্ঞান) দিয়েছেন, আর সে এই
ক্ষেত্রে তার প্রভুকে ভয় করে, এর সাহায্যে আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক
ব্যবহার করে এবং এতে আল্লাহ তা‘আলারও হক আছে বলে সে জানে, সেই বানদার
মর্যাদা সর্বোচ্চ। আরেক বান্দা, যাকে আল্লাহ তা‘আলা ইলম দিয়েছেন কিন্তু
ধন-সম্পদ দেননি, সে সৎ নিয়তের (সংকল্পের) অধিকারী। সে বলে, আমার ধন-সম্পদ
থাকলে আমি অমুক অমুক ভালো কাজ করতাম। এই ধরনের লোকের মর্যাদা তার নিয়ত
মোতাবেক নির্ধারিত হবে। এ দু’জনেরই ছওয়াব সমান সমান হবে। আরেক বান্দা,
আল্লাহ তা'আলা তাকে ধন-সম্পদ প্রদান করেছেন কিন্তু ইলম দান করেননি। আর সে
ইলমহীন (জ্ঞানহীন) হওয়ার কারণে তার সম্পদ স্বীয় প্রবৃত্তির চাহিদা মতো ব্যয়
করে। সে ব্যক্তি এ বিষয়ে তার রবকেও ভয় করে না এবং আত্মীয়দের সাথে
সৌজন্যমূলক ব্যবহারও করে না। আর এতে যে আল্লাহ তা‘আলার হক্ব্ রয়েছে তাও সে
জানে না। এই লোক সর্বাধিক নিকৃষ্ট স্তরের লোক। অপর এক বান্দা, যাকে আল্লাহ
তা'আলা ধন-সম্পদও দান করেননি, ইলমও দান করেননি। সে বলে, আমার যদি ধন-সম্পদ
থাকত তাহলে আমি অমুক অমুক ব্যক্তির ন্যায় (প্রবৃত্তির বাসনামতো) কাজ করতাম।
তার নিয়ত মোতাবেক তার স্থান নির্ধারিত হবে। অতএব, এদের দু’জনের পাপ হবে
সমান সমান।[12]
দুনিয়ার সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ :
সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে মানুষের যে লোভ তা কখনো পূরণ হবেনা। তার পূবেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। সেজন্য পরিমিত সম্পদে পরিতৃপ্ত থেকে জীবন পরিচালনা করতে হবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) خَطَّ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم خَطًّا مُرَبَّعًا ، وَخَطَّ خَطًّا فِى الْوَسَطِ خَارِجًا مِنْهُ، وَخَطَّ خُطُطًا صِغَارًا إِلَى هَذَا الَّذِى فِى الْوَسَطِ، مِنْ جَانِبِهِ الَّذِى فِى الْوَسَطِ وَقَالَ هَذَا الإِنْسَانُ ، وَهَذَا أَجَلُهُ مُحِيطٌ بِهِ أَوْ قَدْ أَحَاطَ بِهِ وَهَذَا الَّذِى هُوَ خَارِجٌ أَمَلُهُ ، وَهَذِهِ الْخُطُطُ الصِّغَارُ الأَعْرَاضُ ، فَإِنْ أَخْطَأَهُ هَذَا نَهَشَهُ هَذَا ، وَإِنْ أَخْطَأَهُ هَذَا نَهَشَهُ هَذَا ‘একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন যেটি চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর দু’পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে ভিতরের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বললেন, এ মাঝামাঝি রেখাটা হল মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে বর্ধিত রেখাটি হ’ল তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ছোট ছোট রেখাগুলো নানা রকম বিপদাপদ। যদি সে এর একটাকে এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাকেও যদি এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে।[13]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ يَسْأَلُهُ فَجَعَلَ يَنْظُرُ إِلَى رَأْسِهِ مَرَّةً وَإِلَى رِجْلَيْهِ أُخْرَى هَلْ يَرَى عَلَيْهِ مِنَ الْبُؤْسِ شَيْئاً ثُمَّ قَالَ لَهُ عُمَرُ كَمْ مَالُكَ قَالَ أَرْبَعُونَ مِنَ الإِبِلِ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقُلْتُ صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ لَوْ كَانَ لاِبْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ ذَهَبٍ لاَبْتَغَى الثَّالِثَ وَلاَ يَمْلأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلاَّ التُّرَابُ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ. فَقَالَ عُمَرُ مَا هَذَا فَقُلْتُ هَكَذَا أَقْرَأَنِيهَا أُبَىٌّ. قَالَ فَمَرَّ بِنَا إِلَيْهِ قَالَ : فَجَاءَ إِلَى أُبَىٍّ فَقَالَ مَا يَقُولُ هَذَا قَالَ أُبَىٌّ هَكَذَا أَقْرَأَنِيهَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم. قَالَ أَفَأُثْبِتُهَا فَأَثْبَتَهَا.
ইবন আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেছেন, এক ব্যক্তি উমর (রাঃ)-এর কাছে এসে ভিক্ষা প্রার্থনা করল। তার শরীরে
অভাবের কোন চিহ্ন আছে কি-না তা নিরীক্ষা করতে তিনি একবার তার মাথার দিকে
চাইলেন, আরেকবার দু’পায়ের দিকে চাইলেন। তারপর বললেন, তোমার সম্পদ কী পরিমাণ
আছে? সে বলল চল্লিশটা উট। ইবন আববাস একথা শুনে বলে উঠলেন, আল্লাহ ও তার
রাসূল সত্য বলেছেন, আদম সন্তানের জন্য যদি দু’টি (সোনার উপত্যকা হয় তবে সে
অবশ্যই তৃতীয়টির খেঁাজে লাগবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে
না। তবে যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। উমর (রাঃ) একথা শুনে
বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এমনি করে আমাকে ঊবাই পড়িয়েছেন। তিনি বললেন, তাকে
আমাদের এখানে আসতে হুকুম দাও। অনন্তর ঊবাই (রাঃ) আমার নিকট এলেন। তিনি
বললেন, এ কী বলছে? উবাই (রাঃ) বললেন, এমনিভাবেই তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে
পড়িয়েছেন।[14]
ভিক্ষাবৃত্তি করে সম্পদ উপার্জন দোষণীয় :
পরিশ্রমের
মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে তার যাকাত আদায় করলে তা দোষনীয় নয়। কিন্তু এই
মূল্যহীন দুনিয়ার সম্পদ অর্জনে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা বা সম্পদশালী হওয়ার
জন্য ভিক্ষাবৃত্তির মত নীচু পন্থা অবলম্বন করা দোষণীয় কাজ। এর দ্বারা মানুষ
দুনিয়ার প্রতি আরো ঝুঁকে পড়ে এবং পরকালকে ভুলে যায়। রাসূল (ছাঃ) এই ধরনের
নীচু পন্থা পরিহার করে পরিশ্রম করে বৈধ পন্থায় রিযিক অন্বেষণ করতে বলেছেন।
আবার তা যেন পরকালকে ভুলিয়ে না দেয় সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। যেমন হাদীছে
এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لأَنْ يَحْتَطِبَ أَحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى
ظَهْرِهِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ أَحَدًا ، فَيُعْطِيَهُ أَوْ
يَمْنَعَهُ ‘কারো নিকট ভিক্ষা করা, যাতে সে তাকে কিছু দিতেও পারে আবার নাও
দিতে পারে, এর চেয়ে পিঠে বোঝা বহন করা (তা বিক্রি করা) উত্তম’।[15]
অন্য
হাদীছে এসেছে, তিনি আরো বলেন, مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا
مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ، وَإِنَّ نَبِىَّ اللَّهِ دَاوُدَ -
عَلَيْهِ السَّلاَمُ - كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ‘ নিজ হাতে
উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নাবী দাঊদ
(আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন’।[16]
অন্য হাদীছে আছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ سَأَلَ وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ أَوْ كُدُوحٌ فِى وَجْهِهِ. فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْغِنَى قَالَ : خَمْسُونَ دِرْهَمًا أَوْ قِيمَتُهَا مِنَ الذَّهَبِ -
আব্দুল্লাহ
ইবন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, অভাব
থেকে মুক্তির মত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যে ভিক্ষা করবে কিয়ামতের দিন তার
ভিক্ষা তার মুখমন্ডলে অঁাচড়, খামচি বা ক্ষতবিক্ষত আকারে দেখা দেবে। বলা হল,
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অভাব থেকে তার মুক্তি পরিমাণ সম্পদ কতটুকু? তিনি
বললেন, ৫০ দিরহাম অথবা তার সমমূল্যের সোনা’।[17]
অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سَرَّحَتْنِى أُمِّى إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُهُ وَقَعَدْتُ فَاسْتَقْبَلَنِى وَقَالَ : مَنِ اسْتَغْنَى أَغْنَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنِ اسْتَعَفَّ أَعَفَّهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنِ اسْتَكْفَى كَفَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ سَأَلَ وَلَهُ قِيمَةُ أُوقِيَّةٍ فَقَدْ أَلْحَفَ . فَقُلْتُ نَاقَتِى الْيَاقُوتَةُ خَيْرٌ مِنْ أُوقِيَّةٍ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أَسْأَلْهُ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমার আম্মা আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে
পাঠালে আমি তাঁর কাছে আসলাম এবং বসে গেলাম। তিনি আমার কাছে মুখ করে বললেন
যে, যে ব্যক্তি স্বচ্ছলতা চায় আল্লাহ তা'আলা তাকে স্বচ্ছলতা দান করেন। আর
যে ব্যক্তি কারো কাছে কিছু চাওয়া হতে বাঁচতে চায়, আল্লাহ তা'আলা তাকে তা
হ’তে বঁাচিয়ে রাখেন। আর যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্ট থাকতে চায় আল্লাহ তাআলা
তাকে অল্পে তুষ্ট রাখেন। আর যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার কাছে চল্লিশটি
দিরহাম আছে তাহলে সে পীড়াপীড়ি করল। আমি মনে মনে বললাম যে, আমার ইয়াকূত নামক
উষ্ট্রীর মূল্য চল্লিশ দিরহাম থেকেও বেশী হবে, তাই আমি ফিরে আসলাম এবং তার
কাছে কিছুই চাইলাম না’।[18]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَتْ لِى حَاجَةٌ إِلَى أَبِى سَعْدٍ. قَالَ وَحَدَّثَنَا أَبُو حَيَّانَ عَنْ مُجَمِّعٍ قَالَ كَانَ لِعُمَرَ بْنِ سَعْدٍ إِلَى أَبِيهِ حَاجَةٌ فَقَدَّمَ بَيْنَ يَدَىْ حَاجَتِهِ كَلاَماً مِمَّا يُحَدِّثُ النَّاسُ يُوصِلُونَ لَمْ يَكُنْ يَسْمَعُهُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ يَا بُنَىَّ قَدْ فَرَغْتَ مِنْ كَلاَمِكَ قَالَ نَعَمْ. قَالَ مَا كُنْتَ مِنْ حَاجَتِكَ أَبَعْدَ وَلاَ كُنْتُ فِيكَ أَزْهَدَ مِنِّى مُنْذُ سَمِعْتُ كَلاَمَكَ هَذَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : سَيَكُونُ قَوْمٌ يَأْكُلُونَ بِأَلْسِنَتِهِمْ كَمَا تَأْكُلُ الْبَقَرَةُ مِنَ الأَرْضِ-
উমর ইবন সা‘দ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা সা‘দের নিকট আমার একটি প্রয়োজন ছিল। অন্য
সনদে আবু হাইয়ান মুজাম্মি‘ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, উমার বিন
সা‘দের তার পিতা সা‘দের নিকট একটি প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনের কথা বলার আগে সে
এমন কিছু কথা বলে যা সাধারণত লোকে মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য বলে থাকে- যা
তিনি শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন না। তার কথা শেষ হলে তিনি বললেন, প্রিয় বৎস,
তোমার কথা শেষ হয়েছে কি? সে বলল, হ্যঁা। তিনি বললেন, দেখ, তোমার কথা শোনার
আগে তোমার প্রয়োজন পূরণ এবং তোমার প্রতি আকর্ষণ থেকে আমি ততটা দূরে ছিলাম
না যতটা এখন আছি। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, অচিরেই একদল লোকের
আবির্ভাব ঘটবে তারা গরু যেমন জমি থেকে জিহবার সাহায্যে খায় তেমনি করে
নিজেদের জিহবা দিয়ে খাবে।[19]
(ক্রমশঃ)
[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
[1]. তাবারাণী কাবীর হা/৪৬৫; ছহীহাহ হা/২৬৩৭ ।
[2].আহমাদ হা/৯৫৩৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৭৭৭২, সনদ ছহীহ।
[3].আহমাদ হা/২২২২৬; মিশকাত হা/৫২০২।
[4].মিরকাত ৮/৩২৫৮।
[5].তাবারানী কাবীর হা/৭৫০৬; ছহীহুত তারগীব হা/৬৩৫।
[6].আহমাদ হা/৪৩৬৭; ইবনু হিববান হা/৩২৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/৯৩৬।
[7].ছহীহুত তারগীব হা/৯৩৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[8].তাবারাণী কাবীর হা/৫৪০৮; ছহীহুত তারগীব হা/৯৩৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪৬৯২।
[9].আহমাদ হা/২১৪২১; ছহীহুত তারগীব হা/৯২৯।
[10].তাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৪৭০; ছহীহত তারগীব হা/৯২৯।
[11].মুসলিম হা/২৯৮৪; ছহীহাহ হা/১১৯৭; মিশকাত হা/১৮৭৭।
[12].তিরমিযী হা/২৩২৫; মিশকাত হা/৫২৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৮৬৯।
[13].বুখারী হা/৬৪১৭; মিশকাত হা/২৬৮।
[14].আহমাদ হা/২১১৪৯; ইবনু হিববান হা/৩২৩৭; ছহীহাহ হা/২৯০৯।
[15].বুখারী হা/২০৭৪; ছহীহুত তারগীব হা/৮৩৬।
[16].বুখারী হা/২০৭২; মিশকাত হা/২৭৫৯।
[17].আহমাদ হা/৪২০৭; আবুদাউদ হা/১৬২৬; ছহীহাহ হা/৪৯৯।
[18].আবুদাউদ হা/১৬২৬; নাসাঈ হা/২৫৯২; ছহীহাহ হা/৪৯৯।
[19].আহমাদ হা/১৫১৭; ছহীহাহ হা/৪১৯।